শুধু সেমাই-ফিরনি নয় এই সময় পাওয়া যায় হরেক মিষ্টি, তার কয়েকটা

বিরিয়ানি-কোর্মার পরে মুখমিষ্টির নানা পদ

 |  4-minute read |   12-06-2018
  • Total Shares

রমজান ও ঈদের জন্য ঘরে ধরে চলে অনেক প্রস্তুতি। ঘর সাজানো থেকে শুরু করে ভালো ভালো জামাকাপড় কেনাকাটা, আত্মীয়স্বজনদের উপহার পাঠানো কিংবা গরিব মানুষকে দানখরাত করা এই সবকিছু তো আছেই। এই পর্বের আর একটা বিরাট দিক হল খাওয়াদাওয়া। তা ছাড়া রমজান মাসে সারাদিন উপবাসী থাকার পর খেজুরের মতো একটি মিষ্টি জাতীয় ফল ও নানা রকমের মিষ্টিপদ খেলে তৎক্ষণাৎ শরীরের শক্তি পাওয়া যায়।    

রমজানের খাওয়াদাওয়াকে দু'ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। কয়েকটি পদ যেমন তৈরি করা হয় ইফতারের (দিনের বেলায় রোজার শেষে যে পদগুলো দিয়ে সারাদিনের উপবাস ভাঙা হয়) খাওয়াদাওয়ার জন্য আর কিছু হালকা ধরণের পদ বানানো হয় সেহেরির (দিনের রোজা শুরু হওয়ার আগে ভোর রাতের শেষ খাওয়াদাওয়া) জন্য। তাই সবার বাড়িতে খাওয়াদাওয়ার অঢেল ব্যবস্থা করা হয়।

body4_061218024043.jpgগরম গরম জিলিপি

মিষ্টি পদের মধ্যেও থাকে অনেক বৈচিত্র্য থাকে, কারণ রমজান মাসে এবং ঈদে যে বিশেষ মিষ্টি পদ বানানো হয় সেগুলো তৈরি করতে অনেক সময় লাগে বলে বছরের অন্য সময়ে এইসব মিষ্টি তেমন একটা তৈরি করা হয় না।

রমজান মাসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হরেকরকম মিষ্টি পদের চল আছে। পশ্চিমবঙ্গে ইফতারের সময় তেলেভাজা, মরসুমি ফল (আম, লিচু, পাকা পেঁপে, তরমুজ প্রভৃতি), কাবাব, ছোলাবাটোরা, সিঙাড়া, পুরী-হালুয়া প্রভৃতি খাওয়া হয়।

body6_061218024226.jpgমিষ্টি পদের মধ্যেও থাকে অনেক বৈচিত্র

কলকাতার যে সব রাস্তায় প্রায় সর্বক্ষণ ইফতার বা সেহেরির জন্য খাবারদাবার মেলে সেখানে গেলেই দেখা যাবে একটা বিশাল লোহার কড়াইতে কানায় কানায় তেলে ভাজা হচ্ছে গরম গরম জিলিপি।

শহরের একটি নামী মিষ্টির দোকান যেখানে ঈদের হরেকরকম মিষ্টি পাওয়া যায় সেই দোকানের কর্ণধার এস এম আসলাম সিদ্দিকি জানান যে, "রমজান ও ঈদের সময় মানুষ নিজেদের বাড়িতে বানানো খাবার বা মিষ্টি খেতে বেশি পছন্দ করেন। এই সময় লোকেদের বাড়িতে যে সব মিষ্টি বানানো হয় সেগুলো হল সেমাই, ফিন্নি, জর্দা (বিশেষ ধরনের মিষ্টি ভাত), ক্ষীর, গাজরের হালুয়ার মতো আরও অনেক কিছু। ইফতারের সময় বাড়িতে যে ক্ষীর তৈরি করা হয় তার স্বাদটা বছরের অন্য সময় যে ক্ষীর তৈরি করা হয় তার চেয়ে অনেকটা অন্যরকম। মিষ্টির দোকানে এগুলোকে স্পেশাল ক্ষীর হিসেবে বিক্রি করা হয়।

body3_061218024638.jpgশাহী টুকরা নামটা যেমন রাজকীয় খেতেও তেমন সুস্বাদু

কলকাতার যে সব রাস্তায় দিনভর এই সময় বিভিন্ন খাবার পাওয়া যায় গেলেই দেখা যাবে দোকানগুলোতে চুড়ো করে রাখা রয়েছে সেমাই। ঈদের মিষ্টি বলতেই আমাদের অনেকের মনে প্রথমেই এই মিষ্টির নামটা আসে।  এস এম আসলাম সিদ্দিকি বলেন সেমাইয়ের চল শুরু হয় আরবের দেশগুলোর থেকে। সেমাই অনেক দিন রেখে দেওয়া যায়। ইফতারের খাবার জন্য আগের দিনে ওখানকার বাড়ির মহিলারা হাতে করে সেমাই বানাতেন। ওখান থেকেই ঈদের সময় এই সেমাই খাওয়া চল শুরু। এখন সেমাই বানানো হয় মেশিনে। খাবার সময় ঘিয়ে অল্প ভেজে দুধে ভিজিয়ে খাওয়া হয় অথবা চিনির শিরায় (রস) ডুবিয়ে খাওয়া হয়। 

body5_061218024542.jpgএছাড়াও খাওয়া হয় ফিরিনি, আফলাতুন হালুয়া ও বুন্দি লাড্ডু

ঈদের মিষ্টির মধ্যে গাজরের হালুয়াও বেশ চল রয়েছে। যদিও এই সময় বাজারের গাজর তেমন একটা মিললে না তবে এই সময় একটু দাম দিয়ে হলেও বহু পরিবার গাজর হালুয়া রাঁধার জন্য গাজর কেনেন।

আর একটি অতি প্রচলিত মিষ্টি পদ হল শাহী টুকরা। নামটা যেমন রাজকীয় খেতেও তেমন সুস্বাদু তবে কিঞ্চিৎ গুরুপাক। পাঁউরুটি, দুধ, ঘি ও পেস্তা দিয়ে বানানো হয় এই খাবারটি।

ইফতারের সময় বানানো হয় রাবড়ি। সময় থাকলে বাড়িতেই রাবড়ি বানানো হয় না হলে মিষ্টির দোকান থেকে কেনা হয় রাবড়ি।

body1_061218024517.jpgবিভিন্ন ধরণের হালুয়া রান্না হয়

ভোর রাতের সেহেরির সময় মিষ্টির পদগুলো হয়ে একটু হালকা ধরণের যেমন হালুয়া-কচুরি কিংবা হালুয়া-পরোটা।

ঈদের দিনে প্রথাগত মিষ্টিপদটির মধ্যে প্রধান যে পদ সেটা হল সির খুরমা। দীর্ঘ সময় ধরে এই খাবারটি বানাতে হয় বলে বছরের অন্যদিনগুলোতে সির খুরমা তেমন একটা তৈরি করা হয় না।

এ ছাড়াও খাওয়া হয় ফিরনি, আফলাতুন হালুয়া, বুন্দি লাড্ডু, গোলাপ জাম ও খাজলা ফেনী। খাজলা ফেনী চালগুঁড়ি, ময়দা ও সাদা তিল দিয়ে বানানো হয়। পদটি খেতে যেমন সুস্বাদু হয় তেমনই খুব মুচমুচে হয়। ছোটছোট রসগোল্লা দিয়ে বানানো হয় রসমালাই। বিভিন্ন ধরণের হালুয়া রান্না হয়। এই সময় আম পাওয়া যায় বলে আম দিয়ে বিভিন্ন মিষ্টি ও শরবত বানানো হয় যেমন আমের কাস্টার্ড, আমের পুডিং, আমের সুফলে কিংবা আমের পান্না। আমের পুডিং এই সময় বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে বাচ্চাদের মধ্যে তো এই পদটি সুপারহিট।

body2_061218024405.jpgতৈরি করা হয় বিভিন্ন শরবত

পানীয়র মধ্যে রুয়াফজা, কেশর বাদাম দিয়ে তৈরি শরবত, মিল্কশেক প্রভৃতি।   

এস এম আসলাম সিদ্দিকি বলেন "ঈশ্বর যাকে যতটুকু সামর্থ দিয়েছেন সে সেই মতোই ঈদের দিনে বাড়িতে মিষ্টি পদ ও বিভিন্ন রান্না করেন।"

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment