কোনও প্রাথমিক খসড়া ছিল না, হটাৎ করেই ফেলুদা চরিত্র সৃষ্টি করেন সত্যজিৎ রায়

[বই থেকে উদ্ধৃত] সত্যজিৎ রায় নিজেও কখনও ভাবেননি কাল্পনিক ফেলুদা একদিন এতটা জনপ্রিয় হবে

 |  2-minute read |   02-05-2018
  • Total Shares

ছোট বড় সবার প্রিয় গোয়েন্দা ফেলুদা ওরফে প্রদোষচন্দ্র মিত্র বাংলা সাহিত্যে ও বাংলা চলচিত্রে সুপার-ডুপার হিট। কিন্তু জানেন কি এই গোয়েন্দাটিকে নিয়ে লেখা প্রায় অসংখ্য লেখার স্রষ্টা সত্যজিৎ রায় এই চরিত্রটা কিন্তু হটাৎই সৃষ্টি করেন। ফেলুদা চরিত্রটির জন্ম খুব আকস্মিক ভাবেই হয়েছিল। হয়ত তিনি নিজেও গোড়ার দিকে ভাবতে পারেননি যে এই কাল্পনিক চরিত্রটা এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠবে একদিন।

সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত লাল রঙের খেরোর খাতা ছাড়াও বেশ অনেকগুলো খসড়া খাতা ছিল, যেখানে তিনি মূলত তাঁর গল্পগুলো লিখতেন। তাঁর এই খসড়া খাতায় ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে কোথাও ফেলুদা চরিত্রটির কোনও উল্লেখ পাওয়া যায় না।

felu_body1_050218034804.jpgফেলুদা, তোপসে ও জটায়ু

কিন্তু ১৯৬৫ সালে তাঁর এই খসড়া খাতার তৃতীয় পাতায় খুব নাটকীয় ভাবে হটাৎ করেই এই গোয়েন্দার আবির্ভাব ঘটে। এই ধরণের একটা চরিত্র যে ওনার মাথায় রয়েছে বা উনি সৃষ্টি করতে চলেছেন তার আভাসটুকু তার আগের কোনও লেখায় মেলে না। ফেলুদা সমগ্র বইটিতে সন্দীপ রায় লিখছেন, "এক নতুন চরিত্রের জন্মের আগে, একজন লেখক সাধারণত যে-সব প্রাথমিক খসড়া করে থাকেন, উনি তা কিছুই করেননি। গত চার বছরে লেখা অন্যান্য গল্পের মতো সরাসরি আরম্ভ করে দিয়েছেন।"

ফেলুদা ও তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট খুড়তুতো ভাই তপেশরঞ্জন মিত্র বা তোপসে ও লেখক লালমোহন গাঙ্গুলি আমাদের সবার অতি প্রিয় জটায়ু যে এতটা জনপ্রিয়, এখানে অবশ্য লোকপ্রিয় বললেও ভুল হবে না, হয়ে উঠবে সেটা স্রষ্টা নিজেই ভাবেননি কোনও দিন। তবে হটাৎ করেই সৃষ্টি হওয়া এই কাল্পনিক চরিত্র যে অচিরেই আট থেকে আশি সবার ঘরের লোক হয় উঠেছিল সেটা কিছুটা হলেও অনুমান করা যায় সত্যজিৎ রায়ের ১৯৬৬ সালের খাতাগুলো থেকে। সে বছরেই তিনি ফেলুদা সিরিজের 'বাদশাহী আংটি' গল্পটির বারোটা কিস্তি লিখেছিলেন। তবে সত্যজিৎ রায় ফেলুদার গোয়েন্দাগিরির গল্প লেখা ঠিক কবে শুরু করেছেন কিংবা সেটা ঠিক কবে শেষ করেছেন সেটা তেমন পরিষ্কার নয়। কারণ এই খাতায় গল্পের শুরু বা শেষের কোনও তারিখ তিনি দেননি।

felu_bodyyy_050218035014.jpgফেলুদা ও তোপসের গোয়েন্দাগিরি

প্রথমদিকে বছরে একটা করে ফেলুদা সিরিজের গল্প লিখলেও পরের দিকে কিন্তু গল্পের চাহিদা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। তখন তিনি বছরে তিন থেকে চারটে গল্পও লিখেছিলেন। সন্দীপ রায় লিখছেন, "তবে রেকর্ড করলেন ১৯৮১ সালে। শুধু জুন মাসেই একটানা এগারো দিন লিখে শেষ করলেন তিন-তিনটে ফেলুদা কাহিনী -'ডা: মুনসীর ডায়েরি','গোলাপী মুক্তা রহস্য' ও'লন্ডনে ফেলুদা'"।

felu_body_050218035123.jpgফেলুদার চরিত্রে অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

তিনি 'কৈলাস রহস্য' বলে একটি গল্প লিখতে শুরু করেন। কিন্তু তিন পাতা লিখতে না লিখতেই হটাৎই তাঁর মাথায় খেলে গেল 'বাক্স রহস্য'-এর প্লট। তখন সব ছেড়ে এই নতুন গল্পটা নিয়ে বসলেন এবং শেষ করলেন। পরে অবশ্য তিনি 'কৈলাস রহস্য' শেষ করলেন এবং গল্পটির নাম দিলেন 'কৈলাসে কেলেঙ্কারি'।

আবার তাঁর ওই খসড়া খাতার থেকে বেশ রহস্যজনক ভাবে বেরিয়ে পড়েছিল ফেলুদা সিরিজের আরও দুটো গল্প - 'অপ্সরা থিয়েটারের মামলা' আর 'গণেশ মুত্সুদ্দির পোট্রের্ট'।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment