আজকের মতো পরিস্থিতিতে কি রং দে বাসন্তী মুক্তি পেত?

১২ বছর আগে যখন এই ছবি মুক্তি পেয়েছিল তার চেয়ে এখন পরিস্থিতি বদলেছে

 |  4-minute read |   29-01-2019
  • Total Shares

রাষ্ট্র কোন দৃষ্টিতে তরুণদের দেখবে, বারো বছর আগে সেই ধারনা বদল করে দিয়েছিল একটি সিনেমা।

যে দেশে জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি হল তরুণ, সেই দেশে তারা যে কি বিপুল ক্ষমতার অধিকারী সেই কথাটাও বলে দেওয়া হয়েছিল তরুণদের।

ওই ছবিতে দেখানো হয়েছিল উপযুক্ত ভাবে নাড়া দেওয়ার জন্য তাদের কী ভাবে রাজনৈতিক সচেতন হতে হবে এবং তরুণরা কী ভাবে দেশকে নাড়িয়ে দিতে পারে। আমি বলছি রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা রং দে বাসন্তী ছবির কথা, যেটি একযোগে লিখেছেন কমলেশ পাণ্ডে, রেনসিল ডি’সিলভা ও মেহরা নিজে লিখেছেন।

আগামী প্রজন্ম ঠিক কী চাইছে তার সঙ্গে উপযুক্ত পরিমাণ দেশপ্রেমের মিশেল দিয়ে ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছিল এবং দেখা গেল, সমালোচকরা যেমন এই ছবির প্রসংশা করলেন তেমনি বাণিজ্যিক ভাবেও ছবিটি দারুণ ভাবে সফল হল।   

এই ছবির মধ্য দিয়ে একটি সামাজিক বার্তাও দেওয়া হয়েছিল, যে বার্তার কৃতিত্ব এই ছবিটিকেই দিতে হবে -- সরকারের দুর্নীতির দিকটিতে দেশের মানুষ যাতে খুব গুরুত্ব সহকারে নজর দেয় সেই বার্তা দেওয়া হয়েছিল এবং প্রতিবাদের ধারা হিসাবে চালু হয়েছিল শান্তিপূর্ণ মোমবাতি মিছিল।

rang-de-basanti1-cop_012919084911.jpgএবার নতুন মন্ত্রে: তরুণদের সম্বন্ধে ভাবনাই বদলে দিল রং দে বাসন্তী। (ছবি:রং দে বাসন্তী)

রং দে বাসন্তী ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন (সিবিএফসি) এটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও ভারতীয় বায়ুসেনাকে দেখিয়েছিল, সম্ভবত তাদের থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য। ওই চরম আক্রমণাত্মক ছবিটি দেখে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের কেউই কোনও আপত্তি করেনি – আমির খানকে যে দৃশ্যে ঘোড়ায় চড়তে দেখা গেছে শুধুমাত্র সেই দৃশ্যটির ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য তারা ওই দৃশ্যটি অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ডকে দেখাতে বলেছিল।

বিষয়টি অনুধাবন করতে হলে একবার ছবির গল্পটার কথা ভাবুন।

কলেজের একদল পড়ুয়া বুঝতে পারল যে তাদের যে বন্ধু বায়ুসেনার পাইলট ছিল, বিমান ভেঙে তার মৃত্যু হয়েছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও একজন নামী শিল্পপতির যোগসাজসে দুর্নীতি করে সস্তার যন্ত্রাংশ লাগানোর ফলে।

rang-de-basanti2-cop_012919084959.jpgআরডিবি – তখন যা ছিল: ভারতের যুবসমাজ এখন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এবং কর্তৃপক্ষের চোখে চোখ রেখে কথা বলে না। (ছবি:রং দে বাসন্তী)

প্রতিরক্ষামন্ত্রী এমন একটি রাজনৈতিক দলের যিনি পাশ্চাত্যবিরোধী ও মুসলমানবিরোধী আদর্শে বিশ্বাসী, যাঁর প্রতিনিধিরা গেরুয়া গলবস্ত্র পরিহিত, যে সব তরুণ-তরুণীরা জনসমক্ষে নাচা-গানা করে তাদের হেনস্থা করছে। তাদের দলেরই একজন যখন দলের শীর্ষনেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলছে, তখন সেই অভিযোগকারীকে তারা জনসমক্ষে পিটিয়ে মেরে ফেলছে।

যখন ওই ছাত্ররা বিমান ভেঙে পড়ে তাদের বন্ধুর মৃত্যুর বিচার পাওয়ার ব্যাপারে কোনও দিশাই দেখতে পাচ্ছে না তখন তারা ঠিক করল যে পুরো বিষয়টি সামনে আনতে তারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে তারা হত্যা করবে, জনসমক্ষেই তারা হত্যার দায় স্বীকার করে এবং কারাবরণ করতে চাইবে।

তবে তাদের গ্রেফতার না করে সরকার কমান্ডো পাঠাল তাদের হত্যা করতে, যার প্রবল বিরোধিতা করে ওই ছাত্রদেরই পক্ষ নিল জনতা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে যারা নায়ক হয়ে উঠেছে সেই ছাত্রদের পক্ষ নিল জনতা।

এবার আজকের কথা ভাবুন, যুক্তি দিয়ে বিচার করলে মনে হবে সমাজ অনেক বেশি প্রগতিশীল হয়েছে তবে তার বদলে অভূতপূর্ব ভাবে ছবিগুলিতে অনেক বেশি মাত্রায় চাটুকারিতা দেখা যাচ্ছে, স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা প্রায়শই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলছেন, যা আগে কোনওদিন দেখা যায়নি।

ছবির গল্পে কোনও প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও এবং যুক্তিসঙ্গত কোনও কারণ না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ছবিতে সরকারি প্রকল্পের কথা ঢুকে পড়ছে। শুধুমাত্র সরকারের নির্দিষ্ট প্রকল্পের গুণগান গাওয়ার জন্যও এখন ছবি তৈরি হচ্ছে। কোনও কারণ ছাড়াই শাসকদলের বিভিন্ন শাখার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছেন চলচ্চিত্র জগতের তারকারা। এ সবের চেয়ে আরও এককদম এগিয়ে এক চলচ্চিত্র পরিচালক তো সরকারে একনিষ্ঠ সমর্থক হয়ে উঠে আরবন নকশাল নামে একটি বইও লিখে ফেলেছেন – যারা যে কোনও প্রকারে বর্তমান সরকারের সমালোচনা করছেন তাঁদের সকলকেই তিনি বিদ্ধ করেছেন।

এখন এমন কোনও নামী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব নেই যিনি সেই সেনা আধিকারিকের নিন্দা করবেন যিনি এক নাগরিককে গাড়ির সামনে বেঁধে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন।

rdb_poster_mig-21-co_012919085031.jpgদেশপ্রেমের পথে? নাকি রাষ্ট্রদ্রোহিতা? (ছবি:রং দে বাসন্তী)

এখন যা পরিস্থিতি তাতে দেশের কোনও নাগরিক যদি সরকারের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলেন তা হলে তাঁকে বিশ্বাসঘাতকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহী বলে ঘোষণা করে আরবন নকশাল তকমা দিয়ে দেওয়া হবে – যে ছবিতে দেখানো হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে কয়েকজন সাধারণ নাগরিক বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে, সেই ছবি মুক্তি পাওয়া হত ভাগ্যের ব্যাপার।

(এখানে আরও একটি আশ্চর্যজনক ব্যাপার রয়েছে, তা হল: রং দে বাসন্তী ছবিতে ফাইটার জেট বিমানকে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে দেখানো হয়েছে।)

দেশে বিপুল জনসংখ্যা থাকলেও রং দে বাসন্তী ছবিতে বেছে নেওয়া হয়েছে তরুণদের, তারা চাইছে সরকারি স্তরে দুর্নীতি বন্ধ হোক, অযোগ্য-অদক্ষ প্রশাসনের অবসান ঘটুক – যদি মনে করা হয় যে কোনও একটা জায়গা থেকে তো পরিবর্তন শুরু হবে, তা হলে সেই বদলের জন্য এটিও একটি শক্তিশালী মাধ্যম। ছবির মাধ্যমে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে তা হল, সরকার ও রাষ্ট্র অভিন্ন নয় আর দেশের ভালো করতে চাইলে দরকারে সরকারের বিরুদ্ধেও যাওয়া যেতে পারে।

এই মুহূর্তে পরিস্থিতি অবশ্য সম্পূর্ণ বিপরীত, এখন তরুণ সমাজ প্রতিষ্ঠানপন্থী হয়ে পড়েছে এবং দক্ষিণপন্থী ভাবাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে তারাও মনে করতে শুরু করেছে যে সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলার অর্থ হল রাষ্ট্রদ্রোহিতা।

সরকারকে কোনও প্রশ্ন করা মানেই আর দেশপ্রেমিক নন, রাষ্ট্রদ্রোহী।

যে সব তরুণ এখন প্রথমবারের জন্য রং দে বাসন্তী ছবিটি দেখবে তাদের কী অনুভূতি হবে তা বোঝা বেশ দুঃসাধ্য। হয়তো এমন ভাবে তাদের মস্তিষ্ক প্রক্ষালন করা করা হয়েছে যে ওই ছবির মুখ্য চরিত্র যাঁরা, এই প্রজন্ম তাদের বিদ্রোহী নয়, রাজদ্রোহী বলে মনে করবে। কিন্তু এখনও যদি তাদের মধ্যে সহমর্মিতা ও সহানুভূতি অবশিষ্ট থেকে থাকে তা হলে অন্তত এইটুকু আশা করা যেতে পারে যে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি হল একটা ঝড়, যা বয়ে যাবে এবং জনমানসের এমন কোনও এমন কোনও ক্ষতি করবে না যা অপূরণীয়।

লেখাটি পড়ুন  ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment