রাজ্যের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন শিল্পের বাজার বড়, তাই হস্তক্ষেপ মুখ্যমন্ত্রীর

বাংলা টেলিভিশনের দর্শক কেমন? সমস্যা ঠিক কতটা মিটল?

 |  3-minute read |   24-08-2018
  • Total Shares

মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে চপশিল্প নিয়ে প্রায়ই সোশ্যাল মিডিয়ায় নানারকম টিপ্পনি লক্ষ্য করা যায়। এই অবস্থায়

টালিগঞ্জে জট কেটেছে। জট কেটেছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে। জট না কাটিয়ে উপায়ও ছিল না। কারণ টালিগঞ্জ অচল হয়ে থাকা মানে রাজ্যের আর্থিক ক্ষতি। ২০১৪ সালে বণিকসভা কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইআই) একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে যার নাম বেঙ্গল বায়োস্কোপ, আ বিগ পিকচার আউটলুক ফর সাস্টেনেবল গ্রোথ। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী এ রাজ্যের চলচ্চিত্র শিল্পেপ ব্যবসার পরিমাণ মোটামুটি ভাবে ১২০-১৫০ কোটি টাকার মধ্যে। তা ছাড়া টেলিভিশন ধারাবাহিক রয়েছে।

body_082418050656.jpgসৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখের সঙ্গে নবান্নে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (সুবীর হালদার)

বাংলা টেলিভিশন ধারাবাহিকের বাজার বিশ্বব্যাপী। সিআইআই-এর ওই রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৪ সালে আমেরিকার বিভিন্ন শহরে বাংলাভাষাভাষীর সংখ্যা যথেষ্ট। এই তালিকায় রয়েছে নিউ ইয়র্ক (৭৩,১১৬ জন), ক্যালিফোর্নিয়া (১৭,৮০২*), নিউ জার্সি (১৪,১২০*), টেক্সাস (১০,৮৫২), ফ্লোরিডা (৯,৫৭৩), মিশিনাগ, ভার্জিনিয়া, জর্জিয়া প্রভৃতি শহরে। (* সম্ভাব্য)

বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের সংখ্যাও যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে ভারত (৩২,৩০,০০০), সৌদি আরব (১৩,০৯,০০০), সংযুক্ত আরব আমিরশাহী (১০,৯০,০০০) কুয়েত (২,৭৯,০০০), যুক্তরাজ্য (২.৪০,০০০), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (২,০৪,০০০), ওমান (১,৪৮,০০০), মালয়েশিয়া (৩,৫২,০০০), ইতালি, কানাডা, জর্ডন, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, স্পেন প্রভৃতি দেশে রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ। তাই বাংলা মেগা ধারাবাহিকগুলির ভালোমতো বাজার রয়েছে বিশ্বজুড়ে।

টালিগঞ্জ পাড়ায় কাজকর্ম টানা ছ’দিন বন্ধ থাকলে এবং ধারাবাহিকগুলির পুরোনো পর্ব দেখানো হতে থাকলে সেই শবর বিশ্বের নানা প্রান্তেই ছড়িয়ে পড়বে, তাতে রাজ্যের বিনিয়োগের ব্যাপারে শিল্পপতিদের সন্দেহ আরও বাড়বে।

কয়েক বছর ধরে রাজ্যে বাণিজ্য মেলা (বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট) বসলেও কার্যক্ষেত্রে বিনিয়োগ হয়েছে যৎসামান্য। শিল্পোৎপাদনে বিনিয়োগ হয়নি বললেই চলে। এই অবস্থায় বাংলা মেগা সিরিয়ালগুলির বাজার বেশ ভালো। বণিকসভা ফিফির সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে টেলিভিশন ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন বাবদ বাড়তি ২৬,৭০০ কোটি টাকা এসেছে, বার্ষিক বৃদ্ধির হার ৯.৮ শতাংশ। সরকারি কোষাগারে কর বাবদও টাকা ঢুকছে। পশ্চিমবঙ্গে যেখানে শিল্পোৎপাদনের হাল ভালো নয়, সেখানে ফিল্প ও টেলিভিশন বড় ভরসা।

tech__082418050742.jpgস্টুডিয়ো পাড়া (নিজস্ব চিত্র)

টালিগঞ্জে কলাকুশলীদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল শোষণ। ১০ ঘণ্টার বদলে তাঁদের ১৪ ঘণ্টা করে কাজ করা একরকম রুটিনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, এ জন্য বাড়তি যে পারিশ্রমিক পাওয়ার কথা তাও পাচ্ছিলেন না। বকেয়া টাকা সময়ে পাচ্ছিলেন না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সেই সমস্যা আপাতত মিটেছে।

মুখ্যমন্ত্রীর সামনে সকলেই তাঁর উচ্ছ্বসিত প্রসংসা করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরে বাম-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এই প্রথম রাজ্যের কোনও একটি কমিটিতে এলেন। বৃহস্পতিবারই জানিয়ে দেওয়া হল, প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে পাওনা মেটাতে হবে, ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না।

bharatlokhi_082418050907.jpgভারতলক্ষ্মী স্টুডিয়ো (নিজস্ব চিত্র)

তবে একটি প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। প্রতি বছর তাঁদের প্রাপ্য বাড়বে তো? কলাকুশলীরা বলছেন, তাঁদের প্রাপ্য দীর্ঘদিন ধরে বাড়েনি। এই সমস্যার কোনও সমাধান না হলে ভবিষ্যতে আবার একই রকম সমস্যা হতে পারে। জয়েন্ট কন্সিলিয়েশন কমিটি গড়া হয়েছে, সেখানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্ব আছেন। তাও প্রশ্ন থেকে যায়, সেই কমিটিতে রাজ্যের এক মন্ত্রী ও তাঁর ভাই কেন? মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস দীর্ঘ দিন ধরেই টালিগঞ্জপাড়ার নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছেন বলে গুঞ্জন। তিনি ওই কমিটির চেয়ারম্যান। কলাকুশলী হিসাবে সেই কমিটিতে রয়েছেন তাঁর ভাই স্বরূপ। প্রশ্ন উঠতে পারে, এখানে স্বার্থের সঙ্ঘাত হবে না তো কখনও? নাকি বামপন্থী বলে পরিচিত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে উপদেষ্টা হিসাবে রেখে পুরো টালিগঞ্জের নিয়ন্ত্রণ এখন নিয়ে লিন রাজ্যের শাসকদল?

তৃণমূলের মঞ্চে অনেক দিন ধরেই টালিগঞ্জের শিল্পীদের দেখা যাচ্ছে, এখন সরকারি ভাবে তারা সেখানে প্রবেশ করল।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment