স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে আমার জীবন মানে শুধুই সংগ্রাম
স্টুডিয়ো নেই, মহিলা হয়েওতাই পথেই ঠাকুর গড়ি
- Total Shares
আমার কথা বলা মানে একটা লড়াইয়ের কথা বলা, যে লড়াই এখনও চলছে। তবে একটা কথা বলতেই হবে, আমার এই লড়াইয়ে আমি পাশে পেয়েছি অনেক প্রতিবেশীকেই। এখনও আমার নিজের কোনও স্টুডিয়ো নেই, রাস্তার উপরে ঠাকুর গড়ি দিনে-রাতে যখন সময় পাই তখনই। প্রতিবেশীরা আছেন বলেই একজন মহিলা হয়েও রাস্তায় একা ঠাকুর গড়তে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি।
দেবীমূর্তি গড়ছেন কাকলি পাল (ছবি: সুবীর হালদার)
আমার বাপের বাড়ি নদিয়ার কৃষ্ণনগরের ধুবুলিয়ায়। এখানে আমি এসেছি বিয়ের সূত্রে, ১৯৯৪ সালে। তার বছর আটেক পরে, পুজোর কিছুদিন আগে হঠাৎই ব্রেন স্ট্রোকে আমার স্বামী অসীমকুমার পাল মারা গেলেন। বড় মেয়ের বয়স তখন সাত বছর, ছোট মেয়ের বয়স মাত্র এক বছর। স্বামীর মৃত্যুর আট মাস আগে মারা গিয়েছিলেন শাশুড়িও।
দুটো মেয়ে ছিল বলে আমাকে ঘর থেকে বারই হতে দিতেন না শাশুড়ি, প্রয়োজনে তিনিই দোকানে যেতেন। তাই ঠাকুর গড়া দূরের কথা, বাইরের জগৎ সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না। সে বছর আমার বাবা ও দাদা মিলে সময় মতো সব ঠাকুর গড়ে দেয়। তখনই বাবা বলেছিল যাতে আমি বাপের বাড়ি ফিরে যাই। আমার নামে জমি-জায়গা কিছু দিয়ে দেবে। আমার কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু রাজি হইনি। তখনই বলে দিয়েছিলাম, ভিক্ষা করে খেলেও আমি বাপেরবাড়িতে যাব না।
স্টুডিয়ো নেই, তাই ঠাকুর গড়েন পথেই (ছবি: সুবীর হালদার)
শুরু করলাম কাজ শেখা, প্রতিবেশীরাও সাহায্য করলেন। প্রথমে ৬-৭টা দুর্গা গড়তাম। পরে তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। রোজগার করতে শুরু করলাম। একাদশ শ্রেণিতে যখন পড়ছে, তখন বড় মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলাম ভালো পাত্র পেয়ে যেতেই।
এখন আমি ২০টা মতো দুর্গাঠাকুর বানাই। ইদানীং গণেশেরও বায়না আসছে। জায়গা নেই বলে সব বায়না নিতে পারি না। নিজের একটা স্টুডিয়ো থাকলে খুব ভালো হত। এখনও চোরবাগান মিত্তিরবাড়ির প্রতিমা ও নিমতলার শ্মশানকালীর মূর্তি গড়ি, সেই আমার শ্বশুরমশাইয়ের আমল থেকে এই প্রথা চলে আসছে। মূলত পুরোনো খরিদ্দারদেরই ধরে রেখেছি, সরকার একটি স্টুডিয়ো দিলে ভালো হয়।
এ বছর গণেশের বায়না বেড়েছে (ছবি: সুবীর হালদার)
একই মধ্যে মাপে ছোট প্রতিমার বায়না একটু বেশি নিচ্ছি। যেমন ৩-৪ বছর আগেও গণেশের তেমন অর্ডার নিতাম না। এ বছর ২০টা গণেশের বায়না নিয়েছি। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও আয়ও বেড়েছে। তাই বড় মেয়ের বিয়ে দিতে পেরেছি, ছোট মেয়েকেও পড়াতে পারছি।