কাজের জায়গায় মহিলারা মহিলাদের সঙ্গে কেন মিলেমিশে চলতে পারেন না?
কাজের জায়গায় মহিলারা ব্যক্তিগত সমস্যাগুলোকে অনেক সময় বেশি প্রাধান্য দিয়ে ফেলেন
- Total Shares
পুরুষরা অনেক সময় একটা কথা বলে থাকেন, তাঁরা বলেন যে, কাজের জায়গায় একজন মহিলা অপর মহিলার সঙ্গে ঠিক মানিয়ে চলতে পারেন না। আবার এমনও দেখা গেছে যে একজন উচ্চ পদস্থ মহিলা অনেক সময়ই তার নিজেদের আবেগকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না, কিংবা তাঁর মতো একই পদে থাকা আর একজন মহিলার সঙ্গে তেমন সদ্ভাবের অভাব। তাঁরা অনেক সময় একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারকে কর্মস্থলে প্রাধান্য দিয়ে ফেলেন।
কাজের জায়গায় অনেক সময় পুরুষরা যখন মহিলাদের ঝগড়াটে বলেন কিংবা কারও প্রগলভতা দেখলে বা কোনও মহিলা সুন্দরী হলে বসের সঙ্গে তাঁর ‘সম্পর্ক’ রয়েছে, এইসব বলে হাসিঠাট্টা করা হত। আমি এসব দেখেশুনে অনেক সময় সহ্য করতে না পেরে তাদের সঙ্গে অনেকবার অযথাই বিবাদে জড়িয়েছি।
কী অসম্মানজনক কথাবার্তা! সবসময় একটা কথা মনে হয়েছে যে, বাইরের জগতে এত অসম্মান সহ্য করে যে মহিলারা নিজেদের পেশার জায়গায় অনেক উঁচু পদ অধিকার করে আছেন তাঁরা নিশ্চয়ই নিজেরাও কোনও একসময় এই ভাবে পুরুষদের নানা কটূক্তির শিকার হয়েছেন। তা হলে এঁরা সবাই এক হয়ে কমন একটা গোষ্ঠী কেন তৈরি করেন না যেখানে এঁরা হবেন বাকি মহিলাদের জন্য আদর্শ ও পথপ্রদর্শক?
বাস্তবে আমি এমনটা কখনও হতে দেখিনি। অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি যে যাতে নিজের দামটা এতটুকু কম না হয় সেই জন্য অনেক মহিলা বস অদক্ষ মহিলা কর্মীদের কাজে নিয়োগ করেন। কোনও কাজের জন্য যোগ্য ও দক্ষ কাউকে নিয়োগ করাটা কী তাহলে ভুল?
পুরুষদের থেকে মহিলাদের কয়েকটা শিক্ষা নেয়া উচিত
আর ঠিক এই ভাবেই নিচু তলার কর্মীরা কোনও উঁচু তলার কর্মীর বিরুদ্ধে দলবাজি করে। অজান্তেই এই মহিলা বস নিজেকে তাঁর নিচুতলার কর্মীদের থেকে অনেকটা দূরত্ব বাড়িয়ে ফেলেন, তারপর কোনও সমস্যা হলে দোষ পড়ে তাঁর নীচের তোলার কর্মীদের উপর। যদিও আমি এই বিতর্কটির দুপক্ষেই আছি। তাহলে কি সমস্যার মূলে মহিলারা, নাকি বদলে যাওয়াটাই মহিলাদের মূলে সমস্যা? দু'টোই সত্যি। অনেক লড়াই করার পর আমরা আমাদের সাফল্য ও সামাজিক প্রতিপত্তি পেয়েছি। বারবার তাঁরা চেষ্টা করেছে সমাজ যেন তাদের কোন তকমা দিয়ে বিচার না করে। কিন্তু মহিলারা যদি তাঁদের নিজের কথা ও নিজের উন্নতির কথা ভাবেন তাহলে অন্যদের কাছে সেটা খুব অদ্ভুত ঠেকে। মহিলাদের প্রতি এ হেন মানষিকতার কারণ হল একটা আপাদমস্তক পিতৃতান্ত্রিক সমাজ, এমনটাই মনে করছেন নৃতত্ত্ব-সমাজ বিজ্ঞানীরা।
কিন্তু দরকারে একজন মহিলা আর এখন মহিলার দিকে সাহায্যের হাত কেন বাড়িয়ে দেন না? অনেক সময় দেখেছি কম বয়সী মহিলা কর্মীরা ঠিক সময়ের মধ্যে তাঁদের কাজ শেষ করতে পারেননি বলে কিংবা অন্য কোনও কারণে তাঁদের মহিলা বস যখন তাঁদের বকাবকি করেন, তখন তাঁরা তাঁদের মহিলা বসকে ডাইনি বলেন। যদিও পুরুষ বসদের প্রতি প্রতিক্রিয়াটা একটু আলাদা।
কোনও দিন হয়ত আমিও যখন একটু টেরা চোখে কম্পিউটারের দিকে তাকিয়েছিলাম আমাকেও হয়ত আমার সহকর্মীরা একটু কঠোর ভেবেছিলেন। কিন্তু তাঁরা এটা জানতেন না যে সময়ের অভাবে আমি একটা চশমা কিনতে পারছিনা বলে অমন তির্যক ভাবে কম্পিউটারে পড়ার চেষ্টা করছিলাম। আমি যখন আমার কোনও সহকর্মীকে কাজের জন্য চাপ দিতাম, তখন তারা অনেকেই আমাকে খুব রাগী বলে মনে করতেন। যদিও কাউকে তদ্বির করা, কাউকে প্রভাবিত করা এবং তাঁকে বোঝান আমার কাজেরই অঙ্গ। পুরুষরা হয়ত বলবেন নেটওয়ার্কিং। ...তাই না? কিন্তু আমরা মহিলারা কেন এমন ব্যবহার করব?
সম্প্রতি আমি একটা অত্যন্ত বাজে সিনেমা দেখেছিলাম। সিনেমায় ভেগাসের কয়েকটি মেয়ে, যাঁরা নাচ-গান করে থাকে, কী ভাবে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার জন্য যে কোনও পথ অবলম্বন করছে। একে অপরের নিন্দা করা থেকে শুরু করে একে অপরকে নাচের মঞ্চে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া যাতে তিনি অডিশনে জয়ী হতে না পারেন।
কিন্তু এই সব কিছুই মধ্যেও কোথাও যেন একটা অদ্ভুত বন্ধুত্ব ছিল এদের মধ্যে। তাই সিনেমার প্রধান চরিত্র বলেন যে, "আমি যদি জিততে চাই তা হলে আমাকে এমন লোকজনের মাঝে থাকতে হবে যাঁরা আমারই মতো জিততে চান। তাই আমি বুদ্ধিমতী এবং আগ্রহী লোকজনকে নিয়োগ করি, কারণ তাঁরা যখন ভালো কাজ করেন তখন লোকেরা আমাকেই ভালো বলেন।" আসলে তিনি যেটা বলতে চান সেটা হল: নিজের আবেগের কথা ভুলে গিয়ে অন্যদের সফল হতে সাহায্য করুন এবং তার সাফল্যের মধ্যে দিয়ে নিজের সাফল্যকে দেখতে পাবেন। আদর্শবাদীরা যেমন বলে থাকেন -ভরা পেটে বিপ্লব হয়ে না।"
পুরুষদের থেকে মহিলাদের কয়েকটা শিক্ষা নেওয়া উচিত। কারণ পুরুষরা একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নতি করেন, কিন্তু তাঁরা একে অপরকে হিংসা করেন না। কে কতটা ভালো কাজ করল সেটা নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে তাঁরা নিজেরা কী ভাবে উন্নতি করতে পারেন, সেটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামান। কারণ পুরুষরা কোন কিছু নিয়ে বেশি ঘ্যান ঘ্যান করে না।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন