মহিলা হয়েও কী ভাবে মৃৎশিল্পী হলেন, সেই লড়াইয়ের কথা

বাবার মৃত্যুর পরে হাল ছাড়িনি, চেষ্টা করে গেছি

 |  2-minute read |   02-09-2018
  • Total Shares

কয়েকদিন আগে চিনে গিয়েছিলাম, কুনমিন শহরে। সেখানে আমার বানানো একটা দুর্গামূর্তি নিয়ে গিয়েছিলাম। মূর্তিটি ওখানকার স্থানীয় একটি জাদুঘরে রাখা হয়েছে। দু’ফুটের দুর্গামূর্তি নিয়ে চিনে যাওয়ার অভিজ্ঞতা খুব ভালো। ওখানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বাঙালি ছাত্র আমার দোভাষীর কাজ করছিলেন। তাই ভাষার সমস্যা হয়নি। অনেক সম্মান পেয়েছি আমার এই শিল্পীজীবনে। তবে শুরুটা এমন ছিল না।

china-embed2_090218073935.jpgমূর্তি গড়ছেন চায়না পাল (ছবি: সুবীর হালদার)

আর পাঁচটা শিল্পীর ঘরের মেয়েরা যেমন টুকটাক সহায্য করে থাকে, আমিও তেমনই করতাম। ১৯৯৪ সালে দুর্গাপুজোর আগে আমার বাবা হেমন্তকুমার পাল অসুস্থ হয়ে পড়েন। উনি কোনও দিনই চাইতেন না আমি এই পেশায় আসি। বাবা যখন নার্সিংহোমে ভর্তি তখন আমি মায়ের সঙ্গে সেখানে যাচ্ছি, আবার ফিরে এসে কাজের তদারকি করছি।

বাবা মারা গেলেন। তখন কারিগররা চাইছেন নিজেরা স্টুডিয়ো চালাতে। আমি তখন কাজ শেখা শুরু করলাম, কিন্তু কাজ শেখাবে কে! কেউই শেখাতে চায় না। ধরুন ঠাকুরের মুখ তৈরি হবে। সেখানে কী মাটি কী অনুপাতে মেশাতে হয় সেটাও তো জানতে হবে, শিখতে হবে।

china-embed3_090218074156.jpgস্টুডিয়োতে চায়না পাল (ছবি: সুবীর পাল)

আমি হাল ছাড়িনি। হাল ছাড়ার উপায়ও ছিল না। একটা শিখছি, আরেকটা বাকি রয়ে যাচ্ছে। গয়না কী ভাবে পরাব, কোনটা আগে কোনটা পরে করব... বাবার আশীর্বাদ আর মা দুর্গার হাত ধরে কাজ শিখলাম।

কাজ শেখার পরে বাইরে থেকে ডাকও পেলাম, যেমন লখনৌ। সেখানে গেলে ঠিক কাজ ধরে নিতাম। কিন্তু ভাবলাম, তখন এই স্টুডিয়োটার কী হবে? এত সংগ্রাম করে যেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, সেই জায়গাটা ছাড়তে মন চাইল না। নতুন জায়গায় গেলে আবার নতুন করে শুরু করতে হত।

এখন এখানে দুর্গাপ্রতিমার চাহিদা বেড়েছে, তবে আমি খুব একটা বেশি বায়না নিতে পারি না, সে জন্য জায়গাও দরকার হয়। তা ছাড়া কারিগর যাঁরা আসেন তাঁদেরও থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করতে হয় স্টুডিয়োতে। যতগুলো বায়নাই নিই না কেন, সব প্রতিমাই একই সঙ্গে সরবরাহ করতে হয়। পুজোর দিন তো আর বদল করা যায় না!

china-embed1_090218074257.jpgচায়না পাল (ছবি: সুবীর হালদার)

একটা ব্যাপার লক্ষ্য করে দেখেছি, এখনও একচালা মূর্তির চাহিদা রয়েছে। মাঝে কয়েকবছর থিমের প্রতিমা বানালেও এখন আবার সনাতনী মূর্তিতে ফিরে গিয়েছি। থিমের মূর্তি বানানোর বড় সমস্যা হল, নিজের স্টুডিয়োতে নয়, থিমমেকারের কাছে যেতে হয়। হয়তো এখানে একটা জরুরি কাজ করছি, তখন ডাক পড়ল – অমুক অংশ ভেঙে এমন ভাবে গড়তে হবে। সেই কাজ যখন শেষ হল তখন আমার স্টুডিয়োর কাজে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। প্রতিমা দিতে হবে সময়ে, তাই ভীষণ চাপে পড়ে যাচ্ছিলাম। তাই থিমের কাজ আর আজকাল করি না।

একদিন পুরুষের কাজ বলে যে কাজ বাড়ি থেকে করতে দিচ্ছিল না, এখন সেই কাজের জন্য কত সম্মান পাচ্ছি। দিন কয়েক আগে যখন চিনে গেলাম তখন ইংল্যান্ড, রাশিয়ার শিল্পীদের পাশাপাশি আমিও আমার কাজের কথা বলেছি। এই সম্মান অনন্য।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

CHINA PAL CHINA PAL

Female Artisan

Comment