বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক বাড়ছে কেন, কেনই বা তার জেরে বাড়ছে খুন?
সমস্যা বেশি হয় যদি কোনও একজন অবিবাহিত বা বিবাহবিচ্ছিন্ন/বিচ্ছিন্না হন
- Total Shares
গত কয়েক বছরে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের ঘটনাও যেমন বেড়েছে ঠিক তেমনভাবে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে খুনের ঘটনাও বেড়েছে অনেক।
প্রথমে আমাদের বুঝতে কেন একজন ব্যক্তি এইধরণের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সময় এখন অনেক বদলেছে। আর সেই বদলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষ সব দিক দিয়ে আধুনিক হয়েছে। মানুষের কাছে এখন সবকিছুই খুব সহজলভ্য। সবার হাতে এখন স্মার্টফোন, ঘরে বসেই সারা পৃথিবী একেবারে হাতের মুঠোয়। পৃথিবীটা এখন খুব ছোট হয়ে গেছে আমাদের কাছে। বিনোদনের কতই না সামগ্রী!
ঠিক তেমন ভাবেই সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে আমরা নতুন লোকজনের সঙ্গে পরিচিত হই। অনেক ক্ষেত্রে নিছক বন্ধুত্ব ভালোবাসায় পরিণত হয়। একজন অনলাইনে চ্যাট করতে করতে নিজের অজান্তেই অপর প্রান্তের মানুষের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। অনেকেই তাতে কোনও রকম খারাপ কিছু আছে বলে মনে করেন না।
তারপর এমন একটা সময় আসে যখন এই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তির কাছে ব্যক্তিগত চাহিদা বাড়তে শুরু করে, ফলত সে আর একজনের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। কারণ তাঁর মনে হয় যে বিপরীতে থাকা ব্যক্তি বোধহয় তাঁকে যথেষ্ট সময় দিচ্ছেন না বা তাঁর কাছে হয়তো সম্পর্কটার তেমন একটা গুরুত্ব নেই। এঁদের মধ্যে ঠিক এবং ভুল বিচার করার বুদ্ধিও লোপ পায়। প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই ধরণের সম্পর্কগুলো গোপন রাখতে হয় বলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে।
আবার অনেক ক্ষেত্রে এমনটাও হয় যে একজন হয়তো এমনই একটি সম্পর্কে প্রবেশ করার সময় সত্যি সম্পর্কটিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি বা তিনি কখনও ভাবেননি যে এই নতুন সম্পর্কটির জন্য তিনি একটি দাম্পত্যের সম্পর্ক ভেঙে দিতে চাইবেন। তাঁর অজান্তেই সম্পর্কটা গভীর ও জটিল হয়ে ওঠে। বিশেষ করে সম্পর্কের একজন যদি অবিবাহিত হন বা বিয়ে হয়ে থাকলেও তাঁর বিচ্ছেদ হয়ে গিয়ে থাকে তখন পরিস্থিতিটা আরও বেশি জটিল হয়ে পড়ে। তিনি অপর ব্যক্তির উপর অনধিকার জোর খাটাতে শুরু করে। কারণ প্রেমে পড়লে মানুষের খুব স্বাভাবিকভাবেই একটা অধিকারবোধও জন্ম নেয়।
কেন বিয়ের পর প্রেম, তার জেরে খুন?
এ ছাড়াও অনেক সময় এমনও দেখেছি যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত বলে স্বামী বা স্ত্রী অন্য আর একজনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই তৃতীয় ব্যক্তি হয়তো সহানুভূতিশীল এবং ক্রমশই তাঁদের মধ্যে একটা ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
অনেক ক্ষেত্রে অনলাইনে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে মনের কথা আদানপ্রদান করতে করতে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জন্ম নেয়ে। ফলত স্ত্রী কিংবা স্বামী এই নতুন মানুষটির সঙ্গে তাঁর জীবনসঙ্গীর তুলনা করা শুরু করে।এর থেকে কোনও একজনের মধ্যে একটা ভীষণ ক্রোধ জন্ম নেয়। তারপর দু'জনের মধ্যে একটা চাপানউতোরের পালা শুরু হয়। এই ধরণের পরিস্থিতির থেকে একটা অসম্ভব অধিকারবোধ অর্থাৎ প্রেমিক কিংবা প্রেমিকাকে সর্বক্ষণ নিজের কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জন্মায়।
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে গত কয়েক বছরে বহু হত্যার ঘটনা উঠে এসেছে। তবে আমাদের একটা কথা বুঝতে হবে যে সবাই খুন করে না। তাই যাঁরা খুন করে তাঁদের কোনও বড় রকমের মানসিক সমস্যা আছে। সেই ব্যক্তির হয় অসম্ভব সন্দেহবাতিক রয়েছে নয়তো তিনি রেগে গেলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না বা তাঁর ব্যক্তিত্বের আরও অন্যান্য কিছু সমস্যা আছে। আবার অনেক সময় যখন কোনও ব্যক্তির প্যারানয়েড স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় থাকে তখনও তিনি খুন পর্যন্ত করে ফেলতে পারেন।
মানুষের কাছে এখন সবকিছুই খুব সহজলভ্য
একজন মানুষ যদি নিজের মানসিক অসুবিধাগুলো বুঝতে পারেন তাহলে সেই ব্যক্তিকে চিকিৎসা করানো কঠিন নয়। তবে যিনি নিজের সমস্যাটা বুঝতে পারেন না তাঁদের ক্ষেত্রে চিন্তার বিষয় আছে।
এই ক্ষেত্রে এঁদের বাড়ির লোককে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বাড়ির লোকেদের বুঝতে হবে কোন কোন বিষয়ে বা কেন সেই ব্যক্তি রেগে যাচ্ছেন। সাধারণত এই ধরণের মানুষ অসম্ভব নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তিনি মনে করেন সবাই তাঁর ক্ষতি করার চেষ্টা করছে বা তাঁর সঙ্গী অন্য কারও সঙ্গে প্রেম করছে।
আবার এমন মানুষ আছেন যিনি চান যে সবাই তাঁর কথা মতোই চলবে আর তা যদি না হয় তখনই ঘটে বিপত্তি।
আবেগ বা রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিকিৎসকরা অনেক সময় মেডিটেশন করার পরামর্শ দেন।
তবে যে সব মানুষের প্যারানয়েড স্কিৎজোফ্রেনিয়ার সমস্যা আছে বা অন্যান্য ধরণের কঠিন মানসিক সমস্যা আছে তাঁরাই হত্যা করতে বা অন্য মানুষের ক্ষতি করতে পারেন। এই জাতীয় ব্যক্তিদের চিকিৎসা বা ওষুধের প্রয়োজন পড়ে। তবে এঁরা চিকিৎসা করাতে চান না। বাড়ির লোকজন যাঁরা সর্বক্ষণ এই ব্যক্তির কাছাকাছি আছেন তাঁদের অনেক বেশি সতর্ক নজর রাখতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ির লোক বা সেই ব্যক্তির আত্মীয়কে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ঠিক কী করণীয় সেটা জানতে হবে ও সেই মতো পরামর্শ মেনে চলতে হবে।