জানেন কী কোন খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও ওজন কম রাখে?
যাঁদের ওজন খুব বেশি তাঁদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাটাও খুব কম
- Total Shares
মনে আছে আপনার এক সহকর্মী যাঁর সর্দি জ্বর হয়েছিল তাঁর সঙ্গে করমর্দন করার পর, পরের দিন আপনার জ্বর এলো? আপনি ও আপনার এক বন্ধ হয়তো একটা শপিং মলে গেছেন একসঙ্গে শপিং মলের অনন্য আর এক প্রান্তে কেউ হয়তো হাঁচি দিলেন সেই হাঁচির জীবাণু আপনাকে অসুস্থ করে দিলো কিন্তু আপনার বন্ধ যে ওই একই জায়গায় আপনার সঙ্গে ছিল তাঁর কিছুই হল না।
তাহলে কী আপনার কোনও সমস্যা আছে? তাহলে কী আপনি অসুস্থ? এর একটা সহজ উত্তর হল আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব একটা ভালো না। যাঁর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত ভালো হবে ততই বাইরের জীবাণু তাঁকে কম কাবু করবে।
আর এই মরশুমে অসুস্থ হয়ে পরার প্রবণতাটা আরও বেড়ে যায়। প্রচন্ড গরম ও ব্যাপসা আবহাওয়া খুব সহজেই আমাদের অসুস্থ করে। তাই এই মরশুমের বিভিন্ন জীবাণুর হাত থেকে নিজেকে কী ভাবে বাঁচিয়ে রাখা যেতে পারে সেটা জেনে নেওয়া একান্ত প্রয়োজনীয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক কী? আমরা এটা অনুভবও করতে পারি না কিংবা চোখে দেখতেও পাইনা। নারী টিপে যেমন অসুখ বোঝা যায় বা শরীরের তাপ মাপা যায় রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তা করা যায় না। চোখে দেখতে না পেলেও আমাদের শরীরের এই ক্ষমতাটি কিন্তু সর্বক্ষণ বিভিন্ন জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে আমাদের সুস্থ রাখে।
সহজ করে বলতে হলে বলা যেতে পারে আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের শরীর ও মনকে প্রত্যেকদিনের চাপ সহ্য করতে সহায়তা করে এবং শরীরকে বিভিন্ন ভারসাম্যহীনতা ও রোগ থেকে দূরে রাখে।
আসলে বাইরের সমস্ত জীবাণু, অসুখবিসুক এবং সংক্রমণ থেকে আমাদের শরীরকে বাঁচায়।
মানুষের শরীরে নখের যেমন ধার হয় ঠিক তেমন নখ খুব শক্তও হয়। তাই নিঃসন্দেহে আমরা সবাই চাইবো যে আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতাও নখের মতোই শক্তিশালী হয়। তাই নিয়মিত জীবনযাপন পাশাপাশি ঠিকঠাক ও পুষ্টিকর খাবারদাবার খেলে শোর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে।
পুষ্টিকর খাবারের কোনও বিকল্প হয় না। সংবাদ মাধমেও এখন পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া নিয়ে প্রচার আলোচনার মাধ্যমে আমরা দেখেছি ভিটামিন সি আমাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আমলকি তথা অন্যান্য টক জাতীয় খাবারদাবার রজার সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতাও বাড়ায়।
কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে যে শুধুমাত্র ভিটামিন সি বিভিন্ন জীবাণুর সঙ্গে একা লড়তে পারে না। ভিটামিন সি ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টিরও প্রয়োজন আছে।
তাই প্রয়োজন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস ও অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজও।
গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন ডি- ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সূর্যের আলো থেকে আমাদের শরীর ভিটামিন ডি পায়। এছাড়াও দস্তা এবং সেলেনিউমও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
দস্তা সর্দি-জ্বর থেকে শরীরকে দূরে রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে যে যাঁদের শরীর সেলেনিয়ামের অভাব থাকে তাঁদের বিভিন্ন সংক্রমণ হতে পারে এবং তা সারতেও দীর্ঘ সময় লাগে।
শরীরের কোষে যদি সেলেনিয়ামের অভাব হয় তাহলে জীবাণু খুব সহজেই শরীরকে আক্রমণ করে এবং তা শরীরের মধ্যে বাসা বেঁধে ক্রমশ আরও বাড়তে থাকে। তাই যথেষ্ট পরিমাণে রসুন, পেঁয়াজ, কেলপ (বড় ধরনের সামুদ্রিক শ্যাওলা গাছ), সামুদ্রিক খাবার ও শস্য খান। ডিম, বাদাম, বিভিন্ন ধরণের বীজ জাতীয় খাবার ও মটরশুঁটি জাতীয় খাবার খান যাতে দস্তার পরিমাণ অনেক বেশি।
ওজনের দিকে নজর দিন। শরীরের ওজন দরকারের চেয়ে এক কিলোগ্রামও যদি বেড়ে যায় তাহলে শরীরের যে টিসুর ওজনও বাড়বে এককিলোগ্রাম। তাই শরীরকে তখন সেই বাড়তি ওজনের রক্ষা করার জন্য বাড়তি চাপও নিতে হয়। তাই যাঁদের ওজন খুব বেশি তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটাও খুব কম। যাঁদের ওজন বেশি তাঁদের শরীরে লিম্ফোসাইটের পরিমাণও কমে যায়। লিম্ফোসাইট হল একধরণের শ্বেত রক্ত কণিকা যা সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করে।
তাহলে ভালো খবরটা কী? তাই ওজন কমে গেলে লিম্ফ্যাটিকের পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত হয় এবং তা আরও ভালোভাবে নিজের কাজ করতে পারে। খাবারের দিকেও নজর দিন কারণ ঠিকঠাক ও পুষ্টিকর খাবার না খেলে জীবাণু ও বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে এরা লড়াই করতে পারে না। ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
যাঁরা মদ্যপান করেন তাঁরা পরিমিত মদ্যপান করুন। পরিমিত মদ্যপান করলে যেমন শরীরে আইজিএ -র মাত্রা বৃদ্ধি পায় তেমন ভাবেই অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসে। অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে দুভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে। শরীরের সার্বিক পুষ্টির অভাব ঘটে যার ফলে যে সব পুষ্টিকর উপাদান রোগের সঙ্গে লড়াই করে সেগুলোর অভাব ঘটে। পাশাপাশি শ্বেত রক্ত কণিকা বাইরের সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করে। তাই অতিরিক্ত মদ্যপান করলে শরীরের শ্বেত রক্ত কণিকা দুর্বল হয়ে পড়ে যার ফল সংক্রমণের সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারে না।
তাই অতিরিক্ত মদ্যপান করার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসতে পারে। পরিমিত মদ্যপান করুন।
নিয়মিত ব্যামের করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে নিয়মিত ব্যাম করলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম ভালো থাকে, রক্ত চলাচলের উন্নতি হয়, পেশী ও বিভিন্ন অঙ্গ থেকে ক্ষতিকর পদার্থ শরীর থেকে বের করে দিতে সহায়তা করে, কিডনি ও অন্তঃস্রাবী সিস্টেম (endocrine system)-কে ভালো রাখে। শরীর থেকে সংক্রমণ দূর করে ও শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে ও তা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছতে সহায়তা করে। রক্তের অ্যান্টিবডি থাকে যা সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করতে শরীরকে সহায়তা করে।
এই নিয়মগুলো পালন করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক থাকে।
যতটা সম্ভব শরীরকে সূর্যের আলো দিন। সূর্যের আলো থেকে শুধুমাত্র ভিটামিন ডি পাওয়ার জন্যই সূর্যে বেরোবেন এমনটা নয়।
আমাদের ত্বকে ইন্টারলিউকিন-১ (আইএল-১) বলে একটি পদার্থ থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভীষণ ভাবে সহায়তা করে। দিনের আলোয় ত্বকের ভেতরে থাকা আইএল-১ উত্তেজিত হয়।
তাই প্রাতভ্রমণ করলে বিভিন্ন রোগের থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন