জেনে নিন স্কুলে ভর্তি হওয়ার দিন আপনার বাচ্চাকে কী ভাবে সামলাবেন
ওদের নিজের মতো বলতে দিন, ব্যর্থ হলে তার দায় ওদের উপরে চাপিয়ে দেবেন না
- Total Shares
গত বছর আমার এক বন্ধু তার তিন বছরের কন্যাটিকে নিয়ে কলকাতার একটি নামী স্কুলে ইন্টারভিউ দিতে নিয়ে যায়। বাচ্চাদের প্রশ্নপর্ব শেষ হওয়ার পর শুরু হল মা বাবার সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্ব। কিন্তু ওই গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে আমার বন্ধুকন্যাটি জুড়লো, বেজায় কান্না। বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রবল বিক্রমে শুরু হল তার জেদের বহিঃপ্রকাশ।
অগত্যা ইন্টারভিউয়ের মাঝপথেই তা ছেড়ে উঠে যেতে হল তাদের এবং বলাই বাহুল্য ওই স্কুলের সিলেকশন লিস্টটিতে তার কন্যার নামটি ছিল না।
বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করানো মানে মা-বাবাদের ঘুম চলে যাওয়া। বর্তমানে স্কুল অ্যাডমিশন পদ্ধতিতে প্রয়োজন একটি পরিবারগত প্রচেষ্টা। সেই ময়দানে মা, বাবা ও বাচ্চা তিনজনেরই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। কারণ এই তিনজনের কোনও একজন যদি সেই বিশেষ দিনটিতে সঠিক ভাবে নিজেকে মেলে ধরতে করতে পারে, তা হলে হাতের নাগালের বাইরে চলে যায় সবকিছু। মা-বাবারা না হয় সামলে নিতে পারবেন নিজেদের, কিন্তু কী ভাবে সেই বিশেষ দিনটিতে সামলাবেন খুদেটিকে? এ ব্যাপারে আপনাদের জন্য রইল কিছু চটজলদি পরামর্শ।
সময় মতো স্কুলে পৌঁছে যান
১। ইন্টারভিউয়ের আগের দিন রাতে বাচ্চাকে তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়িয়ে দিন যাতে ও একটা পরিপূর্ণ ঘুম হয়। ঘুম ঠিকঠাক না হলে কিন্তু বাচ্চার মুড ও ঠিকঠাক থাকে না। অনেক সময় আবার ইন্টারভিউয়ের সময় থাকে দুপুরবেলা। যে সব বাচ্চাদের দুপুরে ঘুমনো অভ্যেস, তাদের সে দিন সকালে একটু বেশি ঘুমানোর সুযোগ দিন।
২। খাওয়াদাওয়ার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। হালকা খাবার খাওয়াবেন। সঙ্গে অবশ্যই রাখবেন ওর পছন্দমতো শুকনো খাবার।
বাচ্চার বেশভূষা ও পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেতন থাকুন
৩। সেদিন বই নিয়ে না বসে বরং খেলাচ্ছলে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন। যে স্কুলটিতে ও যাবে তার ছবি দেখান, পজিটিভ কথা বলুন যাতে ও আনন্দের সঙ্গে ইন্টারভিউ দিতে যায়।
৪। নিজেরা একদম টেনশন করবেন না। আপনাদের টেনশনে থাকতে দেখলে বাচ্চা ভয় পেয়ে আরো কুঁকড়ে যাবে। ইন্টারভিউ একটা মজার খেলা, এই রকম ধারণা দিয়ে বাচ্চাকে নিয়ে চলুন।
৫। অনেকসময় কিছু স্কুলে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় ইন্টারভিউয়ের জন্য। সেক্ষেত্রে নিজেদের সঙ্গে বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন পাজল গেম বা ম্যাজিক বোর্ড জাতীয় সামগ্রী রাখতে পারেন। তাহলে বাচ্চা অধৈর্য্য হয় উঠবে না ।
৬। বাচ্চার বেশভূষা ও পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেতন থাকুন। মেয়েদের ক্ষেত্রে চুল যেন ক্লিপ করে পরিচ্ছন্ন ভাবে আটকানো থাকে। ছেলেদের ক্ষেত্রে যথাযথ ভাবে যেন আঁচড়ানো থাকে। হাতের নখ যেন পরিষ্কার করে কাটা থাকে। সঙ্গে অবশ্যই যেন রুমাল থাকে। এক রংয়ের আরামদায়ক পোশাক পরাবেন। পায় যেন মোজা সমেত জুতো থাকে। পোশাকের রং এমন ভাবে নির্বাচন করবেন যাতে সহজেই তা বাচ্চারা বলতে পারে।
স্কুলের সিলেকশন লিস্টটিতে তার কন্যার নামটি ছিল না
৭। কী উত্তর দিল তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বাচ্চার সৌম্য আচরণ। তাই সেদিকে লক্ষ্য রাখুন বেশি মাত্রায়। বাচ্চা যেন প্রাণবন্ত থাকে আর হাসিমুখে সবার সঙ্গে কথা বলে সে ব্যাপারে সচেতন হন।
৮। সময় মতো স্কুলে পৌঁছে যান। দেরিতে যাওয়া মানেই নিজেদের টেনশন বাড়ানো আর তা সংবাহিত হবে বাচ্চাদের মধ্যে। বরং একটু আগে পৌঁছলে স্কুলের পরিবেশের সঙ্গে বাচ্চা মানিয়ে নিতে পারবে।
৯। অনেক স্কুলে ইন্টারভিউয়ের সময় বাচ্চাদের আলাদা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ বিষয়ে আগে থেকেই বাচ্চাকে সুস্পষ্ট ভাবে বলে দিন। ওকে সাহস দিন যথাসম্ভব।
অনেক স্কুলে ইন্টারভিউয়ের সময় বাচ্চাদের আলাদা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়
১০। ইন্টারভিউতে এটা হতেই পারে যে বাচ্চা অনেক কিছু বলতে পারল না। এ ক্ষেত্রে কোনও ভাবেই ওকে বকাবকি করবেন না। নিজেদের হতাশাও ওর উপর চাপিয়ে দেবেন না। মনে রাখবেন এটা ওদের শৈশবের সূচনা। তাই মনের আনন্দে যা বলবে সেটাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। বরং ওর ঘাটতির জায়গাগুলো নিজেরা বুঝে নিয়ে বিভিন্ন রকম মনোগ্রাহী উপায় ওকে তা শেখাবেন।
স্কুল ইন্টারভিউ যেন বাচ্চাদের মধ্যে মানসিক চাপ তৈরি না করতে পারে তার খেয়াল রাখতে হবে অভিভাবকদেরই। তাই মনকে শান্ত, সংযত ও অবিচল রাখুন সব সময়।