অটিজমের সঙ্গে এডিএইচডি থাকলে শিশুদের প্রতি আরও বেশি সহনশীল হতে হবে

উপযুক্ত ভাবে চিকিৎসা হলে এডিএইচডি-র সমস্যাটা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়

 |  5-minute read |   09-05-2018
  • Total Shares

আমার কাছে অনেকেই আসেন যাঁদের কাছে অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার বা এডিএইচডি ও অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার বা এএসডি মধ্যে পার্থক্যটা তেমন পরিষ্কার নয়। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা নিজেদের সন্তানের সমস্যাটা পুরোপুরি বুঝতে পারেন না এবং সন্তানকে ঠিক ভাবে সামলাতেও একটু অসুবিধায় পড়তে হয় তাঁদের।

তাই একজন ডাক্তার হিসেবে আমার মনে হয় এই বিষয়টা একটু পরিষ্কার হওয়া দরকার।

আগেই যেমন লিখেছি এডিএইচডি-র পুরো নাম হল অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার। তাই নামটা দেখলেই বোঝা যাবে যে এই সব বাচ্চারা চঞ্চল প্রকৃতির হয় তাই এরা কোনও কাজে মন দিতে পারে না। আর স্নায়ুর সমস্যায় অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার বা এএসডি হয়।

যে সব অটিস্টিক বাচ্চার মধ্যে এডিএইচডি থাকে এবার তাদের কথায় আসি। প্রথমেই একটা কথা বলে রাখা ভাল যে অটিস্টিক বাচ্চারা যে সব সময় খুব চঞ্চল হবে এমনটা নয়, তবে যেই অটিস্টিক বাচ্চার মধ্যে এডিএইচডি দেখা যায় তাদের মধ্যে অন্যান্য সমস্যাগুলো ছাড়া চঞ্চলতাও থাকবেই।

autism_body1_050918083435.jpgঅভিভাবকদের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে বোঝাতে হবে যে সব বাচ্চাই ভগবানের আশীর্বাদ

যেই বাচ্চাদের মধ্যে এই দুটো সমস্যাই বর্তমান তাদের প্রধান উপসর্গগুলোর হল কোনও কাজে মন দিতে না পারা বা ইনঅ্যাটেনশন, আবেগ নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না বা ইম্পালসিভিটি ও অসম্ভব চঞ্চলতা করা বা হাইপারঅ্যাক্টিভিটি। এদের কিন্তু নিজেদের আবেগ প্রকাশ করতেও খুব অসুবিধা হয়। এদের সময়ের কোনও খেয়াল থাকে না ও এরা একদম গুছিয়ে-গাছিয়ে কোনও কাজও করতে পারে না।

অটিস্টিক বাচ্চারা অন্য কারও সঙ্গে ঠিক মতো কথা বলতে পারে না বা এদের কথোপকথন করতে একটু অসুবিধা হয়, এবং এরা নিজের একটা জগৎ তৈরি করে ও সেই জগতের মধ্যেই থাকে। অন্য কারও সঙ্গে খুব একটা মিশতে পারে না বা মিশতে চায় না। নিজের চারপাশে একটা অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি করতে রাখে সব সময়। এরা অনেক পরে কথা বলতে শুরু করে। অন্য কারও সঙ্গে কোনও ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন করে না। এরা একই কাজ বারবার করে যাকে আমরা রিপিটেটিভে বিহেভিয়ার বলে থাকি। এদের বুদ্ধির তেমন ভাবে প্রকাশ ঘটে না।

তাই যেসব বাচ্চার মধ্যে এই দুটো সমস্যা মিলিত হয়ে থাকে তাদের সামলানোটা কোনও কোনও সময় একটু বেশি কঠিন হয় পড়ে।

এই শিশুদের কী ভাবে অভিভাবকরা সামলাবেন?

বাচ্চাটির বয়স যদি চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে হয় তা হলে তাকে বিহেভিয়ার থেরাপি দিয়েই চিকিৎসার করতে হয়। এটাই হল চিকিৎসার প্রধান অঙ্গ। আর যদি কোনও বাচ্চার পাঁচ বছরের উপরে বয়স হয় তাহলে তাকে আমরা কয়েক ধরনের ওষুধ দিয়ে থাকি, সঙ্গে চলে বিহেভিয়াস থেরাপিও। বিহেভিয়ার থেরাপির দুটো পদ্ধতি আছে একটি হল রিওয়ার্ড ও ননপিউনিটিভ কন্সিকোয়েন্সেস। বাচ্চাটি কোনও ভালো কাজ করলে তাকে আমরা প্রশংসা করি কিন্তু সে যদি কোনও ভুল কাজ করে তাহলে তাকে একটু শাসন করি যাতে সে বুঝতে পারে যে সে একটা ভুল কাজ করেছে এবং যাতে সে ভবিষ্যতে আর ওই কাজটি না করে।

autism_body2_050918083501.jpgবাচ্চাটির বয়স যদি চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে হয় তাহলে তাকে বিহেভিয়ার থেরাপি দিয়েই চিকিৎসার করতে হয়

