কলকাতা ও শহরতলির মেধাবীরা এ রাজ্যের শিক্ষা-বোর্ড এড়িয়ে চলছে বলেই মেধাতালিকায় নেই
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে জেলাগুলি থেকে চোখ ধাঁধানো ফলাফল
- Total Shares
৭০০তে ৬৯০ পাওয়া ছেলেগুলোকে নিয়ে মাতামাতি করছিস কর, যারা টেনেটুনে পাস করেছে তাদের অবহেলা করিসনি। রাতে রক্তের প্রয়োজন হলে ওরাই আসবে, ৬৯০ আসবে না।
ক’দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে এমনই সব বার্তা, ভাষায় কম-বেশি বদল হলেও, মূল ভাব মোটের উপরে একই। প্রশ্ন হল, ৬৯০ বলে যাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে কলকাতায় আছে কত জন।
শুধু এ বারের নয়, গত বেশ কয়েক বছর ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফেলাফল বিচার করলে দেখা যাবে, কলকাতার স্কুল তো বটেই, শহরতলির স্কুলগুলিও মেধা তালিকায় জায়গা করতে পারছে না। তার মানে কলকাতায় মেধার অভাব পড়ছে, তা নয়। এর মূলত দুটি কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ, মহানগর এবং তার আশপাশে বসবাসকারীরা দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির জন্য পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পরিবর্তে বেছে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় এবং দিল্লি বোর্ডের কোনও একটিকে।
ইউপিএসসি-র মতো বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূল পরীক্ষা এবং বিভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই দুই বোর্ডের পাঠ্যক্রম ও প্রশ্নের ধাঁচ মেনেই হয়ে থাকে। এর সঙ্গে দ্বিতীয় কারণ হিসাবে যোগ করা যেতে পারে ইংরেজি শিক্ষার সুযোগ-সুবিধাও। তা ছাড়া নিটের মতো বিভিন্ন পরীক্ষা বাংলায় দেওয়ার ক্ষেত্রেও নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ থেকে বার হওয়ার সহজ উপায় শুরু থেকেই প্রথম ভাষা হিসাবে ইংরেজি পড়া, একই সঙ্গে ভাষা ছাড়া সবকটি বিষয় ইংরেজিতে পড়া।
আগে বিভিন্ন জিলা স্কুলগুলিকে দেখা যেত মেধাতালিকায়
এ রাজ্যে চাকরির আশা এক রকম ছেড়েই দিয়েছেন তরুণরা। তাঁদের ভরসা ভিনরাজ্য বা বিদেশ। দুই ক্ষেত্রেই ইংরেজি আবশ্যিক, সে জন্য সিবিএসই এবং আইসিএসই-র দিকেই ঝোঁক বাড়ছে।
এ রাজ্যের কয়েকটি বেসরকারি স্কুল ইতিমধ্যেই বোর্ড পরিবর্তনের দিকে ঝুঁকছে বা ঝুঁকেছে। ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করার সুযোগ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বোর্ডের অধীনেও রয়েছে। ইংরেজিতে পঠনপাঠন বা ইন্সট্রাকশন দেওয়ানোর ব্যাপারে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। কিন্তু মানের প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে অভিভাবকদের মনে। তাই মেধাবীদের বড় অংশ এ রাজ্যের বোর্ডের অধীনে পরীক্ষাই দিচ্ছে না।
আগে বিভিন্ন জিলা স্কুলগুলিকে দেখা যেত মেধাতালিকায়। সার্বিক ভাবে স্কুলগুলি দুর্দান্ত ফল করত। কিন্তু লটারির মাধ্যমে ভর্তি চালু হওয়ায় সেখানে মেধার ভিত্তিতে নয়, কপাল-জোরে ভর্তি হতে হয়। তাই জেলা স্কুলগুলির ফলও আর আগের মতো চোখ ধাঁধানো হয় না। মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরাও তাই জেলাস্কুলের দিকে ঝোঁকেন না।
মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরা জেলাস্কুলের দিকে ঝোঁকেন না
তার মানে কি জেলার ছাত্রছাত্রীরা মেধাবী নয়? এমন ভাবার কারণ নেই। তারা তাদের প্রাপ্য নম্বরটুকুই পাচ্ছে, বেশি বা কম নয়। কিন্তু কলকাতা শহরে তাদের সঙ্গে যারা পাল্লা দিতে পারত, তারা এই বোর্ডে নেই বলে ওই তালিকায় তাদের নাম থাকছে না।
রাজ্যের প্রতিটি জেলা সদর ও মহকুমা সদরে যদি বেসরকারি নামী স্কুলগুলি (যারা কেন্দ্রীয় বোর্ডের অনুমোদনপ্রাপ্ত) শাখা খোলে এবং খরচ ওই সব এলাকায় বসবাসকারীদের নাগালের মধ্যে রাখে, তা হলে রাজ্যের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের সার্বিক ফল কী হবে, সে কথা বলা মুশকিল। তার প্রভাব যেমন পড়তে পারে সর্বোচ্চ নম্বরের উপরে, তেমনই তার প্রভাব পড়তে পারা পাশের হারের উপরেও।