জলের আকাল মেটাতে কেন্দ্রের টাকা সুপরিকল্পিত ভাবে ব্যয় করতে হবে
চিন্তা বিষয় হল আগের চেয়ে বৃষ্টির পরিমাণ আরও কমে যাচ্ছে
- Total Shares
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা যেমন পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বীরভূমে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে না, বৃষ্টি হলেও তা যৎসামান্য হচ্ছে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বীরভূমের মতো জেলাগুলিতে বছরের প্রায় বেশির ভাগ সময়ই খরার প্রকোপ চলে। এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে, যেমন গত কয়েক বছরে সার্বিক ভাবে জলবায়ুর যে দ্রুত পরিবর্তন ঘটে চলেছে সেটা তো আমরা সবাই জানি কিন্তু তার সঙ্গে রয়েছে নির্দিষ্ট সেই জায়গার কিছু বিশেষত্ব।
একটু বুঝিতে বলি। ধরুন বাঁকুড়া জেলায় যদি প্রচুর পরিমাণেও বৃষ্টিপাত হয়ে তাহলেও কিন্তু তেমন একটা স্বস্তি মিলবে না ওখানকার মানুষের। বাঁকুড়ার জমি বেশ ঢালু বলে জমি জল ধরে রাখতে পারে না। পাশাপাশি এই সব অঞ্চলগুলো অসম্ভব গরম বলে এখানে জল খুব দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়।
ঠিক একই ভাবে পুরুলিয়াতেও সারা বছর অসহ্য গরম ও খরার ভাবটাই বেশি থাকে। গাছ বা সবুজ জমি তেমন একটা চোখে পড়ে না ওখানে। এমনিতেও এই সব জেলাগুলি বঙ্গোপসাগরের থেকে বেশি দূরে অবস্থিত বলে এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও অনেক কম। পর্যাপ্ত বৃষ্টি এবং জলের এ ভাবেই এইসব অঞ্চলগুলো খুব শুকনো।
চিন্তা বিষয় হল ওই অঞ্চলগুলোতে আগেও বৃষ্টির পরিমাণ কম ছিল কিন্তু ক্রমশ দেখা যাচ্ছে যে বিভিন্ন কারণের ফলে সারা বছরই বৃষ্টির পরিমাণ ক্রমশ কমছে এর ফলে ওখানকার মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, চাষবাসের ক্ষতি হচ্ছে এবং জলের অভাবে ওখানকার মানুষকে নাকাল হতে হচ্ছে। এত গরম সঙ্গে অনাবৃষ্টির ফলে যেমন চাষাবাদের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে ঠিক তেমন ভাবেই ওখানকার মানুষের রোগভোগও হয় অনেক বেশি। এমনকি ওখানকার মানুষ নিজেদের বাড়িতে পরিষ্কার পানীয় জলও পান না। বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার সহায়তায় রাজ্য সরকারও এই জেলাগুলির অবস্থার উন্নতির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে থাকে।
খরাপ্রবণ এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে এর আগেও ওখানকার নদীর জল ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাষের জন্য এবং ওখানকার মানুষের জলের অভাব মেটাবার জন্য বিভিন্ন ধরণের কাজ হয়েছে ও হচ্ছে।
পুরুলিয়ায় বৃষ্টি কম হওয়ার ফলে ওখানে একধরণের বিষ ফল গাছ এবং কাঁটা জাতীয় গাছ জন্মায়। এই জাতীয় গাছের জন্মাতে বা বেড়ে উঠতে খুব বেশি জল লাগে না।
এই সব অঞ্চলে জলের অভাব মেটাতে ও বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা হয় যাতে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটান যায়। তাই সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিয়েছে। এই টাকার কিছুটা অংশ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যও ব্যবহার করা হবে, যেমন কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টির সৃষ্টি করে এখানকার চাষাবাদের কিছুটা সুবিধা করার চেষ্টা করার পরিকল্পনা রয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের যে সব অঞ্চলে সারাবছর খরা পরিস্থিতি থাকে এখন সে সব জায়গায় এ ভাবেই চাষাবাদ করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সরকার এই খরা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন সময় প্রচুর টাকা দিয়ে থাকে তা যদি ঠিকঠাক খাতে সুপরিকল্পিত ভাবে ব্যবহার করা হয় তাহলে নিঃসন্দেহে পরিস্থিতি উন্নতি ঘটবে। এর ফলে ওখানকার বিস্তীর্ণ জায়গার মানুষ জলের আকাল থেকে মুক্তি পাবেন।