স্কুলেরও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিশেষ কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যাতে তাঁরা এই বাচ্চাদের সঙ্গে আরও দক্ষ ভাবে মিশতে পারে। প্রশিক্ষণের অঙ্গ হিসেবে এই বাচ্চাদের নির্দিষ্ট কিছু কাজ দেওয়া হয় যেটা তাদের একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়, কিংবা তাদের কিছু কিছু খেলা খেলতে দেওয়া হয়। এখন প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে এইসব বাচ্চাদের কম্পিউটারে কিছু খেলা খেলতে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও এই সব বাচ্চাদের নির্ধিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট কয়েকটা কাজ সম্পন্ন করতে বলা হয় বা এদের একটা গতে বাঁধা সিডিউল করে দেওয়া হয়ে যাতে তারা এই নিয়মটা মেনে সব কাজ শেষ করে। এই ক্ষেত্রে অভিভাবক বা স্কুলের শিক্ষক বা শিক্ষিকার সাহায্য নিতে বলা হয়।

এদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রয়োজন একজন স্পেশাল এডুকেটরের, একজন স্পিচ থেরাপিস্টের ও একজন অকুপেশনাল থেরাপিস্টের।

আমি দেখেছি অনেক বাবা-মা তাঁদের বাচ্চার সমস্যাটির জন্য হীনমন্য়তায় ভোগেন কারণ তাঁরা মনে করেন তাঁদের বাচ্চার এই অসুবিধার জন্য দায়ী তাঁরাই, তাঁরা মনে করেন তাঁদের কোনও দোষে হয়ত তাঁদের বাচ্চার এই সমস্যাটি হয়েছে কিংবা এটা একটা অভিশাপ। না, এ সব কোনও কাজের কথা নয়। যে কোনও বাচ্চার ক্ষেত্রেই এই সমস্যা হতে পারে। বরং অভিভাবকদের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে বোঝাতে হবে যে সব বাচ্চাই ভগবানের আশীর্বাদ আর ওরাও এর বাইরে নয়। এই ধরণের বাচ্চাদের হয়ত একটু বেশি সহনশীলতা, ভালোবাসা ও যত্নের প্রয়োজন। ওরাও কিন্তু আর পাঁচটা বাচ্চারই মতো। আর বাইরের লোক এই বাচ্চাদের সঙ্গে কী ভাবে ব্যবহার করবে কী ভাবে কথা বলবেন সেটা কিন্তু অনেকটাই এই বাচ্চার অভিভাবকের উপরে নির্ভর করছে। বাইরের লোকেদের বোঝাতে হবে যে আর আমাদের সন্তানও আর পাঁচটা শিশুর মতোই এবং আমাদের শিশু আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং নিজের তাকে নিয়ে আমাদের কোনও রকম সংকোচ বা কুণ্ঠা নেই। তাই অভিভাবকদের ইতিবাচক হতে হবে।

এদের যদি ঠিক সময় চিকিৎসা করানো যায় তাহলে এরাও আর পাঁচজনের মতো সমাজে নিজের একটা স্থান বানিয়ে নিতে সক্ষম হবে এবং এরাও পুরোপুরি ভাবে স্বনির্ভর হয় সুতরাং এদের নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগার কোনও প্রশ্নই উঠে না। আর আশেপাশের অন্য লোক কী ভাবল তাতেও বিশেষ মাথা ঘামানোর কোনও প্রয়োজন নেই। মনে রাখতে হবে এইসব শিশুদের প্রতি দায়িত্ব কিন্তু শুধু অভিভাবকদের একার নয়, গোটা সমাজের এদের প্রতি একটা দায়িত্ব রয়েছে। সুতরাং এদের দেখে কেউ যদি যথাযথ আচরণ না করেন তা হলে কিন্তু তাঁরা ঠিক কাজ করছেন না। এখানে আরও একটা বড় সমস্যা হল সমবয়সী বাচ্চারা এদের সঙ্গে ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারে না বা চায় না। সে ক্ষেত্রে সেই সব বাচ্চাদের বাবা-মাকে এদের বোঝাতে হবে।

autism_body3_050918083525.jpgবিহেভিয়ার থেরাপির দুটো পদ্ধতি আছে একটি হল রিওয়ার্ড ও ননপিউনিটিভ কন্সিকোয়েন্সেস

অটিস্টিক বাচ্চাদের ১২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে চঞ্চলতা দেখা যায় তা নিরাময়ের প্রয়োজন হয় ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে। যদিও বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে অটিস্টিক বাচ্চাদের এডিএইচডি থাকলে তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসার ফল পেতে একটু বেশি সময় লাগে কিংবা চিকিৎসা অতটা সাড়া পাওয়া যায় না। যদি কোনও একটি সমস্যা থাকে, তখন শিশু দ্রুত চিকিৎসায় সাড়া দেয়। 

আমার মনে হয় না আজকালকার দিনে যখন সব ব্যাপারে সাধারণ মানুষ সচেতন, তখন এটা খুব বড় কোনও সমস্যা। 

একজন অটিস্টিক বাচ্চাকে যদি ঠিকঠাক ভাবে চিকিৎসা করানো হয়ে তা হলে কিন্তু এডিএইচডি-র সমস্যাটা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। অটিজমের যে মৌলিক লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো কিন্তু ১০০ শতাংশ নিরাময় হয় না, কিন্তু সময় মতো চিকিৎসা করলে এদের জীবনযাত্রার মান অনেকটাই ঠিক হয়ে যায়, এরাও সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

DR. GAUTAM SAHA DR. GAUTAM SAHA

PSYCHIATRIST, CHAIRPERSON- INDIAN ASSOCIATION FOR CERIATRIC MENTAL HEALTH

Comment