কবিগুরু চিনের মানুষের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করেছিলেন, চিনাদের সংগ্রামে তাঁর সমর্থন ছিল
অসংখ্য চিনা পাঠকের মতো আমিও বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়ি রবি ঠাকুরের অমূল্য কবিতা ও গানে
- Total Shares
বলাই বাহুল্য, পৃথিবীর দেশে দেশে মানুষের মনে বাংলা ভাষার অমর কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী কবিতা, গান ও অন্যান্য সাহিত্যসৃষ্টির অনবদ্য ও শতাব্দি-উত্তর প্রভাব রয়েছে। কবিও তা জানতেন। নইলে তিনি অমন অভ্রভেদী উচ্চারণ করলেন কী করে, সেই ‘১৪০০ সাল’ কবিতায়:
‘আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
কৌতুহলভরে,
আজি হতে শতবর্ষ পরে!
আজি নববসন্তের প্রভাতের আনন্দের
লেশমাত্র ভাগআজিকার কোনো ফুল, বিহঙ্গের কোনো গান,
আজিকার কোন রক্তরাগ-অনুরাগে সিক্ত করি পারিব কি পাঠাইতে
তোমাদের করে,আজি হতে শতবর্ষ পরে?’
শতাধিক বছর পরে এসে আজ অসংখ্য চিনা পাঠকদের মতো আমিও বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়ি এশিয়ার প্রথম নোবেল বিজয়ী রবি ঠাকুরের অমূল্য কবিতা ও গানে। আমার বিশেষ সৌভাগ্য এই যে, আমি তাঁরই ভাষায়, অর্থাৎ সুমধুর বাংলা ভাষায়, তাঁর সাহিত্যের রূপ-রস-গন্ধ মেখে নিতে পারছি আমার অনুভবের তারে তারে। লোকান্তরিত সেই মহা-মনীষীকে আমিও বাংলা ভাষার আরেক দিকপাল কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো তাঁর সাহিত্যের অফুরান রত্ন-ভাণ্ডারে দেখতে পাই:
‘আজি হতে শতবর্ষ আগে
কে কবি করেছিলে গান...শত অনুরাগে,
আজি হতে শতবর্ষ আগে!’
এরই জবাবি কবিতায় নজরুল আমাদের অর্থাৎ শতবর্ষ পরের পাঠকদের মনের কথাই লিখেছেন চমৎকার ভাবে:
‘হায় মোরা আজ,
মমতাজে দেখিনি, দেখিতেছি তাজ’
বলতে দ্বিধা নেই, বিষয়বস্তুর আকার ও বৈচিত্র্যের বিচারে চিনে রবীন্দ্রসাহিত্য সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লেখা ‘সিন্ধুতে বিন্দু’ বললে ভুল হবে না। তিনি এমন একজন মহামনীষী, যিনি নিজেই একই মহাবিশ্বে তাঁর অবস্থান চিহ্ণিত করে গিয়েছেন একটি গানের চরণে:
‘আকাশ-ভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ
তাহারি মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থানবিস্ময়ে তাই জাগে, জাগে আমার গান’
একজন রবীন্দ্রপ্রেমী চিনা হিসেবে আমি এ প্রবন্ধে কেবল চেষ্টা করছি রবীন্দ্রসাহিত্যের চিনে প্রভাব তুলে ধরা এবং দুই-একটির উপর সামান্য আলোকপাত করার।
চিনে রবীন্দ্রসাহিত্যের অনুবাদ
বলে রাখা ভাল, বিশ্বকবির অনন্য লেখার ইংরেজি অনুবাদের হাত ধরেই বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে চিনের পাঠকদের আনুষ্ঠানিক পরিচয় ঘটেছে বিশ শতকের গোড়ার দিকে। ১৯১৩ সালের ১ অক্টোবর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, চিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক সাময়িকী তংফাং জাজি (Dongfang zazhi, Eastern Miscellany)- তে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্ম চিনা মানুষের কাছে তুলে ধরে তাঁর প্রশংসা করা হয়। এই সময়ে এ সাময়িকীর সম্পাদক ছিয়ান জিশিউ (Qian Zhixiu) –এর লেখা থাইক্যআর ত্য রেনশেংকুয়ান (Tai’ge’er de renshengguan-The Worldview of Tagore) প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধের সাথে রবিঠাকুরের একটি ছবিও ছাপানো হয়।
১৯১৫ সালে ছেন তুশিউ (Chen Duxiu) প্রথম বারের মতো রবীন্দ্রনাথের কবিতা অনুবাদ করে সাময়িকী ছিংনিয়ান জাজিতে ছাপেন। ছেন তুশিউ চিনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা (সিপিসি ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত), পিকিং ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং চিনের বামপন্থী সাময়িকী ছিংনিয়ান জাজি (Qingnian zazhi, Journal of the Youth)-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তিনি ইংরেজি গীতাঞ্জলি থেকে চারটি কবিতা অনুবাদ করে প্রকাশ করেন।
রবীন্দ্রনাথ ১৯২৪ আর ১৯২৯ সালে চিন সফর করেছিলেন
রবীন্দ্রনাথ ১৯২৪ আর ১৯২৯ সালে চিন সফর করেছিলেন। তাঁর লেখা আর ভাষণ চিনা পাঠকদের মাঝে তুমুল আলোড়ন তোলে। আর সরাসরি বাংলা থেকে রবীন্দ্রসাহিত্যের চিনা ভাষায় রূপান্তর শুরু হয় গত শতকের সত্তরের দশকে শি জেন (আসল নাম শি সু জেন, চিনের প্রথম বাংলা ভাষা অনুবাদক, বিশ্বভারতীতে বাংলা ভাষা শিখেছিলেন) এবং চিন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলাভাষী চৈনিকদের অনুবাদকর্মের মধ্য দিয়ে। চিনের প্রধান রবীন্দ্র অনুবাদকদের মধ্যে কবিগুরুর বন্ধু প্রয়াত কবি শ্যু জি মো এবং লিন হুয়েই ইন, প্রয়াত লেখক বিং সিন ও জেং জেন তুও, প্রয়াত প্রফেসর লি ইউয়ান শান ও তাঁর স্ত্রী প্রফেসর লিও আই হাও, প্রফেসর লিউ আন উ, প্রফেসর পাই খাই ইউয়ান, প্রফেসর শি চিং উ, প্রফেসর তোং ইয়ৌ ছেন, মাদাম চুং শাও লি, মাদাম ফোং সিও ছিয়েন, প্রমূখ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। মূলতঃ তাঁদের অনুবাদকর্মে রবীন্দ্রনাথের অসামান্য সাহিত্যকীর্তির সঙ্গে চিনা পাঠকদের পরিচয় ঘটে এবং চিনে দ্রুত সমাদৃত হয়।
১৯৬১ সালে কবির শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে চি শিয়ানলিন-এর উত্সাহ পেয়ে লিউ আনউ (Liu Anwu) এবং অন্যান্য গবেষক ও অনুবাদকের চেষ্টায় ইংরেজি ও রাশিয়ান ভাষা থেকে অনুবাদ করে ১০ খণ্ডের থাইক্যআর জুওফিনচি (‘Tai’ge’er zuopinji’, ‘রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যকর্ম সংকলন’) চিনের পিপলস সাহিত্য প্রকাশনা কেন্দ্র (The People’s Publishing House, Beijing) থেকে প্রকাশিত হয়।
২০০০ সালে চিনের হ্যপেই শিক্ষা প্রকাশনা (Hebei Education Press) থেকে ২৪ খণ্ডের থাইক্যআর ছুয়ানচি (‘Tai’ge’er quanji’, অর্থাৎ রবীন্দ্র রচনাবলী) প্রকাশিত হয়। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিউ আনউ এ রচনাবলীর প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা অনুবাদক দলে পাই খাইইউয়ান (Bai Kaiyuan), শি চিংউ (Shi Jingwu), তুং ইয়ৌছেন (Dong Youchen), হুয়াং জিখুন (Huang Zhikun) এবং লি ইউয়ানশান (Li Yuanshan) কাজ করেন। অন্যান্য অনুবাদক ইংরেজি, রাশিয়ান বা হিন্দি থেকে অনুবাদ করেন।
চিনের প্রধান রবীন্দ্র অনুবাদকদের মধ্যে কবিগুরুর বন্ধু প্রয়াত কবি শ্যু জি মো এবং লিন হুয়েই ইন
২০১৬ সালে সর্বশেষ এবং সম্পূর্ণ রবীন্দ্র রচনাবলী থাইক্যআর জুওফিং ছুয়ানচি (‘Tai’ge’er zuopin quanji’, রবীন্দ্র সাহিত্যকর্ম রচনাবলী) চিনা ভাষায় অনুবাদ করা হয়। অধ্যাপক তুং ইয়ৌছেন এ কাজের প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। চিনের পিপলস পাবলিশিং হাউস এ বিশাল অনুবাদকর্ম প্রকাশ করে। ৩৩ খণ্ডের এ অনুবাদকর্ম বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র রচনাবলী অনুসরণ করে বাংলা ভাষা থেকে চিনা ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এ অনুবাদ কাজে চিন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগের প্রবীন অনুবাদক পাই খাই ইউয়ান, শি চিং উ, জুং শাও লি (Zhong Shaoli), ফেং শিউ ছিয়ান (Feng Xiuqian) এবং প্রয়াত অধ্যাপক লি ইউয়ান শান-এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তাঁরা চিনে বাংলা সাহিত্য চর্চা বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের শিল্পকর্ম অনুবাদে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন। বর্তমানে নবীন অনুবাদকের মধ্যে ইয়ু কুয়াং ইউয়ে (Yu Guangyue), ইয়াং ওয়েই মিং (Yang Weiming), ছাও ইয়ান হুয়া (Cao Yanhua) এবং ছাই ইউয়ে(Cai Yue) চীনে বাংলা সাহিত্য চর্চা সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করছেন।
চিনে রবীন্দ্রসাহিত্যের প্রভাব
দূরপ্রাচ্যের জাপান থেকে পাশ্চাত্যের মার্কিন মুলুক পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ তাঁর অনন্য লেখার যে দ্যুতি ছড়িয়েছেন, তার বেশ অনেকখানি চিনে গিয়ে পড়ার অনেক কারণের মধ্যে ঐতিহাসিক, সামাজিক ও মনস্তাত্বিক কারণও রয়েছে। কবিগুরু চিনের গণমানুষের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করেছিলেন। বিশেষ করে সামন্ত ও বহিঃশক্তির বিরুদ্ধে চিনাদের সংগ্রামে তাঁর ছিল প্রত্যক্ষ সমর্থন। যেমন চিনাদের আফিম বিরোধী সংগ্রামের পক্ষে কিংবা তৎকালীন জাপানি আগ্রাসীদের নানচিং হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে তিনি বলিষ্ঠ ভাবে কলম ধরেছিলেন।
১৯২৪ সালে শ্যু জি মোর নেতৃত্বাধীন নিখিল চিন লেখক সমিতির আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ প্রথম চিন ভ্রমণ করেন। সে সময় তাঁর ইংরেজিতে অনুদিত গীতাঞ্জলি চিনা কবি-সাহিত্যিক ও পাঠকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। সেই তখন থেকেই রবীন্দ্রসাহিত্য চিনা রাজনীতিক, কবি-সাহিত্যিক ও পাঠকদের মনের গভীরে শেকড় গড়ে, যা ধীরে ধীরে ডালপালা ছড়িয়ে আজ বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়েছে। চিনের সাহিত্য উন্নয়নে রবীন্দ্রনাথ দুই দিক থেকে গভীর প্রভাব ফেলেছেন। এক দিকে, নব-জাগরিত ‘নতুন কবিতা’ প্রবণতার উন্নয়নে অনুপ্রেরণা দেওয়া, বিশেষ করে প্রতিভাবান কবি শ্যু জি মো-সুশিমার মাধ্যমে। অন্য দিকে শিশুসাহিত্যের বীজ চিনা সাহিত্যের ভূমিতে লাগিয়ে দেওয়া, বিশেষ করে তাঁর অন্যতম অনুরাগী বিং শিন (Bing Xin) -এর মাধ্যমে।
১৯ শতাব্দীর বিশের দশকে চিনা সাহিত্য জগতে দুই ঘটনা প্রধান্য পেয়েছিল। এক হল রবীন্দ্রনাথের চিন সফর, আরেকটি হল তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য সমিতির প্রতিষ্ঠা। ওয়েনশুয়ে ইয়েনচিউহুই (Wenxue yanjiuhui, Literature Study Association) প্রতিষ্ঠিত করেছেন জেং জেন তুও-যিনি রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্ম সুবিখ্যাত অনুবাদকের মধ্যে অন্যতম এবং শেন ইয়ান পিং (Shen Yanbing-) যাঁর সাহিত্যিক নাম মাও তুন (Mao Dun)। তারা রবীন্দ্রনাথের চীন সফরে উষ্ম স্বাগত জানিয়েছিলেন। ছুয়াং জাও শ্য (Chuangzaoshe, Creation Society) প্রতিষ্ঠা করেছেন কুও মো রুও (Guo Moruo)-রবীন্দ্রনাথের অন্যতম অনুরাগী পাঠক। শিন ইউয়ে শ্য ((Xinyueshe, the Crescent Moon Society) প্রতিষ্ঠা করেছেন সুই জি মো-সুশিমা এবং অন্যান্য বিশিষ্ট লেখক হু শি (Hu Shi), ওয়েন ই তুও (Wen Yiduo)ও লিয়াং শি ছিউ (Liang Shiqiu) প্রমুখ। ‘শিন ইয়ুয়ে’ নামটিও রবীন্দ্রনাথের ‘the Crescent Moon’ থেকে অনুপ্রানিত হয়ে নেয়া হয়েছে। যদিও শিন ইয়ুয়ে সমিতি ১৯৩১ সালে সুশিমা মৃত্যুর পর বন্ধ হয়েছে, তবু এ সমিতি চিনের নতুন কবিতা আন্দোলনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো।
তাছাড়া, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মের অনুবাদের ভিত্তিতে চিনের গবেষকরা দক্ষিণ এশিয়া গবেষণার আওতায় রবীন্দ্রচর্চার আরও সমৃদ্ধ ও বৈচিত্রপূর্ণ রূপ ধরে সামনে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছেন। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চি শিয়ান লিনের (Ji Xianlin) উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়া স্টাডিজ কেন্দ্রে অনেক গবেষণার কাজ করা হয়েছে। বর্তমানে অধ্যাপক জাং কুয়াং লিন (Zhang Guanglin), থাং রেন হু (Tang Renhu) এবং ওয়েই লি মিং (Wei Liming) এতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। অধ্যাপক ওয়েই লি মিং রবীন্দ্রচর্চা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন।
চিনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাহিত্য বিভাগ ছাড়াও চিনের স্কুল-কলেজে রবীন্দ্রসাহিত্য পাঠ্য বটে
অধ্যাপক ইয়ু লুং ইয়ু (Yu Longyu) শিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ভারত গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেখানেও রবীন্দ্রনাথ সংক্রান্ত চর্চা চলছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দিক থেকে রবীন্দ্রচর্চায় চিনের সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমির গবেষক লিউ চিয়েন (Liu Jian) ও কুং চিং(Gong Jing), পেইচিং নর্মল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হ্য নাই ইং (He Naiying), শাংহাই থং চি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুন ই শুয়ে (Sun Yixue), পেইচিং ফরেন স্ট্যাডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তুং ইয়ৌ ছেন, শাংহাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তোং হোং চিউন (Dong Hongjun), চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আই তান (Ai Dan), ছিংতাও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হো ছুয়ান ওয়েন (Hou Chuanwen), থিয়েনচিন নর্মল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লি ইউয়ে চিন (Li Yuejin), সিছুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন শি নান (Yin Xinan) এবং লানচৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাও শি ছাং (Mao Shichang) প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। ১৯৭৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজারেরও বেশি রবীন্দ্রচর্চা সংক্রান্ত গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
চিনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাহিত্য বিভাগ ছাড়াও চিনের স্কুল-কলেজে রবীন্দ্রসাহিত্য পাঠ্য বটে। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে রবীন্দ্রনাথের বহু কবিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চিনের অসংখ্য তরুণ-যুবকদের আবেগময়তায় রবীন্দ্রনাথের অবস্থান পর্বতপ্রমাণ। তাদের সংগ্রহে মহা-মনীষীদের অমূল্য বাণীর তালিকায় রবীন্দ্রনাথ শীর্ষে। এ ছাড়াও চিনের প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও অমর কীর্তি নিয়ে নিয়মিত ও বিশেষ তথ্য ও তথ্যভিত্তিক প্রচারণার কাজ হয়েছে এবং হচ্ছে।
২০০৯ সালে চিন প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে চীনের হুয়ানছিউ শিপাও (Global Times) পত্রিকায় ‘আপনার মনে চিনের ওপরে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ৬০জন বিদেশী ব্যক্তি’ নামক একটি সমীক্ষা করার সময় দেখা গেছে, সাহিত্যিক তালিকার মধ্যে রুশ লেখক তলস্তয়, গোর্কি ও ড্যানিশ শিশু সাহিত্যিক ও লোকসাহিত্যিক অ্যান্ডারসনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথও এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রবন্ধ বিশ্বসাহিত্যে লিখেছেন ‘আমাদের অন্তঃকরণে যত-কিছু বৃত্তি আছে সে কেবল সকলের সঙ্গে যোগস্থাপনের জন্য। এই যোগের দ্বারাই আমরা সত্য হয়, সত্যকে পাই।’ রবীন্দ্রনাথ চিনাদের আন্দোলিত করেছেন, কারণ তিনি প্রেমের কবি, সত্যের কবি এবং মানুষের কবি। আমরা তাঁরই দানে পরিপূর্ণ, তাঁরই কাছে ঋণী। তাই তাঁর ভাষাতেই বলি:
‘তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান
গ্রহণ করেছো যত
ঋণী তত করেছো আমায়।’