সলমন ভাই: তিরিশ বছর বলিউডে কাটালেন এক সুপারস্টার অথবা সলমন ভাইয়ের তিন দশক
‘বিবি হো তো অ্যাইসি’ করার তিন দশক পরেও এখনও তাঁর বয়স বাড়েনি
- Total Shares
এ বছরের ফোর্বসের বিশ্বের সবচেয়ে দামি দশজন অভিনেতার তালিকায় দু-জন ভারতীয় অভিনেতার নাম রয়েছে – অক্ষয় কুমার ও সলমন খান। কাকতালীয় ভাবে এই তালিকা প্রকাশিত হয়েছে ২২ অগস্ট, যে দিন বলিউডের চলচ্চিত্র জগতে তিরিশ বছর পূর্ণ করলেন বড় ভাই।
১৯৮৮ সালের ২২ অগস্ট মুক্তি পেয়েছিল বিবি হো তো অ্যায়সি, যেখানে অবশ্যই দ্বিতীয় মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় যিনি করেছিলেন তিনি সলমন খান।
এক বছর পরে মুক্তি পায় ম্যায়নে পেয়ার কিয়া আর তার মধ্যে দিয়েই বলিউড হয়তো আবিষ্কার করে ফেলল লাজুক বাদামী চোখের ব্রাউনি শিশুসুলভ একটি ছেলের প্রতি তার ভালোবাসা।
ম্যায়নে পেয়ার কিয়া: দীর্ঘ প্রেমকাহিনির সেই শুরু (ছবি: ডেইলিও)
তিন দশক ধরে একশোরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন সলমন খান, নানা চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন, তিনি এমন জায়গা তৈরি করে করে ফেলেছেন যা তাঁণর সমসাময়িক অন্য কেউ ই করতে পারেননি – যত বার তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, তত বেশি করে হাততালি কুড়িয়েছেন।
আমির খানের চরিত্র মূলত দুটি করে দিক নিয়ে গঠিত – পেলবতা ও পেশীবাহুল্য, সংস্কারাচ্ছন্ন প্রেমিক এবং পুরুষসিংহের মতো যোদ্ধা—নানা ভাবের মিশ্রণ রয়েছে তাঁর মধ্যে। এই সব নানা ভাবের মিশ্রণ যে শুধু তাঁর ছবিতেই দেখা যায় তা নয়, তাঁর ব্যক্তিজীবনেও তা লক্ষ্য করা যায়। তাঁর ছবির জীবন ও বাস্তব জীবন, যাকে ইংরেজিতে রিল লাইফ ও রিয়েল লাইফ—তাঁর ভক্তদের কাছে এেই দুই জীবন যেন একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে গেছে। সলমন খান নিজে যে সব ভূমিকায় অভিনয় করেন তার থেকে তাঁকে আলাদাও করা কঠিন হয়ে যায়।
ভাই দিল মে আতে হ্যায়, সমঝ মে নেহিঁ।
সলমন যে তিরিশ বছর এই চলচ্চিত্র জগতে কাটিয়ে ফেললেন, এই সময়ের মধ্যে ভারতের সমাজ অনেকটা বদলেছে – তবে ভাইয়ের চমক রয়ে গেছে কালজয়ী হিসাবে, তিনি সেটাই ধরে রেখেছেন যেটা ভারতের মধ্যবিত্ত সমাজ ছাড়তে চায় না বা ছাড়তে পারে না – রগচটা মস্তিস্কের নীচে লুকিয়ে থাকা সোনায় মোড়া একটা মন, একান্নবর্তী পরিবারে থাকা একজন মানুষ যে বদ লোকজনকে মেরে ঠান্ডা করে দেয় তবে বাবাকে বেশ ভয় পায় (একবার বলেছিলেন – মেরি উনকে সামনে ফাট জাতি হ্যায় – ওঁকে দেখলেই আমার ভয় করে), মেয়েদের সঙ্গে অস্বচ্ছন্দ, ছবির পর্দায় কখনও তাঁকে চুম্বন করতে দেখা যায়নি, বন্ধুবাসল্য ও ভাইয়েদর প্রতি প্রীতি রয়েছে, বহু সুন্দরী নারী তাঁর পিছনে ঘোরেন এবং শেষ পর্যন্ত দুঃখজনক পরিণতি ঘটে।
ভাই যেন সাধারণ মানুষের প্রতিচ্ছবি, সোনার টুকরো ছেলে। সাধারণ মানুষ যেমন ভুল করে, অনিশ্চয়তায় ভোগে ভাইও তেমন, তবুও তিনিই যে নায়ক সে কথা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। প্রত্যেকেই তাঁকে ভালোবাসেন তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত হন – সে মাল্টিপ্লেক্সেই হোক বা সিঙ্গল স্ক্রিন সিনেমা হলে।
যাই হোক, যে সব সগগুণ আমরা দেখতে পছন্দ করি, সলমনের জনপ্রিয়তা যদি তার উপরে নির্ভর করে থাকে তা হলে বলতে হবে আমরা অনেক কিছু ভুলে যেতে চাই বলেই তিনি একই রকম জনপ্রিয়।
মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে ফুটপাথবাসীদের চাপা দেওয়ার এবং সংরক্ষিত তালিকায় থাকা বিরল বন্যপ্রাণীকে গুলি করে হত্যা করার অভিযোগে ভাইজান কাঠগড়ায় উঠেছেন। ঐশ্বর্যা রাইয়ের মতো ব্যক্তি, সারা বিশ্ব যাঁকে এক ডাকে চেনে, তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও অশালীন ভাষায় কথা বলার অভিযোগ রয়েছে ভাইয়ের বিরুদ্ধে। তবে তাঁর ভক্তরা এসব কিছুই একটি মাত্র কথাতেই এড়িয়ে যান – ভুল করাই মানুষের ধর্ম।
টাইগার হামেশা জিন্দা হ্যায়: বলিউডে তেমন বাঘ একটাই থাকতে পারে (ছবি:ডেইলিও)
তাঁর সমসাময়িক অভিনেতা – আমির খান থেকে শাহ রুখ খান, অজয় দেবগন থেকে অক্ষয় কুমার – সকলেই নিজেদের ভাবমূর্তি বদল করেছেন বিভিন্ন সময়ে, সলমন তেমন কিছুই করেননি, পর্দায় তাঁর ব্যক্তি-উপস্থিতিটাই বিকিয়েছে।
যদি মনে করেন যে সলমন খানের ছবি দেখতে আপনার খুব ভালো লাগে, তাহলে হয়তো এমনও হতে পারে যে গল্পটা ঠিকমতো মনে করতে পারছেন না বা চরিত্রটাও মনে করতে পারছেন না, মনে আছে একটি বিচ্ছিন্ন অংশ যেখানে শুধু তাঁকেই মানায়, একটা কথোপকথন, ভ্রু নাচিয়ে কিছু বলা, পেশীবহুল উদর, এবং অবশ্যই খালি গায়ে পেশীবহুল শরীর প্রদর্শন। প্রেম, রাধে, চুলবুল পাণ্ডে, টাইগার প্রভৃতি সব ছবিতেই সলমন খানের তারকাসুলভ উপস্থিতিটাই আসল।
যখন বাতাস বয়: বাতাসে তিনি জামা উড়িয়ে দিচ্ছেন, ছবিতে এমন একটা দৃশ্য সকলেই দেখতে চান, এমন একটি দৃশ্যের দাবিও রয়েছে (ছবি: ডেইলিও)
আরেকটা কথা বলতেই হবে, তাঁর জনপ্রিয়তা হল সমস্যাসঙ্কুল।
বছরের পর বছর ধরে এ দেশের দর্শককূল এমন একজনকে আদর্শ করে এগিয়েছেন যিনি “মাধেমধ্যে ভুল করে ফেলেন” আর তা এমনই ভুল যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এখনও তিনি কৌমার্য ধরে রেখেছেন বলে দাবি এবং উল্টোদিকে একের পর এক বান্ধবীর প্রতি অভদ্র ও অবমাননাকর আচরণ এবং সর্বোপরি তাঁর চমকপ্রদ কথা – সমাজকে এখনও যৌনতা ও মানুষকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিতে সাবালক হতে হবে।
সলমনের জনপ্রিয়তার সেরা ব্যাখ্যা সম্ভবত তিনি নিজেই দিয়েছন ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে: “আমি মনে করি বিনোজনজগৎ হল শিশুদের জন্য অথবা প্রত্যেকের মধ্যে যে শিশু লুকিয়ে থাকে তার জন্য। অনেকে আপনার মতো বড় হতে চান, কেউ আপনার মতো হতে চান, অনেকে আপনার মধ্য দিয়ে ছোটবেলার কথা মনে করতে চান।”
এবং এই জন্যই ভাই ও ভাইয়ের ভক্তকুল কখনও বড় হয়ে ওঠে না।
ভাই নিজেও কোনও দিন বড় হয় না, আসলে ভাইয়ের কোনও বয়স হয় না।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে