লাইভের মাধ্যমে বন্ধুদের নিজের জীবনের লড়াই ও হেরে যাওয়ার যন্ত্রণাকে ‘সাক্ষী’ রাখতে চেয়েছিল
তিনি মৃত্যুর সময় বিদায় বার্তা দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, যা হয়তো তাঁকে স্বস্তি দিয়েছিল
- Total Shares
সম্প্রতি খবরের কাগজে পড়লাম শিলিগুড়ির ৪৩ বছর বয়সী অরিন্দম দত্ত ফেসবুক লাইভ চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। খবরে জেনেছি যে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি অসুস্থতা ও বিভিন্ন ব্যক্তিগত কারণে মানিসক অবসাদে ভুগছিলেন।
আগে ফেসবুক বা অন্য কোনও সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না ঠিকই, কিন্তু যিনি আত্মহত্যা করতে চলেছেন, তিনি মৃত্যুর সময় যাতে তাঁর কাছের মানুষ কিংবা বন্ধুবান্ধবদের কাছাকাছি থেকে তাঁদের জানিয়ে যেতেন যে তিনি ব্যথিত, তাই তিনি মৃত্যুর পথ বেছে নিচ্ছেন। জানানোর এই আকুতিটা সব সময়ই থাকত।
সৌজন্য: ফেসবুক
শিলিগুড়ির ঘটনাটি পড়ে যেমনটা জানা যাচ্ছে যে, অরিন্দম দত্তর বন্ধুরা যখন ঘটনাটি ফেসবুক লাইভে নজর করেন, তখন তাঁরা অরিন্দমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। তাঁকে ফোন করেন, কিন্তু কেউই অরিন্দমকে ফোনে পাননি।
এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে চূড়ান্ত মানসিক চাপ থেকেই তিনি এমন একটা কাজ করেছেন এবং পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার সময় তিনি তাঁর কষ্টটা অন্যদের বোঝাবার জন্য ফেসবুক লাইভকেই বেছে নিয়েছেন। এটি এমন একটি মাধ্যম যেখানে তাঁকে কেউ বাধা দিতে পারবেন না, আবার সবাই তাঁর শেষ পরিণতিটা দেখতেও পাবেন। আমার মনে হয় আগেকার দিনেও যদি এমন কোনও উপায় থাকত, তা হলে হয়তো মানুষ তখনও এই উপায়টা বেছে নিতেন।
আত্মহত্যা দু'ধরণের হয়। একটা হল প্যারা সুইসাইড। এমন অনেকেই আছেন যাঁরা অন্যদের মনোযোগ নিজের দিকে ঘোরাতে আগ্রহী, ইংরেজিতে তাঁদের অ্যাটেনশন সিকার বলা হয়। এঁদের আত্মহত্যা করার কোনও পরিস্থিতি তৈরি না হলেও, তাঁরা নিজেদের কষ্ট দিয়ে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান। তবে তাঁরাও অবশ্য জীবনে কোনও বিশেষ ঘটনার জেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারেন।
শিলিগুড়ির অরিন্দম দত্ত (সৌজন্য: ফেসবুক)
আর অন্য কারণটি হল, একজন ব্যক্তি মৃত্যুর জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকেন বা সে বিষয়ে যদি বদ্ধপরিকর থাকেন। এই দুই ক্ষেত্রেই যাঁরা মৃত্যুর পথ বেছে নিচ্ছেন তাঁরা চাইছেন যে তাঁদের মৃত্যুর কেউ সাক্ষী থাকুক। তাই অনেক সময় তিনি এমন ভাবে আত্মহত্যা করেন তাঁর বাড়ির লোক বা নিকট আত্মীয় সে ব্যাপারে কোনও কিছু আঁচ করতে না পারেন এবং তাঁকে যাতে কেউ বাধা দিতে না পারেন।
তাই ফেসবুক বা এই ধরণের সোশ্যাল মিডিয়া একজনের এই দুটো বিরোধী ইচ্ছেকে পূরণ করার উপায় করে দিচ্ছে।
একজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করার সময় যেমন তাঁর শেষ ইচ্ছা বা তাঁর আত্মহত্যা করার কারণ একটি সুইসাইড নোটের লিখে যান, তেমন ভাবেই ফেসবুক লাইভ বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় তা সম্প্রচারের সুযোগ তাঁরা নিতে পারেন। তিনি মৃত্যুর সময় যে শেষ বিদায় বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন, সেটা হয়তো তাঁকে স্বস্তি দিয়েছিল।