ভারতীয় সুরা দিবস: যিনি নেপথ্যে আছেন তাঁর অবদান যেন ভুলে না যাই
কী করলে ভারতীয় মদিরাশিল্পের পালে আরও বাতাস লাগবে
- Total Shares
স্নিগ্ধ তাঁর নয়নযুগল আর ঠোঁটে শিশুসুলভ হাসি। আন্দোলনকারী বলতে যে ছবিটা প্রথমেই মনে ভেসে ওঠে সেই আগুনে দাপট, ভয়ঙ্কর একটা ব্যাপার তা কোনও দিনই কেশব সুরীর মধ্যে ছিল না।
যদিও সেই মুষ্টিমেয় ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিও একজন যাঁরা গতানুগতিকতাকে অগ্রাহ্য করেছেন এবং কেউই যে পক্ষপাতদুষ্ট আইনের অবসান চাননি সেই আইনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন – স্পষ্ট ভাবে বলতে গেলে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা, যেখানে সমলিঙ্গের মধ্যে যৌন সম্পর্ককে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
তাঁর বাবা ললিত সুরীর মতো জাঁকজমক, নিখুঁত আতিথ্য এবং সমস্ত রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব তাঁর নেই, বরং কেশব সুরী অত্যন্ত সাদামাঠা ভাবে জীবনযাপন করেন। অবশ্য ললিত সুরী হসপিটালিটি গ্রুপের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসাবে তিনি আতিথেয়তা ক্ষেত্রে সকলের জন্য সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন, যাকে ইংরেজিতে বলে ইনক্লুশন।
ইউনিভার্সিটি অফ ওয়ারউইকে আইন ও বাণিজ্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং তার পরে ওই দুই বিষয়েই মাস্টারডিগ্রি করেছেন লন্ডনের কিংস কলেজের ইন্টারন্যাশনাল ম্যানেজমেন্ট থেকে এবং এলএলএম করেছেন স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (এসওএএস) থেকে – এ জন্য কেশবকে দীর্ঘ দিন যুক্তরাজ্যে বসবাস করতে হয়েছিল। ললিত নিউ দিল্লিতে কিট্টি সু নৈশক্লাব চালু করে নিজের স্টাইলে দেশে ফেরার কথা ঘোষণা করেন সাত বছর আগে।
তবে এটা আর পাঁচটা নাইটক্লাবের মতো আর একটা নাইটক্লাব ছিল না।
শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণীর একটি বিনোদনের জায়গা হিসাবেই আজ কিট্টি সু-র খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েনি (এখানকার নিজস্ব ডিজে হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন), এটা হল এলজিবিটিকিউ-দের মেলামেশা করার জায়গা। কেশব আরও অনেক কিছু করেছেন।
ললিত গোষ্ঠীর নতুন রুফটপ রেস্তরাঁ ওকো হল নপুংসকদের জন্য (ছবি: মেল টুডে)
কেরলের বেকাল থেকে দিল্লি-শ্রীনগর হয়ে লন্ডন পর্যন্ত ছাপ রয়েছে ললিত গোষ্ঠীর তারা আত্মাভিমানী নপুংসকদের সমাজের মূলস্রোতের কর্মজীবনে ফেরার সুযোগ করে দিচ্ছে (সম্ভবত তাঁদের মধ্যেই কোনও একজন খাবার পরিবেশন করবেন লতিন নিউ দিল্লির রুফটপ রেস্তরাঁ ওকো-তে) এবং কিট্টি সু-তে ‘ড্র্যাগ কুইন’ পার্টিতে নিজেদের ব্যক্ত করার সুযোগ তাঁরা পান।
অ্যাসিড আক্রান্তদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে হোটেলের ফ্লোরে কাজ করার জন্য এবং তাঁরাই ঘর ও যাতায়াতের পথ ফুল দিয়ে সাজিয়ে দেন।
কেশবেন নেতৃত্বে সত্যিসত্যিই এই গোষ্ঠী সমাজের প্রকৃত প্রান্তজেনের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।
এলজিবিটিকিউ আন্দোলন ছাড়াও খাদ্য পানীয় ক্ষেত্রেও তাঁকে দার্শনিক বলা চলে।
২৮ তলার উপরে ওকো থেকে দুর্দান্ত দেখায় শহরটিকে, এই জায়গার গুরুত্ব ও স্থায়িত্বের কথা মাথায় রেখে খুব ভাবনা-চিন্তা করেই চণ্ডীগড়ের শেফস গার্ডেনে এর জন্য চাষাবাদ করা হয়।
এই কারণেই প্যাকেটে মোড়া খাবারের মতো নয়, থাই খাবারের স্বাদ হয় একেবারে তরতাজা।
সত্যি, যদি সব হোটেলই কেশবের পদাঙ্ক অনুসরণ করত! (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)
তবে এই রেস্তোরাঁয় আমার সবচেয়ে পছন্দের খাবার হল সেক অ্যান্ড ওয়াইনপেয়ার্ড সুশি এবং সাশিমি প্ল্যাটার্স।
এটা একেবারে ওঁদের নিজস্ব!
এটা আমাকে মনে করিয়ে দেয় ‘ন্যানারি’র কথা যেটা কেশব চালু করেছিলেন বালুচিতে যেখানে নৈশভোজে ভারতীয় পাঁউরুটির সঙ্গে দেওয়া হয় বিশেষ চাটনি আর সেটি খুব সুন্দর ভাবে আপনি খেতে পারবেন ওয়াইনের সঙ্গে।
ওয়াইনের কথা যখন উঠলই তখন আরেকটা কথাও বলি, ললিত গোষ্ঠী হল প্রথম ভারতীয় হোটেল চেন যারা দিল্লি ওয়াইন ক্লাবের সঙ্গে যৌথ ভাবে ভারতীয় মদিরা দিবস (ইন্ডিয়ান ওয়াইন ডে) পালনের কথা চিন্তাভাবনা করে – ১৬ নভেম্বর হল সেই দিন – ওই দিন তাদের ১৩টি হোটেলের প্রত্যেকটিই ভারতীয় ওয়াইনকে তুলে ধরবে।
যদিসব হোটেলই এই পদাঙ্ক অনুসরণ করত!
ভারতীয় মদিরা শিল্পকে তুলে ধরার জন্য এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে! জাতে উঠতে পারছে না বলে চিরকালই তো অভিযোগ শুনে আসছি, কারণ হোটেল-রেস্তরাঁ থেকে বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজকরা – প্রত্যেকেই দেশীয় মদকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যই করে এসেছেন।
কেশব অবশ্য তা করেননি – কারণ তিনি আর পাঁচজনের মতো নন
(সৌজন্য: মেল টুডে)
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে