বিশ্বভারতীতে 'লুঙ্গি ডান্সে' শিক্ষকও: এত অপসংস্কৃতির নামান্তর মাত্র
সৃষ্টির রক্ষকই যদি সৃষ্টিছাড়া হয়ে পড়েন তা হলে তা খুব দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার
- Total Shares
বিশ্বভারতীর সঙ্গীতভবনে যে ঘটনাটি সম্প্রতি ঘটে গেল তা সত্যিই খুব দুর্ভাগ্যজনক। টেলিভিশনে দেখলাম শিক্ষক দিবসে একটি হিন্দি গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেই ভবনের ছাত্রছাত্রীরাই নন, ধুতি-পাঞ্জাবি পরে কোমর দুলিয়ে আকাশের দিকে দু'হাত ছুড়ে নাচ করছেন একজন অধ্যাপকও। পরে শুনলাম উনি সঙ্গীতভবনের অধ্যক্ষ, তবে আমি এই ব্যাপারে নিশ্চিত নই। অধ্যক্ষ না হলেও তিনি নিশ্চয়ই একজন অধ্যাপক।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির একটি দৃশ্য
ছাত্রছাত্রীরা ছাড়াও অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষিকারা উপস্থিত ছিলেন। সঙ্গীত ভবনে যে খেলাটি হচ্ছিল সেই 'মিউজিক্যাল চেয়ার' খেলার মধ্যে কোনও দোষ নেই, তবে সেই খেলাটি জন্য যে গানটি নির্বাচন করা হয়েছিল সেটা একেবারেই রুচিসম্মত গান নয়। গান বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে যদি রুচির অভাব ঘটে তখন খুব বিপদ। গানটির সঙ্গে যে ভঙ্গিতে নাচ হয়েছে তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে যদি গানটি নির্বাচন করা হতো তাহলে কোনও আপত্তির কারণ থাকত না। তাছাড়া মিউজিক্যাল চেয়ার খেলাটির সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজানো যেতে পারত। রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়াও তো অনেক ভালো হিন্দি ও বাংলা গান আছে, তা ও বাজানো যেতে পারত। তবে বরাবরই শান্তিনিকেতন আশ্রমে গানবাজনার বিষয় রবীন্দ্রসঙ্গীত অনেক বেশি মূল্য পায়।
এতো অপসংস্কৃতির নামান্তর মাত্র।
আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করেছেন বিশ্বভারতীতে না হয়ে ঘটনাটি যদি অন্য কোথাও ঘটত তাহলে কি এতটা শোরগোল উঠত? আমার মনে হয় উঠত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নের জায়গা শান্তিনিকেতন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন শান্তিনিকেতন আশ্রম গড়েছিলেন তখন রুচিসম্মত জীবনযাপন করার দিকে তিনি জোর দিয়েছিলেন। সেই রুচির যদি অভাব ঘটে তাহলে তা হবে বড় দুঃখের বিষয়। সঙ্গীত ভবনের ক্ষেত্রে ঠিক সেটাই ঘটল।
আমরা যখন এখানকার ছাত্র ছিলাম তখন এই ধরণের কোনও ঘটনা কখনও ঘটেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গানবাজনা হতেই পারে তবে তা যদি অপসংস্কৃতির রূপ নেয়ে তাহলে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। সঙ্গীত ভবন বলেই যে কোনও ধরণের সঙ্গীত বাজাবার সুযোগ আছে সেটা এক্কেবারে ঠিক কথা নয়। তবে সঙ্গীত ভবনে সেদিন যে গান হয়েছিল তাকে আমি সঙ্গীতের পর্যায় ফেলতে পারব না। এটা একটা নিকৃষ্ট মানসিকতার পরিচয়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির একটি দৃশ্য
ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যদি এই ধরণের কোনও মানসিকতা দেখা দেয় তাহলে তা গোড়াতেই দমন করতে হবে। এহেন গানের সঙ্গে অধ্যাপকের নাচ আমি সত্যিই হতবাক আর কিছুই বলার নেই আমার। এত গোড়াতেই গলদ। যারাই সৃষ্টির রক্ষক তাঁরাই যদি সৃষ্টিছাড়া হয়ে পড়েন তাহলে তা খুব দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার।
এই ধরণের ঘটনা যাতে ভবিষতে আর না ঘটে সেই দিকটা নজর দিতে হবে। আমার মতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে ছাত্রছাত্রীদের জন্য যদি কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে কিছুটা কাজ হবে বলে আমার বিশ্বাস।