মা তাঁর সন্তানকে প্রকাশ্যে স্তন্য পান করালে তা কী অশোভন?

এইধরণের সেকেলে মনোভাব পরিবর্তন না হলে আমাদের দেশ উন্নত হবে না

 |  3-minute read |   21-07-2018
  • Total Shares

সম্প্রতি টেলিভিশনে একটা বিতর্ক আলোচনা শুনে খুব বিরক্ত বোধ করলাম। কয়েকজন বক্তার মতে প্রকাশ্যে স্তন্য পান করান ঠিক নয়। সেই অনুষ্ঠানে এক সমাজ কর্মী বলেন প্রকাশ্যে স্তন্য পান করানকে তিনি যৌনক্রিয়ার সঙ্গে তুলনা করেন। কথাটার কোনও মানেই হয় না। 

১৯৯১ সালে আমি যখন ম্যাসাচুসেটের কেম্ব্রিজ শহরে থাকতাম তখন ওখানে আমহার্স্ট-এর হ্যাম্পশায়ার কলেজের ওমেন স্টাডিস বিভাগের অধ্যাপিকা বেটসি হার্টম্যান আমাকে একটি প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন  'ডেভেলপমেন্ট  ফ্রম এ গ্রাসরুট পার্সপেক্টিভ' বিষয়টি আমি পড়াতে ইচ্ছুক হবো কি না? কারণ তিনি একটা লম্বা ছুটি নিয়ে কোস্টারিকা যাচ্ছিলেন। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজে বেটসি হার্টম্যানের বিশ্ব জোড়া খ্যাতি। 

তখন আমি দ্বিতীয়বার সন্তানসম্ভবা। প্রস্তাবটি পেয়ে খুব আনন্দিত হয়েছিলাম। আমি ওনাকে বললাম, "আমি নিশ্চয়ই  পড়াব তবে আমি সন্তানসম্ভবা।” উত্তরে তিনি বলেন, "এটা কী কোনও শারীরিক সমস্যা?" আমি বললাম  “একদমই না" এবং পড়াতেও রাজি হলাম। 

প্রতি সপ্তাহে আমি দুটো করে ক্লাস করাতাম। যেহেতু কেম্ব্রিজ থেকে হ্যাম্পশায়ার কলেজ গাড়িতে যেতে লাগত প্রায় দু'ঘন্টা তাই ঠিক হল যে প্রতিটি ক্লাসে আমি দু'ঘন্টা করে পড়াব যার মাঝে একটা ১৫ মিনিটের বিরতি থাকবে। এটাও ঠিক হল যে আমার সন্তান জন্মাবার পর আমি তাকেও আমার সঙ্গে কলেজে নিয়ে আসতে পারব যাতে আমি তাকে স্তন্য পান  করাতে পারি পাশাপাশি যাতে আমার সন্তান আমার সঙ্গেই থাকতে পারে।

নির্দ্বিধায় কলেজ কতৃপক্ষ আমার সব কথাই মেনে নিলো। ১৩-ই নভেম্বর আমার ছেলের জন্ম হল আর তার ঠিক দু'সপ্তাহের মধ্যে পড়াশোনার জগতের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটল যখন প্রথম দিন সে আমার সঙ্গে আমার কলেজে গেল।

breastfeeding_072118014122.jpgস্তন্য পান করানো কে হেয় চোখে দেখা উচিত নয়

পোড়ানোর ফাঁকে ক্লাসে বসেই প্রয়োজনে আমার সন্তানকে স্তন্য পান করাতাম। সেই সময়টুকু  ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের মধ্যে গপ্পোগাছা করত। সেই সেমিস্টারটা ওভাবেই কেটে গেল। কলেজে পোড়ানোর নিয়মে কিন্তু কোনও পরিবর্তন ঘটল না। পড়ুয়ারা যখন তাদের পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রজেক্ট আমাকে জমা দিত তখন আমি লক্ষ করলাম যে আমার সন্তানের জন্মের পর ক্লাসের পড়ুয়ারা অনেকখানি উন্নতি করছে।

ভাবলাম পড়ুয়াদের এই উন্নতির কারণ কী হতে পারে? মনে হয় আমার ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা এটা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল যে আমি শুধু তাদের শিক্ষিকা নই আমি একজন মা যার কাছে তার সন্তানের অনেক মূল্য। এই কারণটা ছাড়া ওদের উন্নতির আর কোনও কারণ আছে বলে আমার মনে হল না।

ভারতে কোটি কোটি দিনমজুর মহিলাকর্মী নির্মাণ ভূমিতে কাজ করেন। তাঁরা যে সুবিধাটার থেকে বঞ্চিত আমি সেই সুবিধাটা পেয়েছিলাম। এই ধরণের নির্মাণ ভূমিতে সেসব দিনমজুর মহিলাকর্মীদের ধুলো-বালি ও স্বাস্থ্যের পক্ষ্যে ক্ষতিকর পরিস্থিতিতে নিজেদের সন্তানকে প্রকাশ্যে স্তন্য পান করাতে বাধ্য হন। যদিও নির্মাণ ভূমিতে যেসব মহিলারা কাজ করেন তাঁদের সন্তানদের থাকার একটা জায়গা থাকা বাধ্যতামূলক। প্রয়োজনের যেখানে তাঁরা তাঁদের সন্তানকে স্তন্য পান করতে পারেন।

যাঁরা প্রকাশ্যে স্তন্য পান করানোর বিরোধিতা করেন তাঁদের সকলকে বুঝতে হবে যে এটা মহিলাদের জন্য একটা অতন্ত্য গর্বের বিষয় এবং এই ক্ষমতাটা শুধুই মহিলাদের আছে। যাতে একজন মা সুরক্ষিত ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে তাঁর সন্তানকে স্তন্য পান করাতে পারেন সেদিকে আমাদের সমাজকে নজর দিতে হবে। কারণ এটা মা ও তাঁর সন্তান দুজনের পক্ষেই হিতকর। স্তন্য পান করানকে হেয় চোখে দেখা যেমন উচিত নয় তেমনই এটা মহিলাদের প্রতিবন্ধকতাও নয়। ভারত একটি উন্নত ও আধুনিক দেশ বলে তখনই প্রমাণিত হবে যখন মানুষের এই ধরণের সেকেলে মনোভাবের পরিবর্তন ঘটবে।

লেখাটা ইংরেজিতে পড়ুন

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

POONAM MUTTREJA POONAM MUTTREJA

The author is Executive Director, Population Foundation of India.

Comment