বৌদ্ধ থেকে হিন্দু ধর্মে কেমন করে শুরু হল তারার পুজো
বৌদ্ধধর্মে দেবী তারার গায়ের বর্ণ সাদা, তাই তাঁকে আর্যতারাও বলা হয়
- Total Shares
লড়াই নেই কোনও কালেই, তবে একটা দ্বন্দ্ব রয়েছে। অনেক নৃতত্ববিদকেই বলতে শুনেছি, দেবী তারার জন্ম হল তিব্বতে, তিনি মহাযান বৌদ্ধদের উপাস্য। পরে হিন্দু ধর্মে তিনি এসেছেন। এমন অনেক দেবদেবীই রয়েছেন যাঁরা হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে আলাদা ভাবে, আলাদা রূপে পুজিত হন।
হিন্দু ধর্মে যে দশ জন মহাবিদ্যা রয়েছেন তাঁদের মধ্যে দ্বিতীয় হলেন দেবী তারা। দেবী কালিকার সঙ্গে তাঁর অনেক মিলই রয়েছে, রূপও মোটামুটি ভাবে একই। কালিকা হলেন কৃষ্ণবর্ণা, দেবী তারার বর্ণ নীল। তাঁর পরণে বাঘছাল। তাঁর মুখে লেগে রক্ত। দেবী কালিকার কেশ অবিন্যস্ত, তবে দেবী তারার মাথায় একটি জটা রয়েছে, তবে তিনি মহাদেবের মতো জটাজুট নন। কালীপুজোর পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদে পুজো হয় তারার।
তারাপীঠের তারা
দেবী তারা ভয়াল মূর্তি, তিনি খর্বাকৃতি, তাঁর গলায় রয়েছে সর্পের উপবীত। দেবী কালিকার এক হাতে কাতান ও এক হাতে মুণ্ড ধরা থাকলেও দেবী তারার চার হাতে রয়েছে কাতান, খড়্গ, খর্পর ও পদ্মফুল। তিনি শক্তির প্রতীক। তন্ত্রে আট তারার কথা উল্লেখ থাকলেও বৌদ্ধ মতে আবার ২১ তারার কথা রয়েছে।
পৌরাণিক মতে কামাক্ষ্যায় সাধনে ব্যর্থ হয়ে মহর্ষি বশিষ্ঠ তিব্বতে যান তারার উপাসনা শিখতে। তাই পৌরাণিক কথা মানলেও ধরে নেওয়া যেতে পারে যে দেবী তারার পুজো শুরু হয় প্রথমে তিব্বতে, পরে সেই পুজো শুরু হয় ভারতে।
যবদ্বীপে প্রাপ্ত প্রজ্ঞাপারমিতা তারা (উইকিপেডিয়া)
বৌদ্ধধর্মে দেবী তারার গায়ের বর্ণ সাদা, তাই তাঁকে আর্যতারাও বলা হয়। মহাযান বৌদ্ধরা তাঁকে বোধিসত্ত্বের নারীরূপ হিসাবে পূজা করে থাকেন। জাপান ও চিনেও প্রায় একই রূপের তারা পূজিতা হন। কোথাও কোথাও আবার দেবী তারাকে স্ত্রী অবলোকিশ্বর রূপে পূজা করা হয়।
তিব্বতে দেবী আর্যতারা রূপে তিনি পূজিতা (ছবি: বুদ্ধউইক.কম)
বাংলায় দেবী তারার মূল মন্দির রয়েছে তারাপীঠে, যে মন্দিরের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে সাধাক বামাখ্যাপার নাম। কিংবদন্তী অনুসারে সতীর দেহখণ্ড এখানে প্রথম দেখেন ঋষি বশিষ্ঠ। তিনিই তারার পুজো শুরু করেন। হিন্দু ধর্মের একটি মতে সমুদ্রমন্থনের ফলে যে হলাহল উঠেছিল তা পান করে কণ্ঠে ধারণ করেন মহাদেব, বিষে তাঁর কণ্ঠ নীল হয়ে যায়। বিষের তীব্র জ্বালা যখন তিনি অনুভব করছেন তখন দেবী তারা তাঁকে স্তন্যপান করান। তখন তিনি দেবাদিদেবের মাতৃরূপা।
ব্রুকলিন জাদুঘরে রক্ষিত অষ্টম শতকের দেবী তারা (উইকিপেডিয়া)
ঐতিহাসিকদের একাংশ মনে করেন যে বাংলায় তন্ত্র সাধনা এসেছে মোটামুটি ভাবে সপ্তম শতাব্দীতে এবং সেই তিব্বত থেকেই। সম্ভবত নাগার্জুন এই পুজোপদ্ধতি ভারতে নিয়ে আসেন।
তিব্বত থেকেই তারার পুজো ছড়িয়ে পড়ে ভারত হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে।