বাচ্চাদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস ফিরিয়ে আনুন

বাচ্চাদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস তাদের ধৈর্য ও একাগ্রতা বাড়ায়

 |  2-minute read |   23-04-2018
  • Total Shares

আজ বিশ্ব পুস্তক দিবস, একে অপরকে বই পড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করার দিন। আর তাই আজ এই লেখাটা লিখতে বসে বড্ড ছোটবেলার কথা মনে হচ্ছে। তখন আলাদা করে এই দিনটা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন হত না কারণ আমার শৈশবের অনেকটাই কেটেছে বইকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে।

যখন খুব ছোট ছিলাম, দুপুরবেলা খাওয়াদাওয়ার পর বিছানায় বসে চুপটি করে অপেক্ষা করতাম মায়ের জন্য। সব কাজ সেরে মা আমাকে কাছে টেনে নিয়ে পড়ে শোনাত গল্পের বই। কখনও হিতোপদেশের গল্প, কখনও বা রুশদেশের উপকথা, রামায়ণ মহাভারত, ঠাকুরমার ঝুলি... তার সব কিছু যে বুঝতাম তা নয়, কিন্তু ভীষণ ভালো লাগত মায়ের সান্নিধ্যে বইয়ের পাতা ওল্টানো।

কেমন যেন ইমোশনাল সিকিউরিটি তৈরি হত মনের মধ্যে। তার সঙ্গে প্রতিদিনই তৈরি হতো বইয়ের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা। সব সময় মনে হত, এই বইটাই মা আর আমার মধ্যে বন্ধনের সেতু।

book_body2_042318070322.jpgএকটু বড় হলে ওকে কাছাকাছি কোনও পাঠাগারের সদস্য করে দিন

তাই বইয়ের ব্যাপারে খুব যত্নশীল ছিলাম সেই ছোট্ট থেকে। নিজে যখন মা হয়েছি, আমার ছোট্ট কন্যাটিকেও দিয়েছি সেই মধুর অভিজ্ঞতা।

আজকাল বাবা-মায়েরা এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে খুব কম সংখ্যক মানুষই বইয়ের সঙ্গে সংযোগ রাখতে পেরেছেন। অনেকেরই বাড়িতে বই পড়ার চল নেই বললেই চলে। শহরেরে শপিং মলগুলোতে যে বুকশপগুলো আছে, তাতে ভিড় হয় বটে, কিন্তু সেখানে বই কেনার চেয়ে খেলনাপাতির দাবিই থাকে বেশি। আবার অনেকে হয়ত দামি দামি বই কিনে দেন, কিন্তু সেই বই পড়ার অভ্যাসটা আর গড়ে তুলতে পারেন না। ফলে অনেক বই-ই পাতা না উল্টানো অবস্থাতেই কাগজওয়ালার ঝুলিতে চলে যায়।

বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাচ্চাদের মধ্যে খুব ছোট বয়স থেকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলে তাদের মধ্যে ধৈর্য ও একাগ্রতা ভীষণ ভাবে বাড়ে। শুধু তাই নয়, যে কোন বিষয় নিয়ে বলা বা লেখার একটি সম্যক জ্ঞানও চলে আসে খুব ছোট বয়স থেকে। তাছাড়া বাচ্চার শব্দভাণ্ডার বা ভোকাবিউলারিও বাড়তে থাকে।

তাহলে কী করবেন বাবা-মায়েরা?

অবশ্যই সারাদিনের শেষে আপনার বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানোর সময় মোবাইল না দিয়ে বই পড়ে শোনান। এতে ও আপনার সান্নিধ্য ও স্পর্শ দুটোই পাবে। আপনারও ওর সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটানোর সুযোগ হবে।

book_body1_042318070230.jpg

বাড়ির বড়রা বাচ্চাদের কাছে আদর্শস্থানীয়

একটু বড় হলে ওকে কাছাকাছি কোনও পাঠাগারের সদস্য করে দিন। এতে ওর মধ্যে বই সম্পর্কে আগ্রহ আরও বাড়বে। বাচ্চাদের জন্মদিনে উপহার হিসেবে আবার শুরু করুন বই দেওয়া।

বাড়ির বড়রা বাচ্চাদের কাছে আদর্শস্থানীয়। তাই বাচ্চারা যদি বাড়ির বড়দের বই পড়তে দেখে, ওদের মধ্যেও এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়বে।

অনেকসময় বাচ্চারা ইন্টারনেটে বই পড়তে চায়। সেক্ষেত্রে ওকে উৎসাহ দিন পাতা উল্টে বই পড়ার জন্য। এতে বইকে বন্ধু হিসেবে ভাবতে ও যত্ন করতে শিখবে ওরা। তবে এখন অনেক ইলেকট্রনিক ডিভাইস আছে যাতে প্রচুর বই এক সঙ্গে স্টোর করে পড়া যায়। তাই সে ক্ষেত্রে উৎসাহ দেবেন পড়তে।

বাচ্চাদের কল্পনাশক্তির উন্মেষ হয় কিন্তু বই পড়েই বা গল্প শুনে। তাই বাচ্চার সুস্থ স্বাভাবিক শৈশব পেতে গেলে এই আনন্দ থেকে ওকে বঞ্চিত করবেন না।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PAYEL GHOSH PAYEL GHOSH

Parenting Consultant, educates young parents on positive parenting

Comment