কেন আমার গল্পের বিষয় ছিল: গুরুদেবের লালসার শিকার কিশোরী

আমার স্বামী যৌন মিলনের অক্ষম ছিলেন। তাই শ্বশুরবাড়ি

 |  4-minute read |   28-04-2018
  • Total Shares

নাবালিকা ধর্ষণের দায়ে আসারাম বাপুকে ২৫ এপ্রিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলাটির রায় শুনে আমার অন্য একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল যে ঘটনাটির উপর ভিত্তি করে কয়েক বছর আগে আমি একটি বইও রচনা করেছি। ভণ্ড বাবা বা গুরুদেবদের দর্শন করতে গিয়ে এ দেশের মহিলারা ঠিক কতটা যৌন লাঞ্ছনার শিকার হন তাই আমার বইতে তুলে ধরেছি।

২০১৩ সালে এক বছর পঁচিশের গৃহবধূ, নীতি, ফেসবুকের মাধ্যমে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমার দ্বিতীয় বই 'সীতাস কার্স' (সীতার অভিশাপ) পড়ে তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর পর বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি আমার সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাতের জন্য বায়না করতে থাকেন। তিনি আমাকে জানান যে তাঁর জীবনে এমন একটি ঘটনা রয়েছে যা আমার গল্পের  সঙ্গে হুবুহু মিলে যায়।

সত্যের সন্ধানে এবার আমি খানিকটা অধৈর্য্য হয়ে পড়ছিলাম এক অপরিচিতার সঙ্গে দেখা করবার জন্য। তবে আমি খুব একটা নিশ্চিত ছিলাম না যে নীতির জীবনের সত্য ঘটনা আমার গল্পকে আদৌ সমৃদ্ধ করতে পারবে কিনা। এই অবস্থায় একদিন হঠাৎই নীতির বার্তা পেলাম, "দিদি, আমি দিল্লি আসছি।" খানিক চিন্তা করে আমি নীতির সঙ্গে মুখোমুখি দেখা করতে রাজি হয়ে গেলাম।

নীতির মতো এত ঘন বাদামি চোখের মণি আমি আগে কখনও দেখিনি। একটি ছাপা শাড়ি পড়ে তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।তাঁর মুখ ছিল ঘোমটায় ঢাকা। আমি যখন তাঁকে আমার সঙ্গে সাক্ষাতের কারণ জিজ্ঞেস করলাম তিনি তাঁর জীবনের গল্প শোনালেন।

"১৬ বছর বয়েসে আমার বিয়ে হয়েছিল, বাড়ি থেকে সম্বন্ধ করেই। একটি স্টুডিয়োতে আমার ছবি তুলে শ্বশুরবাড়িতে সেটা পাঠান হয়েছিল। এর পর আমার হবু স্বামীকে নিয়ে আমার শ্বশুরবাড়ির সকলে আমাকে দেখতে এলেন। সেই সময় আমার শাশুড়ি বলে বসেন যে, সন্তান ধারণের উপযুক্ত নিতম্ব ছিল তাঁর। উনি ঠিক কী বলতে চাইছিলেন, তা বোঝার মতো ক্ষমতা তখনও আমার হয়নি। আমাকে শাড়ি তুলে আমার গোড়ালি পর্যন্ত দেখতে হয়েছিল। বাড়ি থেকে নির্দেশ ছিল, আমি যেন জোরে কথা না বলি, কোনও প্রশ্ন না করি এবং সর্বদাই যেন মাথা নিচু করে থাকি। আমি আমার দিদিমার শাড়ি পরেছিলাম সেদিন। সব মিলিয়ে আমার মাথা ভোঁ ভোঁ করছিল।

"পরের মাসেই আমাদের বিবাহ সম্পন্ন হল। বেশ জাঁকজমক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল। পণ হিসেবে নগদ অর্থ, নতুন গাড়ি, দামি সিল্কের শাড়ি ও গহনা দিয়ে আমার বাবা নিঃস্ব হলেন। সে দিন প্রথমবারের জন্য নিজেকে কোনও এক স্বপ্ন রাজ্যের মহারানি বলে মনে হচ্ছিল। আমার স্বামী একজন বস্ত্র ব্যবসায়ী, বয়স ৩৪। বি কম সম্পূর্ণ করতে পারেননি। এবং তোতলিয়ে কথা বলেন।

piu_body-4_042818010712.jpgবিয়ের দ্বিতীয় বছরে এক দুপরে আমাকে জানানো হলো যে চিকিৎসার জন্য আমাকে পরিবারের গুরুদেবের কাছে ইন্দোরে নিয়ে যাওয়া হবে

"আমার মা আমাকে পরামর্শ দিলেন, আমি যেন খুব তাড়াতাড়ি সন্তান ধারণ করে ফেলি। সে ক্ষেত্রে একান্নবর্তী পরিবারে আমার অবস্থা অনেক বেশি পাকাপোক্ত হবে। সেই সময় যৌনতার ব্যাপারে আমার কোনও ধারণা ছিল না। বাইরের জগৎ বলতে আমি শুধু আমার স্কুল ও বাড়ির টিভি বুঝতাম। তবে যে কোনও নববধূর মতই আমিও সিমেনার মতো একটি ফুলশয্যার রাতের স্বপ্ন দেখতাম।

"কিন্তু আমার স্বামী পানাসক্ত ছিলেন। প্রতিদিন রাতে আমি দুধ নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতাম তাঁর জন্য। কাজ থেকে বাড়ি ফিরে তিনি অবশ্য দুধ পান করতেন না। আমাকে নগ্ন হতে বলতেন। এবং আমি কিছু বলবার আগেই আমার উপর দৈত্যের মতো ঝাঁপিয়ে পড়তেন।

"কিছুদিনের মধ্যে আমি বুঝতে পারলাম যে আমার স্বামীর যৌন অক্ষমতা রয়েছে। এর জন্য তিনি হতাশায় ভুগতেন এবং সেই হতাশা ঢাকতে নানা ভাবে আমার উপর অত্যাচার করত - কখনও আমার শরীরের উপর প্রস্রাব করতেন, কখনও আমাকে লাঠিপেটা করতেন, কখনও আমার গায়ে গরম মোম ঢেলে দিতেন আবার কখনও কখনও আমাকে নগ্ন থাকতে বাধ্য করতেন। স্বামীর অত্যাচারের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ উঠল। শ্বশুর বাড়িরই লোকেরা ঘোষণা করে দিলেন যে আমি নাকি সন্তান ধারণে অক্ষম। আমার রোগ নির্ণয়ের ওষুধও তাঁরা ঠিক করে দিলেন - নির্জলা উপবাস ও কোনও এক তেতো পাতার শরবত। তাঁদের ঘরের ছেলে যে যৌন অক্ষমতায় ভুগছেন, তাঁরা একবারের জন্য তা ভাবলেন না। এবার আমি ভেঙে পড়লাম।

"বিয়ের দ্বিতীয় বছরে এক দুপুরে আমাকে জানানো হল যে চিকিৎসার জন্য আমাকে পরিবারের গুরুদেবের কাছে ইন্দোরে নিয়ে যাওয়া হবে। এর দু'সপ্তাহ আগে থেকে আমার স্বামীকে আমার কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হল না যাতে তিনি আমার শরীর স্পর্শ না করতে পারেন। আমার প্রতি তাঁর ব্যবহারও অনেকটা নরম হল। আমার মনে হল, আমার ভাগ্যের চাকাটা বোধহয় এবার ঘুরতে শুরু করেছে।

"সেই গুরুদেব আমার বাবার চেয়েও বয়সে বড় ছিলেন। যে দিন উনি আমাকে প্রথমবারের জন্য একা পেলেন সে দিন তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতেই তিনি হুমকি দিলেন যে স্বামীকে ডেকে পাঠিয়ে মিথ্যে অভিযোগে আমাকে ফাঁসিয়ে দেবেন। আমার স্বামী তখন ঘরের বাইরে অপেক্ষারত। শেষ পর্যন্ত তিনি আমাকে জোর করে তাঁর সঙ্গে যৌন মিলনে বাধ্য করলেন। এর পর কয়েকদিন আমাকে আশ্রমে থাকতে বলা হল। কয়েক মাস পরে আমি সন্তান ধারণ করলাম। আমার পুত্রের এখন ছ'বছর বয়স।

"আমি আমার জীবনের এই গোপন গল্প কাউকে বলতে পারেনি। গুরুদেব অসীম শক্তির অধিকারী। তাঁর কয়েক হাজার ভক্ত তাঁর উপর অন্ধ বিশ্বাস করেন। হয়ত আমিই কোনও ভুল করেছিলাম ...।"

নীতির সঙ্গে আমার যোগাযোগ এখনও রয়ে গেছে। তাঁর কথা ভেবেই আমার বই লেখা এবং তাঁকেই আমি বইটি উৎসর্গ করেছি। সম্প্রতি নীতি তাঁর শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। এখন তিনি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কর্মরত। সেখানে তিনি পাপড় ও আচার তৈরি করেন।

আসারাম বাপুর যাবজ্জীবন হচ্ছে শুনে আমি তাঁকে ফোন করেছিলাম।

"আসারাম বাপুর যাবজ্জীবন হয়েছে," আমি কিছু বলার আগেই তিনি ফোনের ওপ্রান্ত থেকে ঘোষণা করে দিলেন।

"আমি জানি। খবর পেয়েই তোমাকে ফোন করলাম। যাক তাহলে একটি মামলায় সুবিচার পাওয়া গেল," আসতে আসতে কথাগুলো বললাম।

"এই রায়ের পরে আমার মতো অনেক মহিলারাই সুবিচারের আশা করতে পারবে," নীতির গলা শুনে মনে হলো তিনি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছেন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SREEMOYEE PIU KUNDU SREEMOYEE PIU KUNDU @sreemoyeekundu

The writer is an ex lifestyle editor and PR vice president, and now a full-time novelist based in Delhi. She's the author of Faraway Music, Sita's Curse and You've Got The Wrong Girl! Also, a columnist on sexuality and gender and the recipient of NDTV L'oreal Women of Worth Award in the 'Literature' category.

Comment