বাচ্চার জেদ বা টেম্পার ট্যানট্রাম কীভাবে সামলাবেন?

শিশুরা তাদের নিজস্ব হতাশা, ক্ষোভ বা চাহিদা প্রকাশ করে জেদ বা ট্যানট্রামের মাধ্যমে

 |  3-minute read |   08-07-2018
  • Total Shares

জেদ করে না এমন বাচ্চা প্রায় বিরল। অল্প বিস্তর জেদ সব বাচ্চাদের মধ্যেই থাকে। তবে কোনও কোনও সময় বাচ্চাদের জেদের প্রকাশ এতটাই বেশি মাত্রায় হয় যে তা সামলাতে হিমসিম খেয়ে যান অভিভাবকেরা।

কেন হয় টেম্পার ট্যানট্রাম বা জেদ?

শিশুরা তাদের নিজস্ব হতাশা, ক্ষোভ বা চাহিদা প্রকাশ করে জেদ বা ট্যানট্রামের মাধ্যমে। আমরা বড়রা যেভাবে নিজেদের এইসব অনুভুতিগুলোকে সম্বরণ (সেল্ফ কনট্রোল) করতে পারি বাচ্চারা তা মোটেই পারে না। তার ফলে তাদের আচরণে বাহ্যিক হতাশার প্রকাশ এভাবেই ঘটে। তিন থেকে সাত বছরের বাচ্চাদের মধ্যে জেদ বা টেম্পার ট্যানট্রাম সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। এই সময়ে যদি সঠিকভাবে শিশুদের চালনা করা না যায় তাহলে আগামী দিনে এদের মধ্যে অনেক নেতিবাচক ব্যবহার (নেগেটিভ কোয়ালিটি) গড়ে ওঠে, যা শিশু ও তার পরিবারের ক্ষেত্রে মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়।

body3_070918012316.jpg

কীভাবে সামলাবেন জেদ বা টেম্পার ট্যানট্রাম?

শিশুর জেদ সামলানোর প্রাথমিক উপায় নিজেদের মনকে শান্ত রাখতে হবে। তার জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনার প্রয়োজন। প্রথম থেকেই যদি ওদের জেদে লাগাম দেওয়া যায় তাহলে শিশুটির চারিত্রিক বহু সমস্যার সমাধান হয় যায়।

১। নিজেকে শান্ত রাখুন, উত্তেজিত হবেন না: শিশু কেন জেদ করছে বা ওকে জেদ করতে দাও কিংবা বাচ্ছারা তো জেদ করেই থাকে এই ধরণের মন্তব্য না করাই ভালো অর্থাৎ শিশুর জেদ নিয়ে মা-বাবা বা পরিবারের অন্যদের মধ্যে মতের অমিল হলে চলবে না আর হলেও তা কোনও ভাবেই বাচ্চাটির সামনে প্রকাশ করবেন না। অনেক সময় বাড়ীর গুরুজনেরা শিশুর জেদের অভিব্যক্তি মেনে নিতে না পেরে স্নেহবশত শিশুটির সব দাবী মেনে নেন। এটা একেবারেই ভুল। বাচ্চারা খুব সহজেই পরিবারের মেরু করন বুঝতে পারে এবং সেই পরিস্থিতির সুযোগ নেয়।

body_tem_070818093616.jpg

২। নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রাখুন: জেদের সুত্রপাত হলে আপনার সন্তানকে খেলনা দিয়ে আলাদা করে বসিয়ে রাখুন। লক্ষ্য রাখবেন জায়গাটি যেন সুরক্ষিত থাকে কারণ এই সময় বাচ্চারা খুব বিক্ষুব্ধ হয়ে থাকে। নিজেরা শান্ত ও গম্ভীর থাকুন। খুব প্রয়োজন ছাড়া ওর সঙ্গে কোনও কথা বলবেন না। মারধোর বা বকাবকি করাও একদম নয়। এই সময় কোনও ভাবেই বাচ্চার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবেন না। বাচ্চার ব্যবহারকে কোনও রকম গুরুত্ব দেবেন না। তাকে যদি বিশেষ গুরুত্ব না দেওয়া হয় তাহলে ধীরে ধীরে ওর জেদটা কমতে থাকে।। ইংরেজিতে একে বলে ট্যানট্রাম সাবসাইডিং।

৩। জেদ যখন কমে আসে সেই সময়টা পেরেন্টিং-র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। সেই সময় বাচ্চাকে স্নেহ দিয়ে বোঝাতে হবে সে যা ব্যবহার করছে তা পরিবারের কারোও কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি সে আবার ওরকম ব্যবহার করে তাহলে বাড়ীর কেউ তার সঙ্গে কথা বলবে না। তার নিজস্ব চাহিদা নিশ্চয়ই থাকতে পারে, কিন্তু তা প্রকাশ করতে হবে সংযতভাবে। এইভাবে তার মধ্যে সেল্ফ কন্ট্রোল বোধ তৈরি  হবে।

body1_070918012342.jpg

৪। বাড়ীর বাইরে বাচ্চারা অনেকসময় জেদের প্রকাশ ঘটায়। এখনকার বাচ্চাদের গন্তব্যস্থল বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শপিং মল। সেখানে সার সার সুন্দর করে সাজানো খেলনা দেখে তাদের সেগুলো পেতে ইচ্ছে হয়। ফলে তারা সেগুলো পাওয়ার জন্য জেদ ধরে। এক্ষেত্রে দুটি সমাধান আছে। প্রথমত শপিং মল জাতীয় জায়গায় বাচ্চাদের যতটা কম নিয়ে যাওয়া যায় ততই ভালো। বাচ্চাদের বিনোদনের জায়গা হল খেলার মাঠ, শপিং মল নয়। যদি একান্তই নিয়ে যেতে হয় তাহলে তাকে আগে থেকেই বুঝিয়ে বলুন তারপর নিয়ে যান।

৫। কর্মরত মায়েদের মধ্যে অনেকসময় একটা অকারণ অপরাধবোধ কাজ করে। তাঁদের সবসময় মনে হয়, সন্তানকে তিনি বোধহয় অযত্ন করছেন। তাই বাড়ী ফেরার সময় প্রায়ই সন্তানের জন্য চকোলেট, চিপস বা নানা খেলনা নিয়ে যান। এতে স্বভাবতই বাচ্চার মনে চাহিদার মাত্রা বাড়তে থাকে। এই ধরণের 'পেরেন্টিং ব্রাইবিং' বাচ্চাদের জেদ বা ট্যানট্রামের অন্যতম কারণ। বাচ্চাকে সহজভাবে বোঝান আপনার কাজ করাটা প্রয়োজন। বাচ্চার এক্সপেক্টেশন ম্যানেজ করুন যতটা সম্ভব। দেখবেন ও অনেক সহজভাবে বড় হচ্ছে। বাড়ী ফিরতে দেরী হলে চকোলেট নিয়ে বাড়ীতে আসার প্রয়োজন নেই বরং ফেরার পথে ওর সঙ্গে ফোনে প্ল্যান করে ঠিক করুন আজ রাতে ওকে কোন গল্পটা বলবেন। দেখবেন জেদ উধাও হয়ে যাবে এবং ও অনেক বেশী উৎসুকভাবে আপনার জন্য অপেক্ষা করবে।

body2_070918012333.jpg

৬। বাচ্চার মধ্যে জেদ সংবরণের প্রবণতা দেখলে প্রশংসা করুন। আপনার প্রশংসা বাচ্চাকে উৎসাহিত করবে সেল্ফ কন্ট্রোল শিখতে।

বাচ্চার জেদ বা ট্যানট্রাম সামলানোর জন্য মারধোর বা বকাবকির প্রয়োজন হয় না। দরকার কেবল আপনার ধৈর্য বা পেশেন্স, উপযুক্ত প্ল্যানিং, বাড়ীর সব সদস্যদের বাচ্চাদের প্রতি একই ধরণের ব্যবহার আর পজিটিভ বা অথরিটেটিভ পেরেন্টিং পদ্ধতি।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PAYEL GHOSH PAYEL GHOSH

Parenting Consultant, educates young parents on positive parenting

Comment