মোগল আমলে সত্যিই কি জোর করে হিন্দুদের ধর্মান্তরকরণ হয়েছিল?
[বই থেকে উদ্ধৃত] সেই সময়কার রাজনীতির নিরিখে রাজনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে হবে
- Total Shares
রাজপুত রাজপরিবার ও মোগল সম্রাটের পরিবারের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক তখন ছিল। এই ধরনের বৈবাহিক সম্পর্কের আরও একটি উদ্দেশ্য ছিল - রাজপ্রাসাদের রীতিনীতিতে যেন একাধিক ঐতিহ্যর ছোঁয়া থাকে। রাজপুতদের কখনও আবার উচ্চবর্ণের হিন্দু, যেমন শিক্ষিত ব্রাহ্মণ ও কায়স্থদের বিভিন্ন সময় মোগল প্রশাসেনর উচ্চপদে আসীন হতে দেখা যেত।
মোগলদের যে সেনাবাহিনী হলদিঘাটের যুদ্ধে রাণা প্রতাপকে পরাজিত করেছিল সেই সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাজপুতরাই, রাজপুতদের বারেবারেই মোগল সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছে। রাজদরবারের লেখায় যে ভাবে ধর্মান্তরকরণের কথা উল্লেখ করা হয়েছ তার চেয়ে অনেক কম হারে ধর্মান্তরকরণ হয়েছিল, তাই দেশভাগের আগেও ভারতে মুসলমানরা সংখ্যালঘু ছিল।
সেই সময় কোনওরকম রাজনৈতিক সংঘাত ছিল না, এটা ভেবে নেওয়া ঠিক হবে না। তবে মোগল সাম্রাজ্যের শেষ দিকে আক্রান্ত হিন্দুরা যে ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তার সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। সেই সময়কার রাজনীতির নিরিখেই সেই সময়ের রাজনৈতিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে হবে। সংঘাত তখনও হত, কিন্তু সেগুলো একেবারেই আঞ্চলিক, যতটা আলোড়ন সৃষ্টি করা হয়েছিল তার চেয়ে অনেকটাই সাদামাটা।
জোর করে ধর্ম পরিবর্তন করে দিলে হিন্দুরা ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকতে পারত না
সাধারণ ভাবে দুই গোষ্ঠীর সম্পর্ক নির্ভর করে তাদের মধ্যেকার গ্রহণযোগ্যতা ও বিরোধিতার মাত্রার উপরে। এই দুটি বিষয় বোঝার ও বিশ্লেষণ করার দরকার আছে। আরও একটা ব্যাপার বুঝতে হবে, ভারতে ধর্ম নিয়ে যখন সংঘাতের সূচনা হয়, তখন ধর্ম হিসাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
এখন যাকে হিন্দু ধর্ম বলা হয়, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মকে তারই অংশ বলে মনে করা হয়, তাই এই ধর্মগুলোর সঙ্গে হিন্দু ধর্মের কোনও সংঘাত হয়নি। কিন্তু শিক্ষাদান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের গঠনগত দিক দিয়ে, বিশেষ করে জৈন ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের শ্রেণীবিভাগ হিন্দু ধর্মের মতো নয়। ব্রাহ্মণ্যধর্ম ও শ্রমণদের মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রচুর উদাহরণ আছে।
খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে সম্মানিত বৈয়াকরণ পতঞ্জলির লেখায় ধর্মগুলির সম্পর্ক নিয়ে সাপে-নেউলের সম্পর্কের উদাহরণ পাই। বর্তমানে ফেরা যাক। জাতির সংস্কৃতিকে আমরা জাতীয়তাবাদ বলতে পারি, এই সংস্কৃতিকে আমরা হারিয়ে যেতে না দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারি, বা যেগুলো উপেক্ষিত হয়েছে, সেগুলোর প্রতি আলোকপাত করতে পারি।
তবে জাতীয়তাবাদের নামে আবার সংস্কৃতিকেই ধ্বংস করে ফেলার সমস্যা রয়েছে। কোনও একটা মন্তব্য করে বা প্রচার টানার জন্য সাধারণ ভাবে নির্দিষ্ট পন্থা অবলম্বন করে, ইচ্ছাকৃত ভাবে সংস্কৃতির উজ্জ্বল দিকগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়। এটা আসলে একটা রাজনৈতিক খেলা যার সঙ্গে আবেগের কোনও সম্পর্ক নেই।
(সৌজন্য: মেল টুডে)