রমিতের হাত ধরে এ দেশে এল শ্রীলঙ্কার জনপ্রিয় সি-ফুড চেন মিনিস্ট্রি অফ ক্র্যাব
২০১১ সালে পিৎজা এক্সপ্রেসের প্রথম আউটলেটটি এদেশে খোলে যুক্তরাজ্যের পিত্জা চেন
- Total Shares
ভারতী উদ্যোগের সহ-সভাপতি তথা অধিকর্তা রাকেশ মিত্তলের জ্যেষ্ঠ পুত্র রমিত মিত্তল। পারিবারিক ব্যবসায় যোগ না দিয়ে রমিত এমন একটা ব্যবসা বেছে নিয়েছেন যার সঙ্গে তাঁর পারিবারিক ব্যবসার কোনও মিলই নেই। রমিত হয়ত খুব সহজেই তাদের বংশের ব্যবসায় কোনও উচ্চপদ পেতে পারতেন এবং তাঁর চেনা জগতের মধ্যেই থাকতে পারতেন। কিন্তু রমিত তা না করে এমনই একটি পথ বেছে নিলেন যেটা তাঁর পরিবারের কেউ আগে কখনও করেননি। রেস্তোরাঁ ব্যবসাকে বেছেনিলেন তিনি। ৩২ বছর বয়সে নিউ ইয়র্কে আইবিএম-এর চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে তাঁর নিজের রেস্তরাঁ ব্যবসা আরম্ভ করলেন। তিনি তাঁর সংস্থাটির নাম দিলেন 'গুরমে ইনভেস্টমেন্টস'। যদিও প্রথমটায় 'ভারতী ফ্যামিলি অফিস' আর্থিক ভাবে তাঁর উদ্যোগে সাহায্য করেছিল। ২০১১ সালে যুক্তরাজ্যের পিত্জা চেন এই গুরমে ইনভেস্টমেন্টসের পিত্জা এক্সপ্রেসের প্রথম আউটলেটটি খোলে।
পিৎজা এক্সপ্রেসের যাত্রাপথ খুব সুগম ছিল না, কিন্তু মিত্তলের খাদ্যপ্রেম তাঁকে কোনও কিছু থেকে টলাতে পারেনি, কারণ তিনি ছিলেন একজন অমৃতসরি (ওঁর পরিবারের সঙ্গে লুধিয়ানারও জোরদার যোগ ছিল)। তাঁর মধ্যে রয়েছে উদ্ভাবনী ভাবনা এবং নতুন কিছু করার উদ্যম—এখানেই তিনি সকলের চেয়ে আলাদা। শ্রীলঙ্কার শেফ দর্শন মুনিদাসা তাঁর রেস্তেরাঁ চেন 'মিনিস্ট্রি অফ ক্র্যাব'-এর ভারতে আউটলেট খোলার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। রেস্তোরাঁটি প্রথম মুম্বাইতে খোলা হল। শুধু তাই নয় প্রথমদিনেই রেস্তোরাঁটিতে তিল ধরণের জায়গা রইল না। অতিথিরা তারিয়ে তারিয়ে বিখ্যাত শেফের রাঁধা চিংড়ি ও কাঁকড়ার স্বাদ উপভোগ করলেন।
রমিত মিত্তল (ছবি: মেইল টুডে)
খাবার-দাবার নিয়ে এ হেন্ নতুন চিন্তাভাবনাকে প্রায় সবাই স্বাগত জানালেন। তাঁরা মনে করেন যে এ রকম একটি রেস্তোরাঁ, যেখানে অনেক সামুদ্রিক খাবারদাবার পাওয়া যাবে, সেটা মুম্বাই শহরে বেশ ভালোই সাড়া জাগাবে যদি মিত্তাল ভারতীয় মাড কাঁকড়ার জোগান দিয়ে যেতে রাখতে পারেন। "এমন একটা দেশ যেখানে উপকূলবর্তী অঞ্চল প্রায় ৭,০০০ কিমি বিস্তৃত, সেই দেশে নানা ধরনের সি-ফুড ভালো চলতে পারে। দুৰ্ভাগ্যবশত, ভারতীয়রা কোনও দিনই ভালো সি-ফুড খেতে পারেন না, কারণ সবটাই প্রায় চলে যায় আন্তর্জাতিক বাজারে।" বিভিন্ন সংস্থা এই সি-ফুড জনপ্রিয় করার জন্য নানা কাজ করছেন। যেমন সি-ফুড সংস্থা 'ক্যাম্বে টাইগার' নবি মুম্বাইয়ের কাছে একটি জায়গায় কাঁকড়ার চাষ করবে। বিভিন্ন সি-ফুড সংস্থাগুলির বিভিন্ন পদক্ষেপ করছে সি-ফুড উপাদনের জন্য। তাই দেশের রেস্তোরাঁগুলো খুব সহজেই পেয়ে যাবে সি-ফুড।
মিনিস্ট্রি অফ ক্র্যাব চালু করার আগে তিনি শুরু করেছিলেন পিৎজা এক্সপ্রেস। পিৎজা এক্সপ্রেসের সাহায্যে তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে কী ভাবে আসল ব্র্যান্ডের নাম অক্ষুণ্ণও রেখে, ইতালিয়ান খাবারের মৌলিক স্বাদ বজায় রেখে পিৎজায় কী ভাবে ভারতীয় স্বাদ যোগ করা যায়। 'দা বান্দ্রা প্রজেক্ট' নামে রেস্তোরাঁয় মিত্তল প্রথম দিতে শুরু করেন ভারতীয় রসনার উপযোগী ইতালিয়ান পিৎজা।
সাইজ 0 (ছবি: মেইল টুডে)
দিল্লির হাইস্ট্রিট ফ্যাশনের অনুপ্রেরণায় দিল্লির সাকেতের সিলেক্ট সিটিওয়াকের তৃতীয় তলে ৮ ফেব্রুয়ারি 'দা রানওয়ে প্রজেক্ট' নাম রেস্তোরাঁটি চালু করেন মিত্তল। একটি 'শিক' (চটকদার ও স্টাইলিশ) পরিবেশ যেখানে বন্ধুদের সঙ্গে বসে বেশ ঘরোয়া ভাবে আড্ডা মারা যায়, এবং আবহে থাকে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করে বাছাই করা গান-বাজনা। এই রেস্তোরাঁটিতে স্বল্প পরিমাণে নতুন ধরণের খাবার পরিবেশন করা হয়। রেস্তোরাঁয় আমার সব চেয়ে প্রিয় হল উষ্ণ গরম রিকোটা চিজ দিয়ে বেগুনের একটি পদ, খেজুর বাটার সঙ্গে গুঁড়ো করা জলপাই দিয়ে সুন্দর একটা নামের একটি পদ –পদটির নাম হলো স্মাইল ফর দা ক্যামেরা। তরমুজ দিয়ে একটি পদ যার নাম মেডালিওন, সুন্দর করে কাটা তরমুজ তার উপরে ছড়ানো রয়েছে ঝলসানো ব্রকোলি, গোজি বেরি, ঝলসানো পেঁয়াজ কলি ও ফেটার টুকরো। ক্রসটিনির উপরে আভাকাডো বাটা দিয়ে রান্না করা ভেড়ার মাংস (ক্রসটিনি দি এগনেলো) ও অলিভ রোজমেরি বুর্রো ফুসো (বাটার সস) দিয়ে গলদা চিংড়ি রান্না, হিমালয়ের সৈন্ধব লবণ ও টেলিচেরি শুকনো লঙ্কা।
(ছবি: মেল টুডে)
আমার টেবিলে এত রকম নতুন ধরণের বৈচিত্র্যময় খাবার দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। মেনু কেমন হবে সেই ভাবনা ভাবেন বিখ্যাত শেফ ভিকি রত্নানি আর সদ্য তিরিশে পা দিয়েই বিখ্যাত হয়ে ওঠা শেফ জেরি টমাস তা রুপায়ণ করেন। বারের দিকটা সামলান ডিয়াজিও ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর বরুণ সুধাকর। এই রেস্তোরাঁর বারের দিকটা সামলান। সোলাঙ্কি রায় ও গগন আনন্দ এখানকার পেস্ট্রি শেফ, যাঁরা চকোলেট সিগার্স ও পার্লসের মতো জিভে জল আনা নানা ধরনের সব মিষ্টি তৈরি করেন।
খাবার নিয়ে মিত্তলের আরও চিন্তা ভাবনা রয়েছে। তাঁর পরের প্রকল্পটি হল আর একটি রেস্তোরাঁ যার নাম দা মার্কেট প্রজেক্ট। মুম্বাই শহরের কুর্লা এলাকায় খোলা হবে এই রেস্তোরাঁটি। এই রেস্তোরাঁটির বিশেষত্ব হল ইতালিয়ান খাবারের সঙ্গে খাস মোগলাই ছোঁয়া। খাবারগুলোর নামও বেশ দারুণ যেমন – বড়াপাও ইন পিত্জা পকেটস, দম কি বিরিয়ানি রিসত্তো কিংবা ফেরিনি তিরামিসু। রয়েছে হংকংয়ের 'টাইফুন শেল্টার'-এ (তীব্র ঝড়ের সময় মাঝিরা যেখানে তাঁদের নৌকা বেঁধে রাখেন) যে ধরণের খাবার দেওয়া হয় তেমন খাবারও। কলকাতার ট্যাংরা এলাকায় যে চিনা খাবার পাওয়া যায় ঠিক তেমন খাবারও পাওয়া যাবে এখানে।
(সৌজন্য: মেল টুডে)