প্রশিক্ষিত আয়া ও পেশাদার ক্রেশের অভাবে সন্তানের স্বার্থে চাকরি ছাড়ছেন বহু মহিলা
মাতৃত্বের পরেও যাতে মহিলারা আরও কিছুদিন ছুটি পায় সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে
- Total Shares
চাকুরীজীবী ভারতীয় মায়েদের মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হলে তাঁদের সামনে একটা লক্ষ টাকার প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়। সেটা হল তিনি সন্তানকে এমন কোন জায়গায় রাখবেন যেখানে শিশুদের দেখাশোনা করা হয় (অর্থাৎ ডে-কেয়ার) নাকি সন্তানকে দেখাশোনা করার জন্য একজন আয়া রাখবেন?
শহুরে দরিদ্রদের সংখ্যা বাড়ছে ততই বহু আয়া গ্রাম থেকে শহরে চলে আসছেন। এই শহুরে আয়াদের মাস মাইনে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো হয়। আয়ার কাজ করার জন্য তাঁদের একমাত্র যোগ্যতা হল যে তাঁরা নিজেরাও কারও মা। আয়ারা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে কাজ পান। আয়া এবং যে পরিবার আয়াকে কাজে নিয়োগ করছে তাঁদের কাজের শর্ত ঠিক করে এই সংস্থা। শর্তগুলির মধ্যে অন্যতম হল যিনি আয়াকে কাজে নিয়োগ করছেন তিনি যদি আয়ার কাজে সন্তুষ্ট না হন তা হলে সংস্থাকে দেওয়া অগ্রিম নেওয়া অর্থ ফেরত চাইতে পারবেন না।
প্রশিক্ষণের অভাবের অনেক ক্ষেত্রে আয়ারা শিশুটির ভালো মতো খেয়াল রাখতে পারে না এর ফলে মায়েদের বেশ দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়।
চাকুরীজীবি মায়েরা বিকল্প উপায় হিসেবে শিশুকে অনেক সময় ডে-কেয়ার বা ক্রেশেও রাখেন
চাকুরীজীবী মায়েরা বিকল্প উপায় হিসেবে শিশুকে অনেক সময় ডে-কেয়ার বা ক্রেশেও রাখেন। যদিও বহু সংস্থায় নিজেদের ক্রেশ নেই বলে মায়েদের কাজে যাওয়ার আগে সন্তানকে কোনও ডে-কেয়ার সেন্টারে রাখতে হয়। বেশিরভাগ ডে-কেয়ার সেন্টারে শিশুদের দেখাশোনা করার জন্য যতজন লোকজনের প্রয়োজন হয় তার চেয়ে অনেক কম লোক থাকে বলে সব শিশুর দিকে নজর করা সম্ভব হয় না। তাই সুযোগের অভাবে সন্তানের দেখাশোনা করার জন্য মায়েরা নিজেদের পেশা ছাড়তে বাধ্য হন। ব্যাঙ্গালোরের একটি পোর্টাল-বাগারিয়ার করা একটি সমীক্ষা অনুসারে ভালো ডে-কেয়ারের অভাবে মোটামুটি ৩৮ শতাংশ ভারতীয় মহিলা চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। সরকারের এই বিষয় নজর দেওয়া উচিত কারণ সংখ্যাটা বেশ বড়।
আগেকার যৌথ পরিবার ব্যবস্থা চাকুরীজীবী মায়েদের পক্ষে অত্যন্ত সুবিধাজনক ছিল। তবে যৌথ পরিবার ব্যবস্থা শেষ হয়ে যাওয়ার পর এবং ছোট পরিবারের প্রচলনের পর সন্তান জন্মাবার পরে একজন মহিলার পক্ষে চাকরি চালিয়ে যাওয়াটা খুব কঠিন হয়ে ওঠে।
আগেকার যৌথ পরিবার ব্যবস্থা চাকুরীজীবি মায়েদের পক্ষে অত্যন্ত সুবিধাজনক ছিল
পুরো পরিস্থিতিটা খুব দুঃখজনক কারণ সন্তানকে বড় করে তোলার পুরো দায়টাই তখন মায়ের কাঁধে এসে পড়ে। সন্তান বড় করে তোলার ব্যাপারে নর্ডিক দেশগুলির থেকে আমাদের দেশকে শিক্ষা নিতে হবে। উপমাস্বরূপ ফিনল্যান্ডে শিশু জন্মাবার পর বাবাকে আট সপ্তাহ সবেতন ছুটি দেওয়া হয় এবং শিশুর তিন বছর বয়স হলে তাকে দেখাশোনা করার জন্য বাবা এবং মা উভয়েই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ছুটি নিতে পারেন যাতে তাঁরা অফিসের কাজও সামলাতে পারেন আবার বাড়িতে সন্তানের দিকেও নজর দিতে পারেন। আবার নরওয়েতে মায়ের উপার্জনের উপর নির্ভর করে বাবা দশ সপ্তাহ পর্যন্ত ছুটি নিতে পারে।
এ ছাড়াও বাবা-মা উভয়ই বেতন সহ ৪৬ সপ্তাহের ছুটি পেতে পারে অথবা বেতনের ৮০ শতাংশ সহ ৫৬ সপ্তাহের ছুটি নিতে পারেন। আইসল্যান্ডে বাবা-মাকে মোট ন'মাসের ছুটি দেওয়া হয়। বাবা এবং মায়ের জন্য তিন মাস করে ছয় মাসের ছুটি এবং নিজেদের সুবিধা মতো বাবা ও মা বাকি তিন মাস ভাগ করে ছুটি নিতে পারবে। সুইডেনে বাবা-মা উভয় তাঁদের বেতনের ৮০ শতাংশ নিয়ে ৪৮০ দিনের ছুটি নিতে পারেন।
বাবা-মা উভয়ই বেতন সহ ৪৬ সপ্তাহের ছুটি পেতে পারে
সরকারের এমন একটি নিয়মের প্রণয়ন করা উচিত যাতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজস্ব ডে-কেয়ার বা ক্রেশের ব্যবস্থা থাকে। সাম্প্রতিককালে এমন বহু সংস্থা আছে যারা এই ব্যবস্থা শুরু করেছে। তবে তার সংখ্যা খুব কম। আমাদের দেশের বেশিরভাগ সংস্থায় এই ব্যবস্থাটি নেই। সরকারেরও এই বিষয় তৎপর হওয়া উচিত। যে সব সংস্থার সঙ্গে আয়ারা যুক্ত থাকে সেই সব সংস্থা যাতে আয়াদের সম্বন্ধে ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে তারপর তাদের নিয়োগ করে সেদিকে সরকারকে নজরদারি করতে হবে। সংস্থাগুলি যে পরিমাণে অর্থ নেয়ে তার বিনিময় আয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।
তাই তাই কোনও কোম্পানির কর্মীর অভাব রুখতে মাতৃত্বের পরেও যাতে মহিলারা আরও কিছুদিন ছুটি পেতে পারে সেদিকে দেশের সরকারের নজর দেওয়া উচিত।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন