জমকাল পোশাক আর গল্প মানে মিথ্যার বেসাতি: পিট্টলা ডোরাদের কথা

তেলঙ্গনা থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে পিট্টলা ডোরা

 |  3-minute read |   13-12-2018
  • Total Shares

বেশ কয়েক দশক আগে যখন গ্রামীণ তেলঙ্গনা ও অন্ধ্রপ্রদেশে সিনেমা ব্যাপারটা তেমন চালু হয়নি তখন গ্রামে গ্রামে বিনোদন বলতে ছিল পিট্টল ডোরা বা থুপাকি রামুডু। তাঁদের সেই আস্ফালন আর উদ্ভট প্রতিশ্রুতি আর মিথ্যার বেসাতি – সেগুলি এতটাই বোকাবোকা ছিল যে আমরা হাসিতে ফেটে পড়তাম। তাঁদের এইসব গল্প আমাদের কাছে ঠিল হাসির খোরাক। এই সব আজব গল্প আর আস্ফালন শোনার জন্য লোকে তাঁদের পয়সাও দিত।

পিট্টল ডোরা বা থুপাকি রামুডুদের কাছে জীবনযাপন বলতে ছিল মিথ্যার বেসাতি করা।

main_thuppaki-ramudu_121318053553.jpg নিজস্ব পেশার পোশাকে পিট্টল ডোরা – পোশাকের রং ঔপনিবেশিক যুগের পুলিশকর্মীদের মতো খাঁকি, মাথায় পিথ হ্যাট, সঙ্গে কাঠের বন্দুক। (ছবি: ইউটিউব স্ক্রিনগ্র্যাব)

পিট্টলা ডোরাদের খুব সহজেই চেনা যায় – তাঁরা সবসময়ই ঔপনিবেশিক পুলিশকর্মীদের মতো খাকি হাফপ্যান্ট পরেন (অনেকে আবার ডোরা কাটা পাজামা পরেন), মাথায় পিথ হ্যাট আর সব সময় তাঁদের সঙ্গে থাকে অনেকটা বন্দুকের মতো দেখতে একখণ্ড কাঠ। দুর্ভাগ্যজনক হল এই পিট্টলা ডোরা বা রামুডুদের আজকাল দেখাই পাওয়া যায় না, এই লোকশিল্প দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে।

তবে আমাদের মনের মধ্যে সব সময়ই আশা থাকে। এমন কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা আছেন যাঁরা এই লোকশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে চান। রাজনৈতিক নেতারা অনায়াসে যখন তখন লম্বাচওড়া কথা বলেন ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। তাই রাজ্যে ভোটের মুখে অনেকই পিট্টলা ডোরাদের কাজে লাগিয়েছিলেন। তাঁরা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে তাঁদের মতো করে প্রচার করেছেন। তাঁরা রাজ্যের মানুষকে বলেছিলেন:

আমি বিপুল কাজের সুযোগ আর সোনা এনে দেব,

চুপচাপ বসে থাক, টুঁ শব্দটিও করবে না!

শান্ত হয়ে বসে যা বলছি তা কর

এখন যাচ্ছি থুপাকি রামুডুকে দায়িত্ব দিয়ে।

ঠিক তার পরেই খাকি শর্টস পরে থুপকি রামুডুর প্রবেশ। লোকে তাঁদের খাকি থুপাকি রামুডু বা সংক্ষেপে কেটিআর নামে নামে ডাকে। যাত্রাপালার জন্য যারা পোশাক ভাড়া দেয়, এই ক’দিন তাদের থেকে পোশাক ভাড়া করেছিলেন থুপকি রামুডুরা – তাঁরা কিছু বলা মানেই হাসির ফোয়ারা। ওই সব যাত্রাপালার সংস্থাগুলোকে মজা করে অপহাস্যম বলা হচ্ছিল, তাঁরা দাঙ্গা লাগাচ্ছিলেন – হাসির দাঙ্গা... তাই আরএসএস-এর মতো খাকি হাফপ্যান্ট পরিহিতদের বলা হচ্ছিল রায়ট সাপ্লাই সঙ্ঘ বা আরএসএস।

এঁরা সেই খাকি হাফপ্যান্ট বা ফুলপ্যান্ট পরিহিত নন। চিন্তা করবেন না, এই নাট্যপালা মজা উপভোগ করুক, খাওয়াদাওয়াটা পরে হবে। খাবারের মধ্যে থাকছে দারুন কুড়মুড়ে সব ভাজাভুজি, জিলিপি এবং পকোড়ি – থুপাকি রামুডু বললেন। তখনই যেন পকোড়া লক্ষ করে গুলি ছুড়লেন কয়েকজন বেকার... তিনি ছন্দে ছন্দে বলতে লাগলেন:

“অনেক টাকা কামাতে হবে,

যদি ফসল না ফলে, বিষাদগ্রস্ত হও তাও,

ছোড়-বড় যা প্রতিশ্রুতি – সব মিথ্যে

নিজেকে বুলেটপ্রুফ বাথরুমে পরিণত করুন!

পাঁচ ঘণ্টার অনুষ্ঠানে সাড়ে চার ঘণ্টায় হাসির কোনও খোরাক ছিল না। তাই শেষ পর্যন্ত ডাক পড়ল থুপাকি রামুডুর আর তাঁরা আসা মানেই হাসির ফোয়ারা। স্তব্ধতা ভঙ্গ করে একজন প্রশ্ন করলেন:

আমরা পাঁচ ঘণ্টা ধরে আপনাদের আটকে রেখেছি এখন আপনারা যে যার মতো চলে যাবেন আপনারা সকলেই গোলাপি গাড়িতে চড়বেন আমরা কেন আপনাদের কথা বিশ্বাস করব?

পিট্টলা ডোরা বা থুপাকি রামুডু, কারও কাছে কোনও উত্তর ছিল না। লোকে তাদের প্রতি বিরক্ত হচ্ছিল, কারণ তাদের কথায় আর আগের মতো দমফাটানো হাসির খোরাক নেই, তারা এখন রামগরুড়ের মতো হয়ে গেছে।

তারা তাদের আবাদের ঘরে ফিরবে

তারপরে টাটকা তাড়িতে চুমুক দেবে

তারা মনে মনে গুমরে মরবে

কারণ রাষ্ট্র তাদের জন্য কিছুই করছে না!

main_pithala-dora_12_121318053637.jpg আরএসএস-এর বেশে তেলঙ্গনার কেটিএস: খাকি খুপাকি সরামুডু, এঁরা কেউ এ রাজ্য থেকে নির্বাচিত হয়ে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী হননি।

তা হলে এই বিরক্তিকর শোয়ের মানে কী দাঁড়াল? শ্রোতাদর্শকদের মধ্য থেকে অন্য একজন জিজ্ঞাসা করলেন। একজন মহিলা তখন উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, বুকের কাছে হাত দুহাত জোড় করে প্রার্থনা করুন যাতে পুরোনো সেই দিন আবার ফিরে আসে। তাঁরা যখন প্রার্থনা করলনে তখন সেই পিট্টলা ডোরা ও থুপাকি রামুডুরাও প্রার্থনা করলেন। উপস্থিত সব জনতার উদ্দেশে পিট্টলা ডোরা আবার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিলেন: “গাড়িতে উঠে পডুন, আমরা বিজেপি খাওয়াচ্ছি।”

একজন জানতে চাইলেন, “বিজেপি কী?”

থুপকি রামুডু বললেন, “ভাজাভুজি জিলিপি পকোড়ি।”

একজন তরুণের গলা ভেসে এল, “আপনার বিজেপিকে আমাদের দরকার নেই, আমরা ইতিমধ্যেই পকোড়া বানাতে শুরু করে দিয়েছি। আমরা চাকরি চাই, আমরা শিক্ষা চাই এবং আমরা শান্তি চাই।”

মজা করে পিট্টলা ডোরা বললেন, “তা হলে দেশের গরিব লোক খাবে কী?”

একজন বললেন, “হাত-ই আমাদের খাওয়াবে।”

থুপাকি রামুডু বললেন, “কোন হাত? হ্যান্ড অফ গড?”

লোকে সমস্বরে বললেন, “হ্যাঁ ঈশ্বরের হাত, আমাদের বহুদিনের সঙ্গী হাত।”

তখন জনতা সমস্বরে বলতে শুরু করে দিল, “হস্তম মন নেস্থাম” – হাতই আমাদের বন্ধু। তখন পিট্টলা ডোরা ও থুপাকি রামুডু মঞ্চ ছেড়ে গেলেন। তেলেঙ্গনায় অবশ্য হাতের জয় হয়নি, বিজেপিরও।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

RAKESH KOTTI RAKESH KOTTI @rakeshkotti

Rakesh Kotti is an educator, aspiring writer and amateur drummer.

Comment