নতুন বছরের অঙ্গীকার: স্বাস্থ্যের খাতিরে কী করবেন না
ওজন কমানো নিয়ে কথা নয়, এবার অন্য আলোচনা
- Total Shares
সকলেই চান ওজন কমাতে। তাই এ ব্যাপারে আমরা খানিকটা সাধারণ জ্ঞান প্রয়োগ করে থাকি আর মেনে চলি কয়েকটা বোকাবোকা এবং অর্থহীন উপদেশ যেগুলোকে বাজারি চমক বলা চলে তাও তা মেনে চলি কারণ ওই সব চমকের পাশে একটা প্রতিশ্রুতিও দেওয়া থাকে, তা হল ফিতেটা বাঁদিকে সরবে।
আপনার কল্পনার বুদবুদ ভেঙে দেওয়ার জন্য আমি দুঃখিত, তবে বাস্তবে সত্যিই তা হয় না। সত্যি কথা বলতে, স্বাস্থ্য ফেরানোর নামে যে সব কথা বলা হয়ে থাকে সেগুলো সত্যি সত্যিই খুব বোকাবোকা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই সব উপদেশ আবার বিপজ্জনকও হতে পারে। উল্টে ওজন কমানোর বদলে কখনও কখনও এমনও হতে পারে যে আপনি যখন রেহাই পেলেন তখন হিতে বিপরীত হয়ে গেছে। ব্যাপারটা একটু পরিষ্কার ভাবে বলি।
বছর যখন শেষ হয়ে যাচ্ছে তখন কয়েকটা পুরোনো বোকাবোকা স্বাস্থোদ্ধারের টিপস পিছনে ঝেড়ে ফেলুন। এমন আরও অনেক সমস্যা থাকলেও এখানে যে চারটে নিয়ে আলোচনা করছি, আমার মনে হয় সেই চারটেই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। আর শেষ হতে চলা বছরের দিকে তাকাব না, এবার ২০১৯ সালের কথা ভাবব। ২০১৯ সাল শুরু হয় একেবারে নতুন প্রাণের উচ্ছ্বাস নিয়ে, আর এই কটা ব্যাপার মেনে চলার চেষ্টা করুন।
দারুচিনি চ্যালেঞ্জ
অতিরিক্ত দারুচিনি খেলে ফুসফুস ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। (সূত্র: উইকিমিডিয়া কমন্স)
কখনও কি এমন ভিডিয়ো দেখেছেন যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা দারুচিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছেন? এর মানে হল চামচে উঁচু করে রাখা শুকনো মশলা খাওয়া।
এই কাজ কখনও করবেন না।
এই মশলটি যেমন স্বাস্থ্যকর তেমনি গরম। তাই এই মশলাটি যখনই খান না কেন, খুব অল্প পরিমাণে খাবেন। যদি বেশি মাত্রায় এই মশলাটি খেয়ে ফেলেন কা হলে খুব বড় সমস্যায় পড়তে পারেন – পালমোনারি অ্যাসপিরেশন, অ্যালার্জি, পালমোনারি ইনফ্লেমেশন এবং এর ফলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে ফুসফুসে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার মতো সত্যিকারের বড় সমস্যায় পড়তে পারেন।
এমনতিতে এই চ্যালেঞ্জটিকে অতি সাধারণ বলে মনে হলেও বাস্তবে মোটেই তা নয়। দারুচিনি এতটাই শুকনো যে মুহূর্তের মধ্যে আপনার মুখের মধ্যে থাকা সমস্ত লালা শুষে নিতে পারে তার ফলে কোনও কিছু গেলার অবস্থাতেই থাকবেন না।
ওয়াইন ও ডিম
একটি ওয়াইন-অ্যান্ড-এগ আমাদের শরীরে অত্যাবশকীয় পুষ্টিগুলির পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে। (ছবি: ইউটিউব স্ত্রিনগ্র্যাব)
খাওয়াদাওয়া নিয়ে নানা ধরনের ভুলভাল ধারনা রয়েছে, তবে এই খাবারের ধারনাটি হল উল্টোদিক থেকে সেরা, মানে ভুলভাল খাবারের প্রতিযোগিতা হলে এই খাবারটিই পুরস্কৃত হবে।
বেশ কিছুদিন ধরেই এই খাবারটির কথা শোনা যাচ্ছে – আমার মনে হয় বেশ কয়েক দশক ধরে শুনছি – এবং এখন আমাদের উচিত, ২০১৮ সাল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ধারনাটিও শেষ করে দেওয়া এবং এই ধারনাটিকে যদি মাটিতে পুঁতে দেওয়া যায় তা হলে এমন গভীরে পুঁতে দিন যেন কোনও দিন বার হতে না পারে।
প্রশ্ন হল ওয়াইন-অ্যান্ড-এগ মানে কি। এর মানে হল প্রাতঃরাশে এবং মধ্যাহ্নভোজে যেন আবশ্যিক ভাবে ডিম থাকে এবং সঙ্গে ওয়াইনও পান করতে হবে। এখনও যদি হুঁশ থাকে তা হলে তার পরে খান খানিকটা মাছ-মাংস এবং সব শেষে প্রচুর পরিমাণে কফি।
এখানে শুধুমাত্র ক্যালরির কথা বলা হচ্ছে না,
এটা শুধু ক্যালরির কথা বলা হচ্ছে না – ক্যালরি কোথা থেকে পাচ্ছেন সেটা বিচার করাও একান্ত বাঞ্ছনীয়। এই ধরনের খাবার খেলে আপনি বহু করম পুষ্টি থেকে নিজেকে বঞ্চিত করছেন এবং খুব সম্ভবত এই ভাবে খেলে আপনার শরীরে জলেরও খুব অভাব ঘটতে পারে।
এই ধরনের খাবার খাওয়ার কথা ভুলেও যেন ভাববেন না।
দুধের কথা
দুধ এড়িয়ে চললে শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেবে। (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)
একটা কথা আজকাল প্রায়ই শোনা যাচ্ছে, তা হল – যদি আপনি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে দুধ খেতে থাকেন তা হলে বিশেষ এক ,ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, সেই সমস্যার নাম হল মিল্ক অ্যালকালি সিন্ড্রোম। এই আশঙ্কায় অনেকেই আজকাল তাঁদের দৈনন্দিন খাবার থেকে দুধ পুরোপুরি বাদ দিয়ে দিচ্ছেন। তবে ঘটনা হল মিল্ক অ্যালকালি সিন্ড্রোম মূলত দেখা যায় দুধ না খেয়ে তার পরিবর্তে প্রচুর পরিমাণে ফুড সাপ্লিমেন্ট খেলে। আমার দুশ্চিন্তার কারণ হল শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব, যেটা হয় মূলত দুধ ও দুধজাত খাবার না খেলে। এটা একটা নতুন ধারা, শুধুমাত্র এই যুক্তিতে যদি দুধ খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেন তা হলে শরীরের ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিতে বাধ্য।
অন্যরা দুধ খাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে বলে আপনি যেন দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেবেন না, তখনই বন্ধ করবেন যখন দেখবেন যে আপনার শরীর আর ল্যাকটোজ সহ্য করতে পারছে না। তবে আপনি যদি একান্ত ভাবেই দুধ খাওয়া ছেড়ে দিতে চান তা হলে আগে থেকে পরিকল্পনা করে নিন কারণ বিনা কারণে যদি কোনও খাবার খাওয়া ছেড়ে দেন তা হলে তার ক্ষতিকর প্রভাব আপনার শরীরের উপরে পড়বে। এর অর্থ, আপনি নিজেই নিজের ক্ষতি করছেন।
জমানো দুধ-হলুদ (আইসড টারমারিক লাতে)
বেশি খরচা করে লাতে না খেয়ে দুধ-হলুদ খান (সূত্র: সঞ্জয় আচার্য/ইউকিমিডিয়া কমন্স)
আমরা জানি যে অধিকন্তু ন দোষায়। কারকিউমিন থাকার জন্য হলুদ হল একটি সুপারফুড। যুগ যুগ ধরেই হলুদ হল আমাদের একান্ত প্রিয় জিনিস – সারা বিশ্বের যত হলুদ উৎপন্ন হয় তার প্রায় ১০০ শতাংশই উৎপন্ন হয় ভারতে এবং ভারতীয়রাই তার ৯০ শতাংশ ব্যবহার করেন।
পরবর্তী কালে অবশ্য পশ্চিমের দেশগুলো এর গুণাগুণ বুঝেছে। তবে আমাদের মতো করে খাওয়া সম্ভব নয় বুঝে তারা নিজেদের মতো করে একটি খাবার বানিয়েছে, তা হল টারমারিক লাতে। যদি চান এই বস্তুটি অন্তত নিজের জন্য বানিয়ে খেতে পারেন।
ঘটনা হল, স্নেহপদার্থ দ্রবীভূত করে ফেলে হলুদ, তাই হলুদ খাওয়া মানেই বেশ খানিকটা করে স্নেহপদার্থ শরীর থেকে কমিয়ে ফেলা, তাই এটি আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো, দুধ মানেই তার মধ্যে তো স্নেহপদার্থ থআকেই, আর দুধ থেকে স্নেহ পদার্থ বেরিয়ে গেলে তাতে আপনারই উপকার।
এতে খানিকটা গোলমরিচও দেওয়া হয়, এতে পিপারাইন থাকে, তার ফলে এটি কারকিউমিন টেনে নেয়। তার উপরে এটি গরম জিনিস, যখন শরীর এটির পরিপাক করে তখনই তা গরম হয়।
অত্যন্ত দামি যে জিনিসটি পশ্চিমী দুনিয়ায় লোকে প্রচুর খরচ করে খায় সেটি মোটেই শরীরের পক্ষে ভালো নয়। তার চেয়ে বরং দুধ-হলুদ খান, সেটি ঢের ভালো।
কী করে বানাবেন? এক কাপ দুধ গরম করুন, তাতে আধ ইঞ্চি মাপের একখণ্ড হলুদ ফেলে দিন এবং সামান্য গোলমরিচ দিন। ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে এটি পান করুন।
সকলকে জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা। ২০১৯ ভালো কাটুক।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে