কাশ্মীর থেকে মেঘালয়: ভারতের ঐতিহ্যগত খাবারগুলো প্রোটিনে টইটুম্বুর
আসুন, বিভিন্ন রাজ্যের হাই-প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলোর উপর একবার চেখে দেখা যাক
- Total Shares
আমাদের নিত্যদিনের নিত্য দিনের খাদ্যাভাসে প্রোটিন যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। ভারতীয় খাদ্যাভাসে একটি বড় গুণ রয়েছে। দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যের বা অঞ্চলের ঐতিহ্যগত খাবারগুলোর পুষ্টিগুণ অপরিসীম কারণ এই সবকটি খাবারের মধ্যেই প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, আধুনিক প্রজন্ম বর্তমানে এই খাবারগুলোর মধ্যে অনেক খাবারই তাদের প্রাত্যহিক খাদ্যাভাস থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে।
উত্তর ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের গুস্তাবা থেকে পূর্ব ভারতের ঝাড়খণ্ডের চিলকা রুটি - ভারতের রান্নাঘরে যেন প্রোটিন যুক্ত খাবারের অন্ত নেই।
আসুন, একবার দেখে নেওয়া যাক ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের চিরাচরিত খাবারগুলোয় কোনটিতে কতটা প্রোটিন রয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীর
এই অঞ্চলের খাবারে মাংসের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়াও এ রাজ্যের বাসিন্দারা প্রচুর পরিমানে মেওয়া, বাদাম ও তাজা ফল খেয়ে থাকেন। কাশ্মীরে গুস্তাবা খুবই জনপ্রিয়। পাঁঠার মাংসের কিমার বল সঙ্গে দই মিশিয়ে দিয়ে ঝোল - এই দুইয়ের মিশ্রনে রান্না করা হয় গুস্তাবা। কাশ্মীরি ওয়াজওয়ানে (মেনুতে) গুস্তাবাকেই সর্বশ্রেষ্ঠ খাদ্য বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। এই রান্নাটির অন্যতম বিশেষত্ব - রান্নায় ব্যবহৃত সমস্ত মশলাপাতি হজমে সাহায্য করে।
ঝাড়খণ্ড
প্রতিবেশী রাজ্য বিহারের সঙ্গে এ রাজ্যের খাদ্যাভাসে খুব একটা তফাৎ নেই। মূলত নিরামিষ খাবার এবং রন্ধন উপকরণে সর্ষের তেলের ব্যবহার সর্বজন স্বীকৃত। ঝাড়খণ্ডের ঐতিহ্যগত খাবারে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজিও ব্যবহার হয়ে থাকে। এ রাজ্যে লিট্টি বেশ জনপ্রিয় যা দই, বেগুন ভর্তা, আলু ভর্তা কিংবা শুধুই পাঁপড় সহযোগে খাওয়া হয়। সত্যিই এটি বেশ স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। এ ছাড়া, রুগরা (অনেকটা মাশরুমের মতো খেতে এবং প্রচুর প্রোটিন ও মিনারেল সম্মিলিত একটি সবজি যা এ রাজ্যে পাওয়া যায়) দিয়ে চিলকা রুটি (বেসন ও ময়দা দিয়ে তৈরি হয়) ও ছোলার ডাল ও চাটনি খাওয়াও বেশ স্বাস্থ্যকর। যা এ রাজ্যের একটি ঐতিহ্যগত খাবার।
কাশ্মীরের গুস্তাবা সত্যিই অনবদ্য [সৌজন্যে: ইউটিউব]
কর্নাটক
রাগি, জোয়ার ও বিভিন্ন ধরনের বাজরা সহযোগে সী-ফুডের এ রাজ্যে বেশ চল আছে। এ রাজ্যের দুটি জনপ্রিয় খাবার হল রাগি মুদ্দে ও সপ্পিনা সারু। নাম দেখেই বুঝতে পারছেন রাগি মুদ্দের প্রধান উপকরণ রাগি। সপ্পিনা সারু তৈরি হয় কাঁচা আনাজ ও ডাল দিয়ে। কর্নাটকের আরও একটি জনপ্রিয় খাবার কসাম্বরি। যা বিভিন্ন ধরনের কাঁচা সাক সবজি ও ডাল দিয়ে তৈরি স্যালাড। রন্ধন পদ্ধতিটাও বেশ অন্যরকম। প্রথমে মুগ ডালকে ঘণ্টাখানেক ভিজিয়ে রাখতে হয়। এর পর জল ফেলে দিয়ে শুকনো মুগ ডালে গাজর, শশা, কুচোনো নারকেল, কুচি কুচি করে কাটা কাঁচালঙ্কা মেশাতে হবে। এবার এই মিশ্রনে নুন, পাতিলেবুর রস, ধনেপাতা মিশিয়ে কাঁচা স্যালাড তৈরি করতে হবে। সব শেষে, একটি কড়াইয়ে তেল গরম করে সর্ষে, কারিপাতা, হিং ও লাল লঙ্কা দিয়ে ফোটাতে হবে। এই ফোটানো মিশ্রণটি কাঁচা স্যালাডের সঙ্গে মিশিয়ে একটু ঠান্ডা করে পরিবেশন করা হয়ে থাকে।
কেরল
উপকূলবর্তী কেরলে মাছ ও বিভিন্ন ধরণের সি-ফুড বেশ জনপ্রিয়। কেরলের বাসিন্দারা লাল চাল ও নারকেল খেতে বেশ পছন্দ করেন। আপনি ট্যাপিওকা ও মাছের ঝোল কিংবা মুগকারির সঙ্গে আটা, রাগি বা চালের পুট্টু (ভাপা কেক) চেখে দেখতে পারেন। এই মুগ ডালের ঝোল রাঁধতে হলে আপনাকে সবুজ মুগকে প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করে নিতে হবে। এরপর নারকেল বাটা, গোটা জিরা ও লঙ্কা গুঁড়ো মিশিয়ে তিন থেকে পাঁচ মিনিট রান্না করতে হবে। এর পর একটি কড়াইয়ে দু'চামচ নারকেল তেল দিয়ে তার উপর সর্ষে, পেঁয়াজ, কারিপাতা, শুকনো লঙ্কা দিয়ে ভাজতে হবে। পেঁয়াজের রং উজ্জ্বল বাদামি হয়ে এলে এই গরম মিশ্রণটি রান্না করা সবুজ মুগের উপর ধেলে দেওয়া হয়।
লিট্টি ঝাড়খণ্ডে বেশ জনপ্রিয় [ছবি: উইকিম্যাপিয়া কমন্স]
মধ্যপ্রদেশ
এ রাজ্যে গমের বেশ চল রয়েছে। এ ছাড়া, এ রাজ্যের খাদ্যাভাসে দুগ্ধ জাতীয় পণ্য, প্রোটিন সমৃদ্ধ ডাল, মাছ ও মাংসের উপস্থিতিও লক্ষ করা যায়। মধ্যপ্রদেশের ভুট্টার তৈরি একটি রান্না বেশ জনপ্রিয় যার পোশাকি নাম 'ভুট্টে কি কিস'। ভুট্টার দানাকে পিষে তাতে বিভিন্ন ধরনের মশলা মেশানো হয়। খাবারের সামান্য মিষ্টির স্বাদ আনতে এর উপর দুধ ঢালা হয়ে থাকে। এর পর, গন্ধের জন্যে কাঁচালঙ্কা ও সর্ষে মেশানো হয়। এই খাবারটিতে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন ও ফাইবার থাকায় এই খাবারটি শরীরের মাংসপেশী তৈরি করতে সাহায্য করে।
মহারাষ্ট্র
মারাঠিরা ভাত খেতে ভালোবাসেন এছাড়া, এ রাজ্যের রান্নায় নারকেল ও বাদামের ব্যবহারও হয়ে থাকে। পিঠালের সঙ্গে ভকরি (জোয়ার বা বাজরা দিয়ে তৈরি এক ধরণের রুটি) এ রাজ্যে বেশ জনপ্রিয়। পিঠালে তৈরি করতে সর্ষে বাটার প্রয়োজন পড়ে। বাটা সর্ষের সঙ্গে পেঁয়াজ ভালো করে ভেজে নিতে হয় যাতে মিশ্রণটিতে একটি হালকা বাদামি রং আসে। এর পর এক চিমটে হলুদ গুঁড়ো, স্বাদ অনুযায়ী লবন, এক চিমটে হিং ও এক গ্লাস জল মিশিয়ে সিদ্ধ করতে হয়। সিদ্ধ হয়ে গেলে ছোলার ময়দা মিশিয়ে মিশ্রণটি যতক্ষণ পর্যন্ত থকথকে না হচ্ছে ততক্ষণ মেলাতে হয়। সবশেষে হালকা আঁচে কিছুক্ষণ রান্না করে ধনেপাতা ছড়িয়ে পরিবেশন করা হয়ে থাকে।
রাগি মুদ্দে কর্নাটকে বেশ জনপ্রিয় [ছবি: উইকিম্যাপিয়া কমন্স]
মণিপুর
এ রাজ্যে মাছ, মাংস ও সবজির সঙ্গে চাল খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। রাজ্যের নিজস্ব খাবার কাংশই চেখে দেখতে পারেন। সবজি ও শুঁটকি মাছ দিয়ে এই স্টু তৈরি হয়। এ রান্নায়ে প্রোটিন ও ফাইবার ভরপুর। গোল গোল করে কাটা আলু সিদ্ধ করে নিতে হয়। এর পর এর সঙ্গে শুঁটকি মিশিয়ে আরও তিন থেকে পাঁচ মিনিট সিদ্ধ করতে হয়। এর পর টম্যাটো, কাঁচালঙ্কা ও জল মিশিয়ে আবার তিন থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য সিদ্ধ করতে হয়। সব শেষে আদা বাটা ও ধনেপাতা দিয়ে পরিবেশন করা হয়ে থাকে।
মেঘালয়
মেঘালয়ে মাংসের চল সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে শুয়োরের মাংস। এছাড়া নাখমম বিচি বেশ জনপ্রিয়, যা নখোম মাছের শুঁটকি দিয়ে তৈরি এক ধরণের সুপ। প্রথমে শুঁটকি মাছকে ভেজে নিয়ে সেটিকে সিদ্ধ করে সুপ তৈরি করা হয়। গন্ধ বা স্বাদের জন্য প্রচুর পরিমাণ লঙ্কা ও মরিচ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে