নেটফ্লিক্স কী ভাবে সিনেমা 'হত্যা' করছে?
২০১৮তে সংস্থাটির ৮০টি সিনেমা মুক্তি পাওয়ার কথা, তবে সিনেমা হলে নয়
- Total Shares
সিনেমাকে হত্যা করে চলেছে নেটফ্লিক্স। ২০১৮-তে মোট ৮০টি সিনেমা মুক্তি পাওয়ার কথা নেটফ্লিক্সে। বলা যেতেই পারে, সিনেমার চিরাচরিত সংজ্ঞা বদলে দিতে বদ্ধপরিকর নেটফ্লিক্স। সংস্থাটি বাজারে আসার পর এই প্রথমবার, সিনেমারও রূপান্তর ঘটতে চলেছে।
এখনও অবধি দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী সিনেমায় একই ধরণের পরিবর্তন বারেবারে হয়েছে - সিনেমা দেখার মাধ্যম বদলেছে। পঞ্চাশের দশকে টেলিভিশন, সত্তরের ও আশির দশকে ভিএইচএস এবং নব্বইয়ের দশক ও ২০০০-এ সিডি ও ডিভিডি। কিন্তু, নেটফ্লিক্স যা পরিকল্পনা করেছে তাতে দর্শকদের এবার বড়পর্দার অভিজ্ঞতা বহুল প্রচারিত মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে উপভোগ করতে হবে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
ডিসেম্বর ২০১৭ তে ৯০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৫৭৮ কোটি টাকা) খরচ করে 'ব্রাইট' সিনেমাটি নির্মাণ করেছিল নেটফ্লিক্স। সিনেমায় উইল স্মিথের মত খ্যাতনামা অভিনেতা অভিনয় করেছিলেন। তা সত্বেও, সিনেমা হলগুলোতে এই সিনেমা কতটা প্রভাব ফেলবে সে বিষয়ে একেবারেই নজর দেয়নি এই সংস্থাটি। কয়েকটি হলে সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল। কিন্তু, সিনেমাটির প্রিমিয়ার যে বাড়ির বৈঠকখানায় বসেও দেখা যাবে, তা জানাতে নেটফ্লিক্স মরিয়া প্রচার করেছিল।এই যুগে একটি সিনেমার সাফল্যের মাপকাঠি হচ্ছে সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পর প্রথম সপ্তাহের শেষে সেই সিনেমাটি কত টাকার ব্যবসা করল। কিন্তু 'ব্রাইট' নিয়ে নেটফ্লিক্সের পরীক্ষায় মাপকাঠি নির্ধারণের কোনো সুযোগ ছিল না। কেউ জানতেই পারল না সিনেমাটির দর্শক সংখ্যা কত সিনেমাটির থেকে কত টাকা আয় হয়েছে।
এই সিনেমাটির রিভিউগুলো একেবারে নিরস ছিল। 'ব্রাইট' যখন ক্রমশ অন্ধকারে চলে যাচ্ছিল তখন নেটফ্লিক্স নতুন পদক্ষেপ করল। বিশ্বজুড়ে নেটফ্লিক্সের ১১০ কোটির বেশি দর্শক রয়েছে এবং তাঁরা কী দেখতে ভালবাসেন তা জানতে অ্যাডাম স্যান্ডলের-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হল নেটফ্লিক্স। এই পরিকল্পনায় বাজিমাত করল সংস্থাটি। নেটফ্লিক্সের নিজস্ব 'হাউস অফ কার্ডস' বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হল। পাশাপাশি, যে সিনেমাগুলো সিনেমা হলে মুক্তি পায়নি তাদের নিয়ে প্রদর্শনী শুরু করে দিল সংস্থাটি।
এর পরেই নেটফ্লিক্স সিনেমা নির্মাণ শুরু করল এবং 'ব্রাইট' নির্মাণের সময় তাদের পরিকল্পনাও পরিষ্কার হয়ে গেল।
সিনেমা হলগুলো থেকে কত টাকা আয় হল তা নিয়ে কোনওদিনও চিন্তা করেনি নেটফ্লিক্স। তাই ২০১৮ তে সংস্থাটি যখন ৮০টি সিনেমা (পড়ুন প্রতি মাসে ছটা করে এবং প্রতি সপ্তাহে একটি করে) মুক্তির সিদ্ধান্ত নিল দর্শকরা কিন্তু একটুও অবাক হননি।
এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে নেটফ্লিক্সের দর্শন। নতুন প্রজন্মের সিনেমা নির্মাতাদের ক্ষেত্রে সিনেমার ডিস্ট্রিবিউশন সব সময়ই একটা বিরাট চিন্তার কারণ। নেটফ্লিক্সের সৌজন্যে সেই চিন্তা এখন অতীত। মার্টিন স্কোরসেসের মতো নির্মাতার দ্য আইরিশম্যানের স্বত্ত্ব কিনে নিয়েছে নেটফ্লিক্স। ১০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৬৪২ কোটি টাকা) খরচ করা হয়েছে এই সিনেমাটির নির্মাণের জন্য। কিন্তু এই ছবিটির সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
নতুন অভিজ্ঞতা
কম্পিউটার বা মোবাইলের মতো ছোট পর্দায় সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা কেমন হবে। ১৯৯৭ তে কে আসিফের 'মুঘল-ই -আজম' (১৯৬০) বড় পর্দায় দেখবার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। এই অভিজ্ঞতা সত্যিই অনবদ্য। এবং, কোনও হাই-ডেফিনিশন স্ক্রিন সেই অভিজ্ঞতা পূরণ করতে পারে না।
ডেভিড লিনের 'দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কোয়াই' (১৯৫৭), 'লরেন্স অফ আরাবিয়া' (১৯৬২), কামাল আমরোহীর 'পাকিজাহ' (১৯৭২) বা স্টিভেন স্পিলবার্গের 'জয়স' দেখে মনে হয়েছে যে বড় পর্দায় এই সিনেমা দেখবার অভিজ্ঞতা কখনোই বাড়ির বৈঠকখানায় পূরণ করা সম্ভব নয়।
বড় পর্দার মজা
একটা সময় ছিল যখন সিনেমা বলতে শুধুমাত্র সিনেমা হল বোঝাত। কিন্তু এই যুগে সিনেমা মানে পর্দার মাপ, রিজোলিউশন ও পর্দার অন্যান্য বৈশিষ্ঠ্য। বিখ্যাত বেসবল খেলোয়াড় জ্যাকি রবিনসন একবার বলেছিলেন, "অন্যের জীবনে প্রভাব না থাকলে একজনের জীবনের কোনও গুরুত্বই নেই। তাই, 'লরেন্স অফ আরাবিয়া' বা রিচার্ড অ্যাটেনবরোর 'গান্ধী' (১৯৮২) বড় পর্দাতেই শোভা পায়। বাড়ির হোম থিয়েটার কি সেই একই অনুভূতি দর্শকদের দিতে পারে?
(সৌজন্যে: মেল টুডে)