পুরাণের কাহিনিগুলোর সঙ্গে তরুণ ভারতীয়দের প্রেমের সম্পর্কটা কী রকম
ঘরের কোণে পড়ে থাকা ধুলিসূসরিত কাহিনিহুলো আধুনিক গ্রাফিক্সের সাহায্যে নতুন রূপ পাচ্ছে
- Total Shares
প্রবাদপ্রতিম কমিক লেখক গ্রান্ট মরিসনকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, এইটটিন ডেজ লেখার সময় কি তিনি মহাভারত থেকে প্রভাবিত হয়েছিলেন? তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, "কারণ মহাভারত মনুষ্য জীবনের এক চলমান ঐতিহ্য।"
এই উত্তরের সঙ্গে স্কটিশ লেখক অবশ্য আরও একটি দামি কথা বলে দিয়ে ছিলেন - এই সব শতাব্দীপ্রাচীন গল্পগুলো কেন আজকের দিনেও সমান যুগোপযোগী।
আদি পর্ব - ভারতীয় পুরাণ ও কমিকসের শুরুর দিনগুলো
কথক ঠাকুরের ভূমিকা পালন করতে থাকা আমাদের দাদু-দিদিমা, ঠাকুরদা-ঠাকুরমার মুখে শোনা পৌরাণিক গল্পগুলো গোটা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে।
দেশের সাহিত্য ও ঐতিহ্যের এক গুরত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছিল সেই গল্পগুলো। তবে আধুনিক কমিক্স বইগুলোর সূত্রপাত অবশ্য অমর চিত্র কথার প্রথম ভাগ থেকেই। অনন্ত পাইয়ের নেতৃত্বে একটি দল এই ধরণের মন ভোলানো গল্প সংকলনের বইগুলো প্রকাশ করতে শুরু করে। প্রথম প্রকাশিত হয় কৃষ্ণ, ১৯৬৭ সালে। এই বইগুলোর মধ্যে দিয়ে ভারতীয় শিশুদের তাদের নিজস্ব ইতিহাস ও শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করে তোলা হত।
এই কারণে ভারতের পৌরাণিক কাহিনীগুলো এখনও সাহিত্যপ্রেমীদের ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করে থাকে। গল্প, গল্পগুলোর চরিত্র এবং দার্শনিক ব্যাখ্যা - এই তিনের যোগফলে যা তৈরি হত তা এককথায় অনবদ্য। ইংরেজিতে যাকে বলে 'আনপুটডাউনএবল'।
পৌরাণিক কাহিনির ভিতরে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা আমরা আজও বুঝে উঠতে পারিনি বা নতুন করে বুঝছি। পুরাণের গল্পগুলো দিয়ে নতুন করে তৈরি হওয়া শেখর কাপুরের 'দেবী' সিরিজটি, হলি কাউ এন্টারটেনমেন্টের 'অঘোরী' কিংবা শমীক দাশগুপ্তর রামায়ণ '৩৩৯২ এডি'-তে এই প্রচেষ্টাই করা হয়েছে।
উদ্যোগ পর্ব - স্বীকৃতি পেলেন ভারতীয় লেখকরা
যুগ যুগ ধরে চলে পড়ে চলা পুরাণগুলোকে নিয়ে নতুন করে ভাবনা চিন্তার প্রয়োজন পড়ল কেন? পুরাণ তো প্রত্যেক ভারতীয়র জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছিল।
হ্যাঁ, হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সত্তরের দশক ও নব্বইয়ের দশকের মধ্যিখানে শহুরে লোকেরা কেন জানি না পৌরাণিক কাহিনিগুলো থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। কাহিনিগুলো ছিল, কিন্তু ঘরের কোণে পড়ে ছিল। ধুলোমাখা অবস্থায়। এর পর আধুনিক গ্রাফিক্স দিয়ে সেই ধুলো পরিষ্কারের কাজ শুরু হল। আধুনিক বিশ্বের যুগোপযোগী করে তোলা হল।
আর, এই আস্তাবল পরিষ্করের সময়ে বেশ কিছু ভারতীয় লেখকদের বেশ কিছু অজানা হীরের সন্ধান পাওয়া গেল। যেমন শমীক দাশগুপ্তের তারনাথ তান্ত্রিক বা টিএনটি বা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিটি অফ সরোস, যা পরবর্তীকালে তাঁর পুত্র তারাদাস শেষ করেছিলেন। তারানাথ একজন তান্ত্রিক ব্যক্তি যিনি অতীত নিয়ে গবেষণা করতেন। যাঁর নিজের অতীত অপার্থিব অভিজ্ঞতায় ভরপুর। এখন এই চরিত্রটিতে যদি আধুনিকতার ছোঁয়া না দেওয়া যেত তা হলে এই চরিত্রটি অচিরেই একদিন কলকাতার কোনও তস্য গলিতে সকলের অজান্তে মারা যেত।
স্বর্গারোহন পর্ব - যে সময় পুরাণ কাহিনীর জনপ্রিয়তা শীর্ষে পৌছালো
বাহুবলী বা সেক্রেড গেমসের মতো পৌরাণিক কাহিনি যেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, পৌরাণিক কাহিনী এখনও আমাদের মনের মধ্যে জায়গা করে রয়েছে।
কাহিনিগুলোর ধরণ কতকটা একই রকমের। তাই তো পড়লে মনে হয় শতাব্দীপ্রাচীন পৌরাণিক কাহিনিগুলো থেকে প্রভাবিত হয়েই আধুনিক পুরাণ কাহিনিগুলো তৈরি হয়েছে। যাঁরা লিখছেন তাঁরা নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের দাবি রাখেন কারণ গল্পগুলো বিশ্ব জুড়েই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
গ্রান্ট মরিসনের কথা আবার বলতে হয়। তিনি বলেছিলেন ভাগবদগীতা কিংবা মহাভারতের বার্তা শুধু হিন্দু ধর্মের কথা মাথায় রেখে নয়, এই বার্তা গোটা বিশ্বের ঐতিহ্যের সঙ্গেই মাননসই।
ডিজিটাল বিশ্ব যেভাবে এগোচ্ছে আর তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন আঙ্গিকের পৌরাণিক কাহিনীগুলো ডিজিটাল বিশ্বের জন্য তৈরি করা হচ্ছে তাতে গল্পগুলোর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।
এই প্রজন্ম পশ্চিমি দুনিয়া নিয়ে তর্ক করতে ভালোবাসে, কিন্তু ডিজিটাল বিশ্বের জন্য তৈরি করা নতুন আঙ্গিকের পৌরাণিক কাহিনিগুলোও তাদের মনে ধরছে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে