রোজ দু'টো করে ডিম খান: আর হ্যাঁ, কুসুমটাও খাবেন
গবেষণায় প্রমাণিত রোজ দু'টি ডিমের কুসুম আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত প্ৰয়োজনীয়
- Total Shares
আমি যখন লোকেদের গোটা ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি তখন অনেকেই অবাক হন। তাঁরা বিশ্বাসই করতে পারেন না যে আমি তাঁদের কুসুম-সমেত ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ আমাদের মধ্যে একটি বহুল প্রচলিত ধারণা রয়েছে - ডিমের কুসুম স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।
ডিমের কুসুমের বরাতে এমন একটি অপবাদ জোটে কয়েক দশক আগে যখন মানুষের মনে কোলেস্টেরল-আতঙ্ক থাবা বসিয়েছিল। এর পরে বিভিন্ন গবেষণায় কুসুম এই অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস পেলেও, কুসুমের যা ক্ষতি হওয়ার তা ততদিনে হয়ে গিয়েছিল। এর জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমি মর্মাহত।
মানসিক শান্তির জন্যেই আমি কলম ধরলাম। এই প্রতিবেদনটি লক্ষ্য একটাই, এই লেখাটি পড়ে আপনারা যেন আর কুসুম বাদ দিয়ে ডিমের ওমলেট না খান।
নিশ্চিন্তে ডিমের কুসুম খান, স্বাস্থ্যহানি হবে না [ছবি:রয়টার্স]
কেন আপনারা ডিমের ওই সুস্বাদু, জিভে জল নিয়ে আসা হলুদ অংশটি নিয়মিত ভক্ষণ করবেন? ডিমের কুসুমের হয়ে আমার আট দফা যুক্তি:
১) আমি মেনে নিচ্ছি যে ডিমের সাদা অংশটির থেকে কুসুমের ক্যালরি অনেক বেশি থাকে। কিন্তু একটি গোটা ডিমে তো মেরেকেটে ৭০ ক্যালরি থাকে। বরঞ্চ আমাদের নাগালের মধ্যে যে সব পুষ্টিকর খাবার রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম এই ডিমের কুসুম।
২) শাক-সবজির সঙ্গে স্বাস্থ্যকর কেরটিনের সম্পর্ক আমরা সকলেই জানি। ডিমের কুসুমেও দু'ধরণের স্বাস্থ্যকর কেরটিন রয়েছে - লুটেইন এবং জিয়াক্সঅ্যান্থিন। এই দু'টি চোখের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে এই দুটি কেরটিন অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষা করার পাশাপাশি ছানি এবং বয়সকালে চোখের পেশী খারাপ হওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। সবুজ শাকসবজিতে এই ধরণের উপাদান পাওয়া যায়। কিন্তু এগুলোর থেকে ডিমের কুসুমের পুষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি।
২) একটি ডিমে ছ'গ্রাম মতো 'ভালো জাতের' প্রোটিন থাকে (অর্থাৎ প্রয়োজনীয় ন'টি অ্যামিনো অ্যাসিডের সবকটি ডিমের মধ্যে মধ্যে রয়েছে)। একটি ডিমে যে পরিমাণ প্রোটিন থাকে তার অর্ধেকের সামান্য বেশি থাকে সাদা অংশটিতে। আর বাদ বাকি অর্ধেকটা থাকা ডিমের কুসুমে। তাহলে সুস্বাদু কুসুমটা বাদ দিয়ে ডিম খেতে যাবেন কেন?
৪) ডিমের কুসুমে ভিটামিন-ডি-ও পাওয়া যায় (অন্য কোনও খাবারে যা পাওয়া খুবই দুষ্কর), যা আমাদের মস্তিষ্কের ধূসর বস্তুকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। আমরা সকলেই জানি যে ভিটামিনের অভাব আমাদের গোটা জীবন জুড়ে কী ভাবে তাড়া করে বেড়ায়। এছাড়া ডিমের কুসুমেই (সাদা অংশে নয়) ভিটামিন এ, ই এবং ভিটামিন কে পাওয়া যায়। সাদা অংশের তুলনায় কুসুমে ভিটামিন বি-১২এর পরিমাণ বেশি। অনেক শাকসবজিতে ও এতটা পরিমাণের ভিটামিন বি-১২ পাওয়া যায় না যা ডিমের কুসুমে থাকে। ডিমপ্রেমীদের কাছে ডিমের কুসুম খাওয়ার এটি একটি অন্যতম কারণ।
৫) ডিমের সাদা অংশ ও ডিমের কুসুমে দুটোতেই ১৩ ধরণের খনিজ (মিনারেল) রয়েছে। যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম ও সেলেনিয়াম। তবে এগুলোর পরিমাণ কুসুমে অনেকটাই বেশি। একটি ডিম যা ক্যালসিয়াম থাকে তার ৯০ শতাংশ ডিমের কুসুমে পাওয়া যায়। ডিমের মধ্যে যে পরিমাণ আয়রন থাকে তার ৯৩ শতাংশই ডিমের কুসুমে থাকে। অবশিষ্ঠ মাত্র সাত শতাংশ সাদা অংশটিতে থাকে।
৬) সাদা অংশটির তুলনায় ডিমের কুসুমে কোলিনের পরিমাণও অনেকটা বেশি থাকে। কোলিন স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে শরীরে কোষগুলোর কর্মদক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। এই কোলিন কিন্তু গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুব উপকারী কারণ এটি ভ্রূণের মস্তিষ্ক গঠনে সাহায্য করে।
৭) কুসুমে বেটাইন বলে একটি পদার্থ রয়েছে (যা খুব বেশি খাবারে থাকে না)। এই পদার্থটি রক্তের হোমোসিস্টিন কম করতে সাহায্য করে। মাত্রাতিরিক্ত হোমোসিস্টিন হৃদরোগের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি করে। সুতরাং, কুসুম কিন্তু হৃদরোগের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়।
৮) পরিশেষে আর একটি কথাই বলব। কুসুমে ফ্যাট সংক্রান্ত আশঙ্কার কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরঞ্চ কুসুমে যে পরিমাণ ফ্যাট থাকে তার অর্ধেকটাই স্যাচুরেটেড। আপনার যদি এমনিতে কোলেস্টেরল সমস্যা না থাকে তাহলে কুসুমের কোলেস্টেরল আপনার কোনও ক্ষতি করবে না। সমস্যা থাকলেও, পরিমিত পরিমানের কুসুম খেতেই পারেন।
ডিমে অ্যালার্জি না থাকলে রোজ ডিম খান। আর, হ্যাঁ পুরো ডিমটাই খান।
কোনও কিছুতেই বাড়াবাড়ি ভালো নয়। তাই এই লেখাটি পড়ে দিনে সাত-আটটা করে ডিম খেতে শুরু করে দেবেন না।
দিনে দু'টো করে ডিম কুসুম সমেত খাওয়া যেতেই পারে। ডিম খেলে স্বাস্থ্যহানি হবে - এই সব আশঙ্কা দূরে সরিয়ে রেখে নিশ্চিন্তে ডিম খান।
আর, হ্যাঁ কুসুম সহযোগে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে