সন্তানের মানসিক বিকাশের জন্য তার সঙ্গে সময় কাটান
নিজের সন্তানকে তার সমবয়সী অন্য শিশুটির সঙ্গে কখনও তুলনা করবেন না
- Total Shares
কিছু কী বুঝতে পারছেন? আপনার সন্তান কিছু বলতে চাইছে? সন্তানের সঙ্গে মায়ের সম্পর্কটা খুব নিবিড়। সন্তানের ব্যাপারে মায়ের একটা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কাজ করে। মা খুব সহজেই বুঝতে পারেন তাঁর সন্তান তাঁকে কী বলার চেষ্টা করছে যেটা হয়তো সে আর কেউ বুঝতে পারবে না।
সন্তানের বেড়ে ওঠার সময় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি বোঝেন যে আপনার সন্তান আপনাকে কী বলতে চাইছে তা হলে আপনি তাকে ঠিক পথে চালিত করতে পারবেন।
যদিও একজন ব্যক্তি অন্য আর একজনের থেকে একদম আলাদা। তাই একজন অভিভাবকে সেটা মাথায় রেখে সন্তানের ইঙ্গিতগুলো বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
সন্তানের মন বুঝতে হবে। তার প্রত্যেকদিনের কার্য-কলাপের দিকে নজর দিতে হবে তা হলেই আপনার সন্তান কী পছন্দ করছে, কোনটাই বা সে অপছন্দ করেছে সবকিছুই বুঝতে পারবেন। তার হাসি-কান্নার কারণও আপনি বুঝতে পারবেন কিংবা আপনার শিশুকে কী প্রভাবিত করছে কী বা তাকে দুঃখ দিচ্ছে তাও আপনি সহজেই ধরতে পারবেন। সন্তানের ইঙ্গিতগুলো বোঝার চেষ্টা করুন।
যখন সে ঘুমোচ্ছে বা খাচ্ছে অথবা খেলা করছে তখন সেদিকে নজর দিন তা হলেই আপনি ওকে বুঝতে পারবেন। কোন কাজগুলো করতে ওর সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে? ও কি খুব সহজেই নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছে, নাকি মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগছে? সব বাচ্চাদের মধ্যে এই ব্যাপারগুলো থাকে তাই আপনার সন্তান ব্যতিক্রম নয়।
সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন। আপনার দেখা দেখি বিভিন্ন কাজ ও বাচনভঙ্গি লক্ষ্য করে কত দ্রুত সেটা ও নকল করতে পারে দেখলে অবাক হবেন। মুখের ও শরীরের বিভিন্ন ভাবভঙ্গির একটা বড় ভূমিকা এখানে রয়েছে। ওকে নানা রকম প্রশ্ন করুন, কারণ প্রশ্নের মধ্য দিয়ে শিশু নিজেকে মেলে ধরে আপনার সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলতে পারবে। ওরা সবসময় সুরক্ষিত থাকতে চায় তাই ওদের কথা শুনলে ওরা মনে করে যে আপনি ওর কথা শুনবেন আর দরকারে ওকে সাহায্য করবেন।
আগেই যেমন বলেছি প্রত্যেকটি শিশু তার নিজেস্ব গতিতে নতুন জিনিস শেখে, কেউ খুব তাড়াতাড়ি শিখে ফেলে আবার কারোও একটু সময় লাগে। সন্তানকে তার সমবয়সী অন্য শিশুটির সঙ্গে কখনও তুলনা করবেন না। তাকে আত্ম্যবিস্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। শিশুর ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠার পেছনে তার নিজের প্রতি সে ঠিক কতটা ইতিবাচক ধারণা পোষণ করে এবং তার আত্মবিশ্বাস ঠিক কতখানি গভীর তার একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। এর ফলে বেড়ে ওঠার সময় তার মধ্যে একটা সুস্থ ব্যক্তিত্ব জন্ম নেয় এবং সে ঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। বাবা-মা ও সন্তানদের মধ্যে একটা সুস্থ সম্পর্ক থাকলেই সেই শিশুটি যেমন অভিভাবক ও নিজেকে সম্মান করবে তেমনই সে অন্যদেরও সম্মান করতে শিখবে।
বেড়ে ওঠার সময় শিশু তার অভিভাবকের সঙ্গে সময় কাটাবার জন্য উৎসুক হয় থাকে। তখন সে নিজেকে কাঙ্ক্ষিত বলে মনে করে। তাই সময় বার করে নিয়মিত সন্তানের সঙ্গে খেলাধুলা করুন। একে অপরকে ও পরিবারকে সময় দিন। আপনি যদি একক ভাবে সন্তানকে বড় করেন তাহলে মাঝে মধ্যেই নিজের বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবকে আসতে বলুন ও আপনার সন্তানের সঙ্গে কিছুক্ষন খেলাধুলাে করতে বলুন।
আপনার সন্তান স্কুলে যেতে আরম্ভ করলে তার স্বভাবে কোনও রকম পরিবর্তন হচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখুন।
আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন না যে স্কুলে আপনার সন্তান সমবয়সী অন্য বাচ্চাদের কাছে ঠাট্টা-ইয়ার্কির খোরাক হয়ে উঠেছে, কিন্তু আপনার সন্তান আপনাকে কিছু বলতে পারছে না। পড়াশোনা বা শারীরিক কোনও সমস্যা হলে ঠিক যে ভাবে সমাধান করেন সে ভাবেই এই সামাজিক সমস্যাটিরও সমাধান করতে হবে।
আপনার সন্তানের পড়াশোনা ও অন্যান্য কাজে মনোযোগের অভাব ঘটছে কি না কিংবা তার অটিজম বা কোনও ধরণের মানসিক চাঞ্চল্য আছে কি না সে দিকেও বিশেষ নজর দিন। সন্তানের দুষ্টুমি খুব স্বাভাবিক মনে হলেও তা কিন্তু অন্য কোনও সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। শিশু থেকে কৈশোর ও তারপর একজন সম্পূর্ণ ব্যক্তি হয় ওঠার পথে অনেকেই বাধার সম্মুখীন হন। তাই শিশুর সুস্থ ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। আপনার সন্তান কোন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে সে দিকে নজর রাখুন। একটি শিশু বিশেষ একটা পরিস্থিতির সঙ্গে ঠিক কেমন ভাবে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে সেটা তার সে আগে যা শিখেছে তার উপর নির্ভর করে। আর এটাই তার সিদ্ধান্ত, বিভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া, তার কার্যকলাপ ও বুদ্ধিমত্তার উপর প্রভাব ফেলে।
আমাদের সন্তান বড় গাছের ছোট বীজের মতো। তাদের যত্ন করতে হবে ও তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদের মতো করে নিয়ে বড় হয়ে উঠতে দিতে হবে কিন্তু তারা যেন ঠিক-ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। পাশাপাশি বাবা-মা পাশে না থাকলে নিজেদের কাজ করা ও নিজেদের মতামত প্রকাশ করাও তাদের শিখতে হবে।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন