মহাব্রত থেকে আমার ঘোঁতন হয়ে ওঠার গল্প
সবসময় ভেবেছিলাম আমি এমন একটা কাজ করব যাতে দেশ আমাকে মনে রাখবে
- Total Shares
জনপ্রিয় হওয়ার ইচ্ছে কার না থাকে? আমারও ছিল, কিন্তু সিনেমার মাধ্যমে জনপ্রিয় হওয়ার তেমন একটা ইচ্ছে আমার কখনওই ছিল না। কখনও ভাবিনি যে সিনেমার হিরো হিসেবে আমরা নাম হবে। এখন ভাবলে বেশ রোমাঞ্চিত লাগে- আমি একটা সিনেমার হিরো। ব্যাপারখানা দারুন!
সবসময় ভেবেছিলাম আমি এমন একটা কাজ করব যাতে দেশ আমাকে মনে রাখবে।
ছবি সৌজন্যে: ইন্ডিজেনাস প্রোডাকশন
যাই হোক এবার আসি 'রেনবো জেলি'র সঙ্গে আমার যুক্ত হওয়ার প্রসঙ্গে। মৌসুমীমাসী (মৌসুমী ভৌমিক, তিনি ছবিটিতে গান গেয়েছেন) আমার মা-কে একদিন ফোন করে বললেন যে তাঁর অতিপ্রিয় এক মানুষ যাঁর নাম সৌকর্য ঘোষাল, পেশায় পরিচালক, তিনি তাঁর পরের সিনেমার জন্য একটা বাচ্চা ছেলের খোঁজে আছেন। মা যেন একবার আমাকে পরিচালকের বাড়িতে নিয়ে যান অডিশনের জন্য। কথা মতো আমি বাবার সঙ্গে দাদার (সৌকর্য ঘোষাল) বাড়িতে যাই। প্রথমদিন আমাদের দুজনের মধ্যে তেমন একটা কথা হয়নি। তবে ওখানে একটা দারুন মজার ঘটনা ঘটে ছিল। ওঁর বাড়িতে যাওয়ার পর দাদা আমাকে যখন জিজ্ঞেস করেন যে আমি ঠান্ডা কিছু খাবো না গরম কিছু তখন উত্তরে আমি বলি আগে ঠান্ডা পরে গরম খাব, কারণ গরম খেয়ে তো ঠান্ডা খাওয়া যায় না...গলা ব্যথা করবে। সেটা শুনে আমরা সবাই খুব হেসেছিলাম.. সেই হাসিটা দাদার খুব ঝলমলে লেগেছিল। আমার সেই হাসিটা দেখেই দাদা আমাকে ঘোঁতনের জন্য বেছে নিলেন।
ছবি সৌজন্যে: ইন্ডিজেনাস প্রোডাকশন
ছবিতে ঘোঁতন চরিত্রটির জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত্য টানা ষোলোদিন আমার শুটিং চলে। তবে এই ষোলোদিন যে একদম পড়াশোনার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না এমনটা কিন্তু নয়, কারণ আমার মা আমাকে খুব ভোরে ঘুম থেকে তুলে দিতেন ও সকাল ছটা থেকে সাতটা অবধি পড়াতেন আবার শুটিং সেরে রাতে ফিরে একঘণ্টা পড়তাম। ওই সময় স্কুল আমাকে খুব সাহায্য করেছিল। শিবানীম্যাম আমাকে শুটিংয়ের জন্য ছুটি দিয়েছিলেন।
আমার অংশের ডায়ালগগুল মা আমাকে পড়ে শোনাতেন আর আমি সেগুলো শুনেশুনে মুখস্থ করতাম। এ ভাবেই শুটিং-এর সময় সবকটা লাইন মনে করে বলতাম, আমার কোনও অসুবিধা হত না।
শুটিংয়ের প্রথমদিনটা একটু অসুবিধা হলেও পরের দিন থেকে তেমন একটা অসুবিধা আর হয়নি। আর একটা বড় জিনিস যেটা আমাকে খুব সাহায্য করেছিল সেটা হল শুটিং শুরু হওয়ার আগে প্রায় তিন মাস দাদার সঙ্গে আমি ওয়ার্কশপ করি। তখন বিভিন্ন পদ্ধতির সাহায্যে দাদা আমাকে এক্কেবারে তৈরি করে দিয়েছিল। ওই সময় দাদার সঙ্গে বসে দিনের পর দিন কী ভাবে শুটিং করতে হয়, ঘোঁতন ঠিক কখন হাসে কিংবা কখনই বা সে দুঃখ পায়, এই সব খুঁটিনাটি রপ্ত করে ফেলেছিলাম। তাই শুটিং করার সময় আর খুব একটা আটকায়নি।
জীবনে ওই প্রথমবার আমি শুটিং ফ্লোর ও শুটিং সেট দেখলাম। এর আগে আমি কখনও শুটিং দেখিনি। আমার মতে শুটিং খুব মজার ব্যাপার তাই আমি খুব ভালোভাবেই সেটা করার চেষ্টা করেছি।
ছবি সৌজন্যে: ইন্ডিজেনাস প্রোডাকশন
অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করে যেহেতু আমি ওই প্রথমবার শুটিং করছিলাম আমার যখন কোনও ভুল হতো তখন কী দাদা আমাকে বকাঝকা করত। উত্তরে আমি একটা কথাই বলি সেটা হল- শাসন করা তাঁরই সাজে সোহাগ করে যে। তাছাড়া বাকি যাঁরা ছিলেন যেমন শ্রীলেখা মিত্র, কৌশিক সেন কিংবা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, এঁদের সবার সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক ছিল।
শুটিংয়ের সময় অনেক মজার ঘটনা ঘটত। একটা ঘটনা যেমন এখন মনে পড়ে গেল। একদিন দাদা ক্যামেরায় যিনি ছিলেন তাঁকে বললেন দেখত মহাব্রতর গালটা একটু ফোলা ফোলা লাগছে কি না? তখন এঁকে তাঁকে জিজ্ঞেস করে দাদা জানতে পারে যে শুটিংয়ের সময় যখন ব্রেকফাস্ট আসত তখন তাতে জিলিপিও থাকতো আমি তো আমার জিলিপিগুলো শেষ করতামই তারপর সবার থেকে একটা করে জিলিপি তুলে নিতাম। তবে আমার মনে হয় মোটা হওয়ার আসল কারণটা ছিল অন্য, আসলে একজন মানুষ যখন খুব আনন্দে থাকে তখনই তাঁর ওজন বাড়ে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল।
ছবি সৌজন্যে: ইন্ডিজেনাস প্রোডাকশন
আমার প্রিয় সিনেমা হল সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সিরিজ। আর ইংরেজি সিনেমায় আমার 'র্যাম্বো' খুব ভালো লাগে। হিন্দি সিনেমার হিরোদের মধ্যে শাহরুখ খান, রণবীর কাপুর ও রণবীর সিং-কে আমার খুব পছন্দ।
ভবিষ্যতে আমি সব ধরণের সিনেমা আর সব ধরণের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।
'রেনবো জেলি'-তে পরী ধরের সঙ্গে আমার দেখা হবে, মানে আমাদের অতি প্রিয় পরী পিসি। যদিও আমি খুব একটা রূপকথা পড়িনি কিন্তু সত্যি যদি আমার সঙ্গে কখনও কোনও পরী পিসির দেখা হয় তাহলে আমি তাঁর থেকে শুধু একটাই বর চাইব আর সেটা হল আমি যেন সব সময় নিজের আত্মোন্নতি করতে পারি। তাই আমি পরী পিসিকে বলতাম আমি যেন সবসময় নিজের আত্মোন্নতির কথা চিন্তা করে আর আমি যেন নিজেকে সব সময় নিষ্কলুষ রাখতে পারি।