‘কাগজ কে ফুল’ বা ‘সিলসিলা' বাণিজ্যিকভাবে অসফল হলেও কালজয়ী হয়ে থাকবে

'কাগজ কে ফুল' ভারতের প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি

 |  4-minute read |   22-08-2018
  • Total Shares

একটি কালজয়ী সিনেমা হল এমন একটি ছবি যেটা দেখলে সিনেমাটি যে সময় বানানো হয়েছে সেই সময়কাল সম্বন্ধে যেমন একটা সম্মক ধারণা হয় তেমনই কয়েক দশক পরেও সেই ছবিটি দেখলে তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে যায় না। 

যেসব ছবিকে এযুগে কালজয়ী বলে মনে করা হয় সেই ছবিগুলির মধ্যে কয়েকটি হল 'কাগজ কে ফুল' (১৯৫৯), 'সিলসিলা' (১৯৮১) ও 'আন্দাজ আপনা আপনা' (১৯৯৪)। মজার ব্যাপার হল এই ছবিগুলি যখন মুক্তি পেয়েছিল তখন সেগুলি যেমন বাণিজ্যিকভাবে সফল হতে পারেনি তেমনই সমালোচকদের কাছে তেমন প্রশংসাও পায়নি। অনেকে মনে করেন ছবিগুলোর গল্প তখনকার সময়ের থেকে বেশ অনেকটা এগিয়ে ছিল। 

body1_082218101553.jpg'কাগজ কে ফুল' ছবির পোস্টার বিজ্ঞাপন

যদিও এই বিষয়টা অস্বীকার করা যাবে না যে যাঁরা এই ধরণের সিনেমা পছন্দ করেন তাঁরা এই সিনেমাগুলো কিন্তু দেখেছেন এবং তাঁদের মাধ্যমেই ছবিগুলো ক্রমশ জনপ্রিয় ও কালজয়ী হয়ে উঠেছে। তবে ছবিগুলির ক্ষেত্রে অভিনেতা নির্বাচন, ছবির গল্পের পরিণতি এবং ছবিতে যে সমস্যা দেখানো হয়েছে তার ঠিক কী সমাধান দেওয়া হল, এই সব কারণেই হয়তো সিনেমাগুলি সফলতার পায়নি। 

পর্দার আড়ালের কাহিনী

অসাধারণ চিত্রনাট্য, গল্পের নিপুণ বাঁধুনি ও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দক্ষ অভিনয় সত্ত্বেও 'কাগজ কে ফুল' ও 'সিলসিলা'-র মতো ছবি সমালোচিত হয়েছিল শুধুমাত্র ছবিতে যাঁরা অভিনয় করেছেন তাঁদের জন্য।

ঠিক যখন গুজব রটল যে অভিনেত্রী ওয়াহিদ রহমানের সঙ্গে পরিচালক গুরু দত্তের একটি সম্পর্ক আছে ঠিক তখনই গুরু দত্ত তাঁর ছবি 'কাগজ কে ফুল'-এ জন্য অভিনেত্রী ওয়াহিদ রহমানকে প্রধান চরিত্রে নেবেন বলে ঘোষণা করলেন। ছবির গল্পে একজন পরিচালক সাধারণ একটি মহিলাকে এক দক্ষ অভিনেত্রী করে তুলবেন এবং পরে সেই অভিনেত্রীকেই পরিচালক ভালোবেসে ফেলেন।

'কাগজ কে ফুল' ভারতের প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি। ছবিটিতে অসাধারণ সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল বলে মুক্তি পাওয়ার পর সিনেমাটি প্রশংসিত হয়। তবে ছবিকে ঘিরে অনেক রটনা ছড়ায় পাশাপাশি ছবির বেদনাদায়ক সমাপ্তিটাও বোধহয় দর্শক মেনে নিতে পারেনি। যদিও সিনেমাটির শেষটার সঙ্গে যে বাস্তব মিলে যাবে সেটা তখন কেউ বুঝতে পারেনি।

body2_082218101720.jpg'সিলসিলা' ছবির একটি দৃশ্য

'কাগজ কে ফুল' ছবিটির জন্য গুরু দত্ত যে আর্থিক ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছিল তার থেকে তিনি আর কোনও দিনই মুক্তি পাননি। পরিচালক হিসেবে এটিই ছিল তাঁর শেষ ছবি কারণ তাঁর ধারণা হয়েছিল যে তাঁর আর কোনও ছবি বক্সঅফিসে সফল হতে পারবে না।

ঠিক একই ভাবে 'সিলসিলা' ছবিটিতে অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন ও রেখা একটি ত্রিশঙ্কু প্রেমের গল্পে অভিনয় করেছিলেন। বাস্তব জীবনে যে অমিতাভ বচ্চন ও রেখা একটি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে পড়েছিলেন তেমন একটি রটনা রটে ছিল। তাই সিনেমাটির গল্প থেকে দর্শক অনেক বেশি আকৃষ্ট হয়ে পরে তাঁদের প্রেম কাহিনীতে। যদিও রটনাটি ছবিটেকে বাণিজ্যিক সাফল্য এনে দিয়েছিল।

ত্রিশঙ্কু প্রেম

ছবিতে রেখা এবং জয়া ভাদুড়ির চরিত্রে প্রথমে অভিনেত্রী পারভিন বাবি ও স্মিতা পাটিলের অভিনয় করার কথা ছিল কিন্তু চিত্রনাট্যটি পড়ার পর পরিচালক জশ চোপড়া অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনকে জিজ্ঞেস করেন সিনেমাটি চলবে কী না?

একটি সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে চোপড়া বলেন না যে অমিতাভ বচ্চন তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে ওই দুটি চরিত্রের জন্য তিনি ঠিক কোন দু'জন অভিনেত্রীকে নেওয়ার কথা ভাবছেন।  উত্তরে চোপড়া অভিনেত্রী জয়া বচ্চন এবং রেখার নাম করেন। নাম দু'টি শুনে বচ্চন বলেন চলো দেখা যাক আমরা করতে পারি কী না।

'সিলসিলা' ছবির শেষে যে গল্পের 'অমিত' 'শোভার' কাছেই  ফিরে যাবে সেটাই বোধহয় দর্শকও আশা করেছিল। তবে আসলে হয়তো পরিচালক এভাবে ছবিটি শেষ করতে চাননি। তাই ছবিটি যখন মুক্তি পায় তখন কী দর্শক সম্পূর্ণ রূপে বাস্তবতাকে এড়াতে পেরেছিল? 'কাগজ কে ফুল' ছবিটি কাল্পনিক নয় কারণ চিত্রনির্মাতা জ্ঞান মুখোপাধ্যায়ের জীবনের বহু ঘটনা নিয়ে ছবিটি বানানো হয়েছিল। জ্ঞান মুখোপাধ্যায়ের কাছের দত্তর হাতে খড়ি হয়। কিন্তু ছবিটিতে ওয়াহিদা রহমান অভিনয় করেছিলেন বলে দর্শক মনে করে যে আসলে ছবিটি প্রযোজক-পরিচালক দত্তর জীবনের কাহিনী।

সিনেমার চরিত্রর সঙ্গে বাস্তবের মিল

অভিনেতা নির্বাচন এবং বাস্তবের সঙ্গে ছবির মিল- সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে এই দুটো বড় দিক কী তাহলে এই ছবিগুলোর সফল না হওয়ার কারণ?

body33_082218101635.jpg'সিলসিলা' ছবির পোস্টার

তবে পরিচালক 'সিলসিলা' ছবিটিতে অভিনেতা নির্বাচনের সময় যে সাহস দেখিয়ে ছিলেন ঠিক সেই কারণেই বোধহয় এযুগের দর্শক সিনেমাটি দেখতে এত পছন্দ করেন। বাস্তব জীবনের অনেক ঘটনা যে অসাধারণ সব সিনেমার সৃষ্টি করতে পারে সেটাও বেশ পরিষ্কার। প্রথমে 'কাগজ কে ফুলের' বাণিজ্যিক অসফলতা  এবং তারপর রাজ কাপুরের নিজের জীবনের বেশ কয়েকটি ঘটনার উপর ভিত্তি করে বানানো ছবি 'মেরা নাম জোকার' (১৯৭১) কী  'সিলসিলা'-র সাফল্যের পথের কাঁটা হয়ে দাড়ায়?

যদিও এই তিনটি ছবিই কালজয়ী হয়ে থাকবে। এযুগে যদি এই ছবিগুলি মুক্তি পেতো তাহলে কী ছবিগুলো সফল হতে পারত? একটু অন্য ভাবে বলতে হলে বলা যেতে পারে যে 'সিলসিলা' বা 'কাগজ কে ফুলের' মতো ছবিগুলি মুক্তি পাওয়ার পর হয়তো বাণিজ্যিক সফলতা পায়নি তবে ছবিগুলো কালজয়ী হয়ে থাকবে।

(সৌজন্যে মেল টুডে)

লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

GAUTAM CHINTAMANI GAUTAM CHINTAMANI @gchintamani

Cinephile, observer of society and technology and author of the of Dark Star: The Loneliness of Being Rajesh Khanna.

Comment