'কয়ামত সে কয়ামত তক'-এর হাত ধরে বলিউডে কী ভাবে লাগে বদলের হাওয়া
মনসুর খানের ক্লাসিক সিনেমাটি এ বছর ২৯ এপ্রিল তিরিশ বছরে পা দিল
- Total Shares
মনসুর খানের 'কয়ামত সে কয়ামত তক' (কিউএসকিউটি) ছবিটি ১৯৮৮ সালের ২৯ এপ্রিল মুক্তি পায়। গত সপ্তাহে ছবিটি তিরিশ বছরে পা দিল। হিন্দি সিনেমার বিভিন্ন ক্লাসিক সিনেমাগুলির মধ্যে এই ছবিটিও জায়গা করে নিয়েছে। এই ছবিটি সর্বকালের সেরা বা ক্লাসিক ছবির মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। আগে এই ধরনের ছবিকে কোনও দিনই ক্লাসিক আখ্যা দেওয়ার উপযুক্ত বলে বিবেচনাই করা হত না।
এটিই প্রথম হিন্দি সিনেমা যার নামটিকে ছোট করে ডাকা শুরু হয়, অর্থাৎ কিউএসকিউটি বলে ডাকা হত। এই সিনেমাটিতে আর পাঁচটা হিন্দি সিনেমার মতো ছিল নাচ, গান ও নাটক কিন্তু সেই আর পাঁচটা গতে বাঁধা ছবিগুলোর থেকে অনেকটা উর্ধ্বে উঠেছিল কিউএসকিউটি।
মনসুর খানের 'কয়ামত সে কয়ামত তক' ছবিটি ১৯৮৮ সালের ২৯ এপ্রিল মুক্তি পায়
আজ প্রায় তিরিশ বছর পরে যদি আবার ওই ছবিগুলো ফিরে দেখা হয়, তা হলে দেখা যাবে যে, তখনকার সিনেমা এবং আজকালকার সিনেমার মধ্যে আকাশপাতাল পার্থক্য আছে। তবে হিন্দি সিনেমার পরিবর্তন কিন্তু কিউএসকিউটির হাত ধরেই শুরু হয়েছিল।
শিল্পের বিচারে অনবদ্য
বেশ অনেক দিন হয়ে গেলেও, কোনও হিন্দি সিনেমায় ওই প্রথমবার কয়েকটি সামাজিক সমস্যাকে দেখানো হয়েছিল। সিনেমাটি তখনকার সমাজ ও বাস্তবের কয়েকটি ঘটনাকে এমন সুন্দর ভাবে সিনেমার পর্দায় তুলে ধরেছিল, যা আগে এই ধরনের ছবিতে করা হয়নি।
রেডিয়োতে ২০০০ সালের চিরকালীন ও ক্লাসিক গানগুলির মধ্যে আর ডি বর্মনের সুর করা প্রথম পাঁচটি বা দশটি গানের তালিকায় ১৯৮২ সালের হিন্দি ছবি 'সত্তে পে সত্তা'র একটি গানও জায়গা করে নিতে না পারলেও, এই ছবির গান সেই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল।
এটাই প্রথম হিন্দি সিনেমা যে ছবির নামটিকে ছোট করে কিউএসকিউটি বলে ডাকা হত
গানগুলির যন্ত্রানুষঙ্গে অ্যানালগ সিন্থেসাইজার ছিল, যার ফলে গানের অভিব্যক্তি অন্য মাত্রা পেয়েছিল। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত হিন্দি ছবির গানে সিন্থেসাইজার ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এমনিতে সিন্থেসাইজারের সুর শুনতে বেশ ভালো লাগে।
এমন একটা সময় কিউএসকিউটি তৈরি করার কথা ভাবা হয়েছিল যখন হিন্দি সিনেমাজগৎ এবং দেশ, দুই বেশ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। তখন দেশ স্বাধীনতার ৪০ বছর পার করে ফেললেও অনেক প্রতিশ্রুতিই অপূর্ণ রয়ে গিয়েছিল। যুবসমাজও বেশ অস্থির হয়ে উঠেছিল।
সেই সময় এই সিনেমাটি দর্শকদের জন্য একটি নতুন ধারা নিয়ে আসে, যেখানে কয়েকজন অল্প বয়সী অভিনেতা-অভিনেত্রীরা তাঁদের চারপাশের সত্য ঘটনাগুলো আক্ষরিক ভাবে সিনেমার পর্দায় তুলে ধরেছিল।
ওই প্রথমবার কয়েকটি সামাজিক সমস্যাকে দেখানো হয়েছিল
বাস্তব জীবন থেকে অনুপ্রাণিত কয়েকটি সম্পর্ককে তুলে ধরা হয়েছিল সিনেমায়, যেমন বাবা ও ছেলে সম্পর্ক এবং বাবা ও মেয়ের সম্পর্ক। একটি প্রথাগত হিন্দি সিনেমার ধাঁচে বানানো হলেও এই সিনেমার চরিত্রগুলোর সঙ্গে তখন দর্শকরা একাত্ম হতে পেরেছিলেন।
তাহলে কী ১৯৫০ থেকে ১৯৭০-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত হিন্দি ছবির গানের স্বর্ণযুগ বলতে আমরা যে সব ছবির গানকে বুঝি, যেমন শোলে (১৯৭৫), গাইড (১৯৬৫), পিয়াসা (১৯৫৭) অথবা মাদার ইন্ডিয়া (১৯৫৭)-- যে সব ছবিকে ক্লাসিক সিনেমার মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয়. সেগুলির সঙ্গে 'সত্তে পে সত্তা' বা কিউএসকিউটি-র গানের তুলনা কি হয় না?
কোনও চলচিত্র নির্মাতার প্রভাব বা কোনও ছবির প্রভাব বিচার করার উপযুক্ত সময় হল সেই ছবিটি তৈরি হওয়ার অন্তত ২৫ বছর থেকে ৩০ বছর পর সিনেমাটি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। ঠিক যেভাবে 'পিয়াসা' ও সাহির লুধিয়ানভির গানের কথা 'জিনহে নাজ হ্য়ায় হিন্দ পর' গানটি শুনলে স্বাধীনতার পরের দশ বছরের কথা মনে পড়ে যায় ঠিক একই ভাবে কিউএসকিউটি বলেই আমাদের মনে আসে সেই ১৯৮০-র সময়কার কথা যখন তরুণতরুণীরা বাড়ির বড়দের ইচ্ছে ও নিজেদের ইচ্ছের টানাপোড়েনের মাঝে পরে নিজেদের স্বপ্নকে বিসর্জন দিতে বাধ্য হত।
হিন্দি সিনেমার পরিবর্তন শুরু হয়েছিল কিউএসকিউটির হাত ধরেই
গুরু দত্ত মারা যান ১৯৬৪ সালে। তাঁর মারা যাওয়ার পর প্রায় দুই দশক পর আমরা নাসরিন মুন্নি কবিরের লেখা থেকে আমরা জানতে পারি গুরু দত্ত কত বড় এক লেখক ছিলেন। ঠিক একই ভাবে ১৯৪১ সালের ছবি 'সিটিজেন কেন' মুক্তি পাওয়ার বেশ অনেক বছর পরে বিশ্ব বুঝেছে ওর্সন ওয়েলস কত বড় একজন পরিচালক ছিলেন।
ভাবতে বেশ অবাক লাগে যে 'সিটিজেন কেন'-এর মতো একটি সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছিল। সিনেমাটিকে দু'বছরের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় তখন, যদিও ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সিনেমাটিকে একটি ক্লাসিক বলে ঘোষণা করা হয়।
(সৌজন্যে মেল টুডে)
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে