উর্দু কবিতাগুলি কেন ইসলাম-বিরোধী

বহু মুসলমান মনে করেন যে উর্দু হল তাঁদের জায়গির, তাঁরা ভাষাটি সম্বন্ধেই জানেন না

 |  3-minute read |   14-09-2018
  • Total Shares

একবার আমি লখনউয়ে একটি উর্দু কবিতার অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত হয়েছিলাম, সেখানে একজন মুসলিম মহিলা বলেছিলেন যে তিনি চান তাঁর সন্তান উর্দু শিখুক যাতে তারা কোরান পড়তে পারে। এর উত্তরে আমি তাঁকে বলেছিলাম, “কোরান তো আরবিতে লেখা, উর্দুতে নয় এবং উর্দু তো বটেই পারসিতেও কোরানের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় রামায়ন লেখা হয়েছে।”

আমি নিশ্চিত যে সেই মহিলা উর্দু ভাষা সম্বন্ধে কিছুই জানতেন না।

উর্দু মুসলমানদের ভাষা বলে লোকের যে ধারনা, তা সর্বৈব ভাবেই ভুল, আর বহু মুসলমান মনে করেন যে উর্দু হল তাঁদের জায়গির (সম্পত্তি), যদি তাঁরা এই মহান ভাষা সম্বন্ধে খুবই কম জানেন।

আমি উর্দু নিয়ে দুটি রচনা লিখেছি যা অনলাইনে পাওয়া যাবে: ‘উর্দু কী’ এবং ‘ভারতে উর্দুর প্রতি প্রবল অবিচার’।

ঘটনা হল, উর্দু কবিতাগুলি ইসলাম-বিরোধী।

উদাহরণ হিসাবে বলতে পারি, মির্জা গালিব লিখেছেন:

  • ইমাম মুঝে রোকে হ্যায় তো খিঁচে হ্যায় মুঝে কুফর
  • কাবা মিরে পিছে হ্যায় ক্যায়সা মিরে আগে
  • (বিশ্বাস যদি আমার পথ রুদ্ধ করে তাহলে নিরীশ্বরবাদ আমারে আগুয়ান করছে
  • কাবা আমার পশ্চাতে রয়েছে, যাজকরা আমার সম্মুখে)

এখানে কাবা শব্দটি ব্যবহার করা হয়্ছে সামন্ততন্ত্র বোঝাতে আর কালিসা (ধর্মজাজক) কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে আধুনিকতা বোঝাতে। সুতরাং ধর্মের মধ্যে পশ্চাৎপদতা ও সামন্ততান্ত্রিক মনোভাব থাকায় গালিব তা খারিজ করে দিয়েছেন এবং আধুনিকতার জয়গান গেয়েছেন।

 

  • মসজিদ কে জের-এ-সায়া খাবারাত চাহিয়ে
  • (প্রত্যেক মসজিদের সঙ্গে একটি করে সুরার দোকান থাকুক)

দেখুন, ইসলামে সুরাপান নিষিদ্ধ আর সর্বকালের সেরা উর্দু কবি কী বলছেন।

ghalib_091318110543_091418084703.jpg মির্জা গালিবকে সর্বকালের সেরা উর্দুকবি বলে মনে করা হয় (সৌজন্য: উইকিমিডি কমনস)

তিনি লিখছেন:

  • কাহাঁ ম্যায়-কানে কা দরওয়াজা গালিব আউর কাহাঁ ওয়াইজ
  • পর ইতনা জানতে হ্যায় কাল ও জাতা থা কি হম নিকলে
  • (সুরার দোকান ও ধার্মিক ব্যক্তি দুই মেরুর বাসিন্দা /তবে গতকাল আমি যখন শুঁড়িখানায় ঢুকছিলাম তখন উনি বেরচ্ছিলেলন।)

মহান উর্দু কবি মির লিখছেন:

  • মির কে দিন-ও-মজহাব কো অব পুছতে কেয়া হো উন নে তো
  • কাসকা খিঁচা দয়ের মেঁ বয়ঠা কব কা তর্ক ইসলাম কিয়া
  • (মিরের ধর্ম কেন তুমি জানতে চাইছ? তিনি তো কপালে তিলক কেটেই আছেন।
  • হিন্দু মন্দিরে বসে তিনি তো অনেক আগেই ইসলামকে ব্রাত্য করে দিয়েছেন।)

আরেক জন মহান কবি সাহির লুধিয়ানভি লিখছেন:

  • আকায়িদ ওয়াহাম হ্যায়, মজব খয়াল-এ-খাম হ্যায় সাকি আজল সে জেহেঁ-ই-ইনসান বস্তা-এ-অহাম হ্যায় সাকি
  • (বিশ্বাস হল কুসংস্কার, ধর্ম হল খারাপ ধারনা)

sahir_091318110906_091418084736.jpgপ্রেম ও বিপ্লবের কবি সাহির লুধিয়ানভি (সৌজন্য: ইউটিউব)

সময়ের আদিকাল থেকে মানুষের চিন্তাশক্তি সেই মিথ্যার বন্ধনে আবদ্ধ।

মহান উর্দু কবি চকবস্তের উর্দু রামায়নের কয়েকটি শ্লোক দিলাম:

  • রুকসাত হুয়া উয়ো বাপ সে লে কর খুদা কা নাম
  • রহ-এ-ওয়াফা কি মনজিল-এ-অব্বল হ্যায় তমাম
  • মঞ্জুর থা জো মান কি জিয়ারাত কা ইন্তিজাম
  • দামন সে অশক পঞ্ছ কে দিল সে কিয়া কলাম
  • ইজহার-এ-বে-কসি সে সীতম হোগা অর ভি
  • দেখা হমেঁ উদাস তো গম হোগা আইর ভি
  • (ঈশ্বরের নাম করে তিনি [রাম] পিতার কাছ থেকে বিদায় নিলেন
  • সত্যরক্ষার জন্য তিনি কঠিন কঠোর পথে পা বাড়ালেন
  • এ বার তিনি তাঁর মায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ধীর পদক্ষেপ করলেন
  • চোখের জল মুছে তিনি কাঁধ শক্ত করে কথা বললেন
  • আমি আমার কষ্টের কথা বলে তাঁর অসহনীয় দুঃখের ভার বাড়াব না
  • আমি তাঁর সামনে স্মিতহাস্যে গেলে তাঁর দুঃখ কিছুটা লাঘব হবে।

chakbast_09131811174_091418084815.jpg পণ্ডিত ব্রিজ নারায়ণ তকবস্ত ছিলেন উর্দু কবি, সমালোচক, সম্পাদক ও গবেষক (সৌজন্য: টুইটার)

আমি উর্দু রামায়ন থেকে এই ধরনের বহু শ্লোক একের পর এক লিখে যেতে পারি। লেখাটি এতটাই আবেগঘন যে কেউ মনে করতে পারেন যে তিনি হয়তো তুলসিদাসের রামচরিতমানস পড়ছেন। উর্দু কবিদের মধ্যে যাঁরা পূজনীয় সেই মির, গালিব, ফৈয়াজ, প্রমুখের লেখা থেকে একের পর এক শের উদ্ধৃত করতে পারি যেখানে ইসলামকে আক্রমণ করা হয়েছে, যে ভাবে কবির করেছিলেন।

উর্দু কবিতায় কবিরকে অনুসরণ করা হয়, অনুসরণ করা হয় মহান সেই সব সুফি সন্তদের যাঁরা বিশ্বভাতৃত্ব ও মানবতায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং আক্রমণ করে গেছেন ধর্মীয় চরমপন্থা ও গোঁড়ামিকে। সামগ্রিক ভাবে উর্দু কবিতা হল সাধারণ মানুষের দুর্বলতা, তাঁদের প্রতি অবিচার, উৎপীড়ন এবং অমানবিক সামাজিক প্রথা ও ধর্মীর রীতিনীতির প্রতিবাদ করে লেখা।

kabir_091318011052_091418084855.jpgতাঁর তাঁতযন্ত্রের সঙ্গে কবির, ১৮২৫ সালে আঁকা চিত্র (সৌজন্য: উইকিমিডিয়া কমনস)

আমি একটা কথা সোজাসাপটা বলতে চাই যে, উর্দু কবিতাগুলি যে ভাবে মানুষের মনের কথা বলেছে বিশ্বের আর কোনও কবিতা সেই ভাবে বাঙ্ময় হয়ে উঠতে পারেনি।

ওয়াহাবি ধাঁচের ধর্মীর গোঁড়ামিকে আক্রমণ অথবা আমাদের উপমহাদেশে (হিন্দু ও ইসলাম উভয় ধর্মের) ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার নিয়ে যে ভাবে উর্দু কবিতাগুলি সরব হয়েছে, তা ভারতের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক।

কবির লিখেছেন:

  • কাঁকর পাথর জোড়কে মসজিদ লিয়ে বনায়ে
  • তা চাড় মুল্লা বাং দে, কেয়া বেহরা হুয়া খুদায়েঁ?
  • (ইট ও পাথরে তৈরি মসদিজ
  • তার উপর থেকে মোল্লা চেঁচাচ্ছে (আজান)

ঈশ্বর কি বধির হয়ে গেছেন?

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

MARKANDEY KATJU MARKANDEY KATJU @mkatju

Former Judge, Supreme Court of India and former Chairman, Press Council of India

Comment