উচ্চবিত্তদের মধ্যে হৃদরোগের সমস্যা বেশি দেখা যায়
অল্প বয়সীদের অনেকেই এর ফলে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন, মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে
- Total Shares
বয়স্কদেরই শুধু হার্ট অ্যাটাক (একে হার্ট স্ট্রোকও বলে) হতে পারে এই ধারণাটা একেবারেই একটা ভুল। বিভিন্ন সমীক্ষা ও গবেষণায় দেখা গেছে যে গত কয়েক বছরে অল্পবয়সীদের মধ্যে হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক অনেক বেড়ে গেছে। আমাদের দেশে প্রত্যেক বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অল্প বয়সী অনেকের মৃত্যু হয়েছে, অনেকে কর্মক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছেন। ইন্ডিয়ান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের একটি রিপোর্ট অনুসারে যে সব ভারতীয়র হার্ট অ্যাটাক হয়, তাঁদের প্রায় অর্ধেকের বয়স ৫০ বছরের নীচে এবং ২৫ শতাংশের বয়স ৪০ বছরের কম।
নানা কারণে অল্প বয়সে হৃদরোগ হতে পারে। অল্প বয়সে হার্টের অসুখ হওয়ার একটা প্রধান কারণ হল ধূমপান। এ যুগে কম বয়সীদের মধ্যে এমনকি মহিলাদের মধ্যেও ধূমপানের প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। জীবনের ইঁদুর দৌড়ে টিকে থাকার জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে অমানুষিক চাপ। এর ফলে অল্পবয়সীদের মধ্যে ডায়েবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস এখন বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উচ্চবিত্তদের মধ্যে বিভিন্ন হৃদরোগের সমস্যা অনেক বেশি দেখা যায়। আসলে মানুষ একটা দুষ্টচক্রের মধ্যে আটকে পড়েছে যেটাকে ভেঙে বেরোনো বেশ কষ্টকর। যাঁরা ধূমপান করেন কোনও রকম মানসিক চাপ হলে তাঁদের ধূমপান করার প্রবণতা আরও বেড়ে যায়। পাশাপাশি দুশ্চিন্তার কারণে রাতে ভালো ঘুম হয়ে না। এই সব কিছু একত্রিত হয়ে হাইপারটেনশন বা উচ্চরক্ত চাপের সৃষ্টি করে।
এখন ১৮ বছরের তরুণদেরও হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। বহু রোগী আমাদের কাছে আসেন যাঁদের বয়স চল্লিশের নীচে কিন্তু ইতিমধ্যেই তাঁদের হয়তো দুবার অ্যাটাক হয়ে গেছে।
অল্পবয়সে হার্ট অ্যাটাক হলে ভেঙে পড়ার কোনও কারণ নেই। বয়সটা অল্প থাকে বলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাটা অনেক বেশি থাকে। তবে অনেক সময়ই দেখা যায় যে অল্পবসয়ীদের অ্যাটাক বা স্ট্রোক হলে তাঁরা প্রথমটায় ভাবেন হয়তো হজমের সমস্যার থেকে বুকে ব্যথা হচ্ছে তাই আর চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না তাই অনেক পরে বোঝা যায় যে আসলে ওটা ছিল একটা হার্ট অ্যাটাক। তাই সময়মত চিকিৎসা না করলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
একটা বিষয় বেশ পরিষ্কার সেটা হল অল্পবয়সীদের মধ্যে হার্টের সমস্যার একটা প্রধান কারণ হল জীবনধারণে অনিয়ম।
সমাজ এখন অনেক এগিয়ে গেছে, পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছে মানুষের স্বপ্ন আর সেগুলোকে বাস্তবায়িত করতে গিয়ে আমরা সারাদিন ব্যস্ত হয়ে থাকি নিজেদের শরীরের দিকে নজর দেওয়ার এক মুহূর্ত অবসর নেই আমাদের। এখন মানুষ খুব অল্পবয়সেই অর্থ উপার্জনের জন্য মরিয়া হয় ওঠে। খুব অল্পবয়সে হাতে অর্থ আসতে শুরু করলে অনেকেই ব্যয়ও করেন ইচ্ছে মতো। তাই জীবনটা যেন কোনও লাগাম মানতে চায় না। ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড, গভীর রাত অবধি পার্টি, অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান, দীর্ঘক্ষণ বসে বসে কাজ করা, অসময় ঘুম প্রভৃতির কারণে হৃদযন্ত্র দুর্বল হতে থাকে। কায়িক পরিশ্রম নেই বললেই চলে যার ফলে বাড়ছে স্থূলতা। স্থূলদের বেশি হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয়ে। ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুড খেলে রক্তে চর্বির মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে কোলেস্টরল হতে পারে যার থেকে হৃদপিণ্ডে সমস্যা হয়।
আবার যাঁরা রাতে কলসেন্টারে কাজ করেন তাঁদেরও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। রাতে ঘুমোনোর সময় ঘুম না হলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন দেখা দেয় তেমন অনেক মানসিক সমস্যাও হতে পারে।
কারোও যদি হার্ট অ্যাটাক হয় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি অর্থাৎ ছ'ঘণ্টার মধ্যে কোনও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হবে।
নিয়ন্ত্রিত ও সুস্থ জীবনযাপন হৃদরোগ প্রতিরোধের চাবিকাঠি। যাঁদের পরিবারে এই ধরণের সমস্যা আছে তাঁদের নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করা উচিৎ। খাদ্যাভ্যাসের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। বেশি তেলমশলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো এবং হালকা খাবার খাওয়া উচিৎ। পাশাপাশি যে সব খাবারে কম কার্বোহাইড্রেট ও কম স্নেহপদার্থ রয়েছে সেই সব জিনিস খাওয়া উচিৎ। নিয়মিত ব্যায়াম বা জিম করুন। প্রচুর পরিমাণে শাক সবজি ও জল খান। যাঁদের উচ্চরক্ত চাপের সমস্যা আছে বা যাঁদের পরিবারের কারও উচ্চ রক্তচাপ আছে তাঁরা বেশি নুন খাবেন না।