শিল্পী ও কলাকুশলীরা জানিয়ে দিয়েছেন সমস্যার পাকাপাকি সমাধান না হলে কাজে ফিরবেন না
“আমরা সবাই একটা ছোট পরিবারের মতো একসঙ্গে কাজ করি”
- Total Shares
টালিগঞ্জ পাড়ায় আজ মোটামুটি এক সপ্তাহ হল শুটিং বন্ধ। কাজ বন্ধ হয়ে থাকে সেটা কখনোই কাঙ্ক্ষিত নয়। তবে যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখনই শিল্পী এবং কলাকুশলীরা কাজ বন্ধ করে দেন। এ হেন পরিস্থিতি হঠাৎ তৈরি হয়নি। দর্শক হয়েতো দেখছেন যে গত পাঁচদিন শুটিং বন্ধ, তবে এই রকম পরিস্থিতির মধ্যে আমরা কমপক্ষে এক বছর কাজ করে চলেছি।
এই ধরণের ঘটনা আগেও অনেক বার ঘটেছে, তবে প্রতিবারই সামনাসামনি বসে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে এবার অবস্থা সত্যিই হাতের বাইরে চলে গেছে। আমরা সব সময় কাজ করতে প্রস্তুত আছি, এই মুহূর্তে যদি আমাদের কলটাইম দেওয়া হয় আমরা কাজ শুরু করে দেব।
সাংবাদিক বৈঠকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দীপঙ্কর দে প্রমুখ
পাশাপাশি যে যে সব কলাকুশলী বা শিল্পীরা রাত নেই দিন নেই কাজ করে চলেছেন তাঁরা যদি সময়মত ন্যায্য পারিশ্রমিক না পান তা হলে সেটা কী কোনও কাজের কথা? বহু ক্ষেত্রে চার থেকে পাঁচ মাস তাঁরা বিনা পারিশ্রমিকে হাসি মুখে ১৬ থেকে ১৭ ঘন্টা করে প্রত্যেকদিন কাজ করে চলেছে।
তাঁরা প্রত্যেকদিন কত ঘণ্টা করে কাজ করবেন তার কোনও বাঁধাধরা নিয়ম নেই। শ্রম আইন অনুযায়ী একজন ব্যক্তি দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করবে না। তাই যে কোনও পেশাতেই একটা বাঁধাধরা সময় থাকা প্রয়োজন। যদিও মেগা ধারাবাহিকগুলোর ক্ষেত্রে কাজের সময়টা বাড়িয়ে ১০ ঘণ্টা করা হয়েছিল। কেউ যদি নির্ধারিত সময়ের বেশি কাজ করেন তা হলে তাঁকে সেই সময়ের জন্য পারিশ্রমিকও দিতে হবে যেটা আমাদের ক্ষেত্রে দেওয়া হয় না।
কাজ বন্ধ টেকনিশানস স্টুডিয়োতেআজ থেকে তিন মাস আগে এ সব বিষয়গুলো নিয়ে আমরা একটি বৈঠক করি তাতে প্রযোজক, আর্টিস্ট ফোরামের সদস্য ও ফেডারেশনের সমস্ত সদস্য ছিলেন। আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে আসি এবং সেই অনুযায়ী ৭ জুলাই একটি সমঝোতা পত্র সই করি। সেই বৈঠকে রাজ্যের মন্ত্রী তথা টেলি অ্যাকাডেমির সভাপতি অরূপ বিশ্বাসও উপস্থিত ছিলেন। তবে এখন হঠাৎ করেই প্রযোজকরা আর এই সমঝোতা পত্র মানতে চাইছেন না।
একটি চিঠি পাঠিয়ে বলেছেন যে তাঁরা এটা মানেন না এবং এই সমঝোতা পত্র সই করে তাঁরা ভুল করেছেন।
সাংবাদিক বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়
এ বার আমাদের করণীয় কী? ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে।
তাই আমরা চাই যে প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে যেন শিল্পী ও কলাকুশলীদের বকেয়া টাকা দিয়ে দেওয়া হোক, তা আটকে রাখলে চলবে না। মনে রাখতে হবে এই টাকার উপর আমাদের পুরো সংসার নির্ভর করে থাকে। এটাই তো স্বাভাবিক।
নানা সমস্যা অনেকদিন ধরেই ছিল কিন্তু আমরা কখনোই কাজ বন্ধ করিনি বরং প্রযোজকরা হঠাৎ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
কয়েক সপ্তাহ আগেই টানা তিনদিন প্রযোজকরা কাজ বন্ধ রেখেছিলেন কিন্তু তখন আগের থেকে কাজ এগিয়ে রাখা হয়েছিল বলে খুব একটা অসুবিধা হয়নি বা টেলিভিশনে ধারাবাহিক দেখানো বন্ধ হয়ে যায়নি। এবারে হঠাৎ করেই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হল বলেই জটিলতা আরও বেড়েছে।
কাজ বন্ধ ভারতলক্ষ্মী স্টুডিয়োতে
প্রত্যেক তিন থেকে চার বছর অন্তর শিল্পী ও কলাকুশলীদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর কথা টালিগঞ্জ পাড়াতে, কিন্তু বাস্তবে তা প্রযুক্ত হয় চার থেকে পাঁচ বছরে একবার বেতন বৃদ্ধি। আগে প্রত্যেকদিন কমপক্ষে ২০ ঘণ্টা করে কাজ চলত যার ফলে বহু কলাকুশলীর মৃত্যুও হয়েছে। তাই তখন ১৪ ঘণ্টা করে কাজের সময় ঠিক করা হল। তবে প্রযোজকদের সেটা পর্যাপ্ত বলে মনে হয়নি, তাঁদের মনে হয়েছিল কাজের সময় আরও বাড়ানো উচিত।
এক কথায় তাঁরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন।
আমরা সবাই একটা ছোট পরিবারের মতো একসঙ্গে মিলে কাজ করি তাই আমি আশা করব যে একটি পরিবারেও যেমন ঝগড়া-অশান্তি হয় এবং পরে সেটা মিটেও যায় ঠিক সে ভাবেই এই সমস্যারও সমাধান খুব শান্তিপূর্ণ ভাবেই হবে।