চিনে আমির খানের ছবির সাফল্য থেকে শিক্ষা নিতে পারে বলিউড
সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের নতুন দিগন্ত খুলেছে। তবে এই সাফল্য হঠাত্ এসেছে, এ কথা বলা যাবে না
- Total Shares
গল্প মনে হলেও, এটাই সত্যি। চিনের রাজধানী শহরের অলিতে-গলিতে প্রতি ২০ ফুট অন্তর আমির খান লোকের চোখ টানছেন। এর আগে সাধারণ বেজিংবাসীর মনে আর কোনও ভারতীয় অভিনেতা এতটা প্রভাব ফেলতে পারেননি।
গত বছর দঙ্গল ছবিটি বেজিংয়ে চূড়ান্ত সফল হয়েছিল। ১,০০০ কোটি টাকার ব্যবসা করে চিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ-হলিউড সিনেমার তকমা লাভ করেছিল। এ বছর, অমিরের সিক্রেট সুপারস্টার ছবিটি ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।
১৯ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছে এই ছবি এবং এক সপ্তাহের মধ্যে চিনে যা ব্যবসা করেছে তা ছবিটির ভারতের বাজারের আয়কে ছাপিয়ে গেছে। ২৯ জানুয়ারির হিসাব অনুযায়ী চিনে সিনেমাটির আয় ছিল ৪০০ কোটিরও বেশি। অর্থাৎ, ভারতের বক্স অফিস আয়ের থেকে ছ'গুণ বেশি।
চিনের একটি দৈনিকে এক চলচ্চিত্র সমালোচক লিখেছেন, "খান আবার নিজেকে প্রমাণ করলেন। এই ছবিটি অসাধারণ ও মননশীল।"
প্রশ্ন হচ্ছে এই ছায়াছবির সাফল্যের চাবিকাঠি কী? নিঃসন্দেহে, অমির খান। বুদ্ধিদীপ্ত প্রচার এই ছবিটিকে জনপ্রিয় করে তুলতে সাহায্য করেছে। চিনের সংবাদমাধ্যমে আঙ্কেল অমির বলে খ্যাত আমির খান এই ছবির প্রচারে এসে বিখ্যাত চিনা অভিনেতা ডেং চাওেয়র সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করেছেন। আবার তাঁকে দেশের প্রাক্তন জাতীয় প্রশিক্ষক লিউ গুওলিয়াংয়ের সঙ্গে টেবল-টেনিসও খেলতে দেখা গিয়েছে। দঙ্গলের জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখেই এই ছবি তৈরি করা হয়েছে। এর আগে, অমির খান অভিনীত পিকে ও থ্রি-ইডিয়টস-ও যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিল চিনে।
দঙ্গল ও সিক্রেট সুপারস্টারের সাফল্য দেখে অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন যে বলিউড এ বার সত্যি সত্যিই চিনে প্রবেশ করেছে। এই পরিস্থিতিতে ফেব্রুয়ারিতে সলমন খান অভিনীত বজরঙ্গি ভাইজান ও দক্ষিণি ছবি বাহুবলী মুক্তি পেয়েছে চিনে।
এখনও একটা বিষয় পরিষ্কার নয়- চিনের সঙ্গে আমিরের কোনও অন্য সম্পর্ক রয়েছে, নাকি বলিউডের জাদুতে মজেছে চিন? বজরঙ্গি ভাইজান ও বাহুবলীর একটা সমস্যা ছিল, ছবি দুটি খুব দেরিতে মুক্তি পায় চিনে। উল্টোদিকে, সিক্রেট সুপারস্টার কিন্তু ভারতে মুক্তি পাওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যেই চিনে মুক্তি পেয়েছে। সলমন খান চিনে সে ভাবে ছবির প্রচারের চেষ্টা করেননি। আমির কিন্তু তাঁর ছবির প্রচারের জন্য বেশ কয়েকবার চিন সফর করেছেন। এমনকি, চিনের নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ওয়িবো-তে নিজের প্রোফাইলও খুলেছেন।
সিক্রেট সুপারস্টার থেকে ভবিষ্যতের ভারত-চিন যৌথ উদ্যোগের ব্যাপারেও আন্দাজ পাওয়া যায়। অনেকেই হয়ত জানেন না যে চিনের প্রোডাকশন সংস্থা পিকক মাউন্টেন প্রথম দিন থেকেই সিক্রেট সুপারস্টার ছবির নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাই এই ছবি আচমকাই চিনে সফল হয়েছে, এ কথা মনে করার কোনও কারণ নেই। ছবির নির্মাতারা অনেক ভেবেচিন্তেই চিনের হলগুলিতে এই ছবি দেখানোর পরিকল্পনা করেছিলেন।
এর আগে ২০১৬ সালে এই ভাবে নির্মিত দুটি ছবি- কুংফু যোগা ও জুয়ানজ্যাং - একদম জনপ্রিয় হয়নি। এ থেকেই বোঝা গেল যে উপযুক্ত উদ্যোগ থাকলেই চলচ্চিত্র পিপাসুরা সিনেমাটিকে আপন করে নেবেন। ভারতীয় অভিনেতাকে দিয়ে কুংফু বা জ্যাকি চ্যানকে দিয়ে নাচ-গান করিয়ে জোড়াতালি দেওয়া সিনেমা কখনোই সফল হবে না।
এই সাংস্কৃতিক যোগাযোগ থেকে দুদেশের সম্পর্ক কী ভাবে লাভবান হবে? চিনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য খুব জনপ্রিয়। রবীন্দ্রনাথের পরে এখন আমিরকেই দুদেশের সম্পর্ক রক্ষার প্রতীক হিসাবে মনে করা হচ্ছে। চিনের সরকারি সংবাদসংস্থাও লিখেছে, চিন ও ভারতের সম্পকর্ এগিয়ে নিয়ে যেতে আরও বেশি করে আমির খানের ছবি দেখানো দরকার।
আমিরের চিন-প্রীতি চিন সরকারকে এই ছবি মুক্তি ও প্রচারের জন্যে উদ্বুদ্ধ করেছে, এমন মন্তব্যের সময় এখনও আসেনি। এমনিতে চিন সরকার কিন্তু সে দেশে বিদেশি ছবি মুক্তির ব্যাপারে ভীষণ রক্ষণশীল। তবে এই মুহূর্তে অমির খানের সাফল্য কিন্তু বলিউডকে অনুপ্রেরণা জোগাতেই পারে।