পুজোর সময় কেন সাহেবদের কলকাতা দেখাতে চান মুখ্যমন্ত্রী
রাতজাগা প্রাণবন্ত শহর দেখলে বিনিয়োগও আসতে পারে
- Total Shares
কয়েক বছর ধরেই পুজোর সময় ভ্রমণের নানা রকম প্যাকেজ দিচ্ছে রাজ্য পর্যটন দফতর। এ বার দুর্গাপুজোর সময় বিলেতের অতিথিদের চাইছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ব্যাপারে বিলেতের পর্যটন সংস্থাগুলোকে উৎসাহিত করতে তিনি টেমস উৎসবে প্রতিনিধিও পাঠাচ্ছেন। এ রাজ্যে প্রায়ই দেখা যায় নোংরা জায়গা ও বস্তির ছবি তুলছেন বিদেশিরা। শহরের আরও একটা দিক যে আছে, সেটাই দেখাতে চায় রাজ্য সরকার। রাতজাগা প্রাণবন্ত শহর দেখলে হয়তো বিশ্বের কাছে শহরের সংজ্ঞা বদলাতে শুরু করবে, তাতে বিনিয়োগও আসতে পারে। তা ছাড়া এখন কলকাতা শহরে বেশ কয়েকটি বড় হোটেলও হয়েছে।
এ রাজ্যের তো বটেই, দেশের সবচেয়ে বড় উৎসবগুলোর মধ্যে এটি যে অন্যতম, তা নিয়ে কারও কোনও প্রশ্ন আছে বলে মনে হয় না। খরচের নিরিখে মহারাষ্ট্রের গণেশ পুজো ও ব্যাপকতার বিচারে সারা দেশের দিওয়ালির সঙ্গে দুর্গাপুজোর কোনও তুলনা করা চলে না। এই পুজোর প্রস্তুতি ও বৈচিত্র্য দেশের সব উৎসবকে ছাপিয়েই যায়। প্রতিমা নির্মাণ থেকে মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া, পুজো, নানা লোকাচার ও বিজয়া – এত রং হয়তো দোলেও দেখা যায় না।
বনেদি বাড়িরই পুজো [ছবি:সুবীর হালদার]
শহরের অন্য রূপ
প্রাণচঞ্চল শহর, সারা রাত হেঁটে চলেছে, এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। বিশ্ব জুড়ে এমন দৃশ্য কেউ কি দেখেছে? রাতভর চলছে স্ট্রিটফুড বিক্রি, লোকে সারা রাত লাইন দিয়ে ঠাকুর দেখছ। রাস্তা জুড়ে নানা রঙের আলোর ফটক, বাড়ির ছাদ থেকে ঝুলছে আলোর মালা।
সকালে ক্লান্ত হওয়ার জো নেই। পাড়ায় আড্ডা, লাউডস্পিকার, পুষ্পাঞ্জলি। জগন্নাথ ঘাটে ফুলের মেলা। সারা দিন এবং রাতেও শহর থেমে নেই, দৃশ্যগুলো বদলে যাচ্ছে। শহরের যে রূপ দেখে যান বিদেশিরা, এ সে শহর নয়। পুজোর সময় সাহেবরা এলে তাঁরা অন্তত একটা ফিলগুড মানসিকতা নিয়ে ফিরতে পারবেন দেশে।
কুমোরটুলির আকর্ষণ
সেই প্রতিমা সংরক্ষণ করা হবে না, তবুও খড়ের উপরে মাটি লেপে ও তাতে রং করে যে মৃণ্ময়ী মূর্তি তৈরি করা হয়, তা দেখতে প্রতি বছরই বিভিন্ন দে.শের মানুষ আসেন কুমোরটুলি। আগে মহালয়ার দিন কুমোরটুলিতে ভিড় উপচে পড়ত আলোকচিত্রীদের, ঠাকুরের চোখ আঁকার ছবি তোলার জন্য। কিন্তু এখন মহালয়ার মধ্যেই পুজোর উদ্বোধন হয়ে যাচ্ছে। তাই কুমোরটুলি দেখতে গেলে একটু আগে আগেই যেতে হবে।
বিশাল মূর্তি সরিয়ে পিছন থেকে মূর্তি বার করে আনা, সেখান থেকে বাঁশের সাহায্যে কাঁধে চাপিয়ে গলির রাস্তা দিয়ে প্রতিমা লরিতে তোলা—সবরই দেখার মতো। চিত্রনাট্য ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে এই কাজ হয়ে চলেছে।
কুমোরটুলি বা শহরের যে কোনও পটুয়াপাড়া থেকে ঠাকুর বার করে তা তোলা হয় কোনও গাড়িতে। মুখ ঢেকে তা নিয়ে যাওয়া হয় মণ্ডপে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখলে বিদেশিরা অবাক হবেনই, আরও অবাক হবেন গঙ্গার উপর দিয়ে নৌকায় করে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া দেখলে।
বনেদি বাড়ি
কলকাতা শহরের বনেদি বাড়িগুলি পুজোর সময় সাধারণের গন্তব্য হয়ে ওঠে। সেখানে নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো দেখা এবং চিরাচরিত একচালা প্রতিমা দেখার জন্য ভিড় হয় প্রতিবছরই। বাড়িগুলিতে ইউরোপীয় স্থাপত্যের ছোঁয়া আছে, আবার বাঙালিয়ানাও আছে। ঐতিহ্যবাহী বাড়ি, পুরোনো রীতিনীতি ও ষোলোআনা বাঙালি কৃষ্টি দেখার সেরা সময় দুর্গাপুজোই।
অষ্টমীতে অঞ্জলি দেওয়ার দৃশ্য সব পুজো মণ্ডপেই দেখা যায়, বেশিরভাগ মহিলাই পরেন লালশাড়ি। তবে দশমীতে সিঁদুর খেলা আর ধুনুচি নাচ দেখতে হলে শহরের কোনও বনেদি বাড়িতেই যেতে হবে। সে সব জায়গায় ভোগ খাওয়ার অভিজ্ঞতাই আলাদা। রাজ্য সরকারও চাইছে, এই সব দৃশ্য দেখুন সাহেবরা।
কলকাতার অন্যতম আকর্ষণ কুমারটুলি [ছবি:সুবীর হালদার]
থিম ও মণ্ডপ
বেশ কিছুদিন ধরেই থিমপুজো শুরু হয়েছে শহরে, ছড়িয়েছে শহরতলিতেও। তাই নানা ধরনের অস্থায়ী মণ্ডপের মাধ্যমে পুরো দেশের সংস্কৃতির ছাপ দেখা যায়। মণ্ডপের গঠন, ধরণ প্রভৃতি দেখতে ও তার সঙ্গে মানানসই প্রতিমা দেখতে দেখতে যখন শহরের বাসিন্দারা ক্লান্ত হন না, তখন সেই রং-রূপ দেখে বিদেশিরা মোহিত হবেন, এ কথাওহলফ করে বলা যায়। ।
পুজোর সময় আলোকসজ্জা শহরকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। রাতভর আলো জ্বলে সেতুগুলোতে। তাই অন্য শহরকে তুলে ধরা যাবে বিদেশিদের কাছে, যে শহর জেগে থাকে সারা রাত। তা ছাড়া এই সময় উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম যাওয়ার জন্য রাতভর বাসও চলে।
দুই চিত্র
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে এক সময় লন্ডনের পরে সবচেয়ে বড় শহর ও বন্দকর ছিল কলকাতা। এখনও এই শহরে ব্রিটিশ স্থাপত্যের বহু নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে। পুরোনো বাড়ি, অ্যাংলো-বাঙালি পাড়া, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল...। শিকড়ের সন্ধানে অনেকেই এ দেশে আসেন। পুজোর সময় এলে তাঁরা শহরের অন্য দর্শনীয় স্থান দেখতে পাবেন, উৎসবের শহরও দেখতে পাবেন।