শহরে ওড়িশি উৎসব: নৃত্য ও ছায়াপুতুলনৃত্য জনপ্রিয় করার প্রয়াস
রাজ্যের সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে আর্থিক সহায়তা ওড়িশা সরকারের
- Total Shares
প্রাচীন ভারতীয় কলা কি সত্যিই হারিয়ে যাচ্ছে? ওড়িশার উদাহরণ দিয়েই এর ব্যাখ্যা করা যায়। ওড়িশি নৃত্য এখন দেশে-বিদেশে সমাদৃত হচ্ছে। আবার পুতুলনাচ যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। ছায়াপুতুলনৃত্য তো আজকাল দেখাই যায় না। তবে সংস্কৃতির এই দুই ধারাকেই প্রসারিত ও জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছে ওড়িশা সরকার।
ওড়িশি নৃত্যের শুরু মাহারি এবং গোটিপুয়াদের হাত ধরে। পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরে মহাপ্রভুর সেবায় নিজেদের উত্সর্গ করেছিলেন মাহারিরা। অন্যদিকে গোটিপুয়া আখড়ায় ছোট ছোট ছেলেরা মেয়ে সেজে অ্যাক্রোব্যাটিক দেখাত। সে অবশ্য অনেক পুরোনো দিনের কথা। ওড়িশি নৃত্যকে জগৎসংসারে প্রতিষ্ঠিত করার পিছনে যাঁর অবদান কখনও ভোলা যায় না তিনি হলেন পদ্মবিভূষণ গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র।
শুধু দেবদেবীর আরাধনায় নয়, ওড়িশায় বিভিন্ন উৎসবের অঙ্গ এই শাস্ত্রীয় নৃত্য
এখন আর শুধু দেবদেবীর আরাধনায় নয়, ওড়িশায় বিভিন্ন উৎসবের অঙ্গ এই শাস্ত্রীয় নৃত্য। রাজ্যের বাইরেও জনপ্রিয় হয়েছে।
কোণার্ক নৃত্যোত্সবের খ্যাতি তো বিশ্বজোড়া। কোণার্ক ছাড়াও, মুক্তেশ্বর নৃত্য উৎসব, খাজুরাহো নৃত্যোৎসব, ধৌলি উৎসবের মতো দেশের নানা শাস্ত্রীয় নৃত্য উৎসবের মঞ্চে ওড়িশি নৃত্যশিল্পীরা বন্দিত ও সমাদৃত। দেশ জুড়ে শাস্ত্রীয় নৃত্যের নানা উৎসব আয়োজিত হলেও, বর্তমানে সহজে জনপ্রিয়তা অর্জনের হাতছানিকে উপেক্ষা করতে পারছে না নবীন প্রজন্ম। কখনও কখনও সুযোগের অভাবেও নবীন প্রজন্ম সরে যায় নৃত্যজগৎ থেকে।
প্রত্যেক রাজ্যেই এই শ্যাডো পাপেট থিয়েটারের ভিন্ন রূপ, রং
গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের ছাত্রী অলোকা কানুনগোও ওড়িশি নৃত্যশিল্পকে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ওড়িশি নৃত্যের প্রসারে অবদানের জন্য সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠান শিঞ্জন নৃত্যালয়ও এ ব্যাপারে অগ্রণী। নবীন ও অভিজ্ঞ শিল্পীদের এক মঞ্চে নিয়ে আসতেই ওড়িশি উৎসবের ভাবনা। শিঞ্জন নৃত্যালয় ও অলোকা কানুনগোর উদ্যোগে ৮ জুন থেকে চার দিন আইসিসিআরে সত্যজিৎ রায় পেক্ষাগৃহে চলবে এই উৎসব, যে উৎসবে আর্থিক সহায়তা করছে ওড়িশা সরকারও। তবে শুধু ওড়িশি নৃত্য নয়, এই উৎসবে প্রদর্শিত হবে ছায়াপুতুলনৃত্য রাবণ-ছায়া।
এই উৎসবে প্রদর্শিত হবে ছায়াপুতুলনৃত্য রাবণ-ছায়া
ভারতে ছায়াপুতুলনৃত্য বা শ্যাডো পাপেট থিয়েটারের রীতি বহু প্রাচীন। তবে এখন এর উপস্থিতি শুধুমাত্র ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, কেরল এবং মহারাষ্ট্রেই দেখা যায়। প্রত্যেক রাজ্যেই এই শ্যাডো পাপেট থিয়েটারের ভিন্ন রূপ, রং। ওড়িশায় এটি জনপ্রিয় রাবণ ছায়া নামে। এখানে বিশ্বাস করা হয়, রাম কখনও ছায়া দেখে লড়াই করতে পারেন না। রাবণ ছায়ার প্রতিটি চরিত্র নেওয়া হয়েছে ১৭ শতকের কবি বিশ্বনাথ খুন্টিয়ার লেখা বিচিত্র রামায়ণের থেকে।
অবলুপ্ত প্রায় এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ওড়িশা সরকার।