মোদী বা নেহরু কারও নয়, তা হলে কার জ্যাকেট? উৎস লুকিয়ে রাজস্থানে
নামকরণ যদি করতেই হয় তা হলে সোজাসাপটা ভাবে বলা হোক ওয়েস্টকোট
- Total Shares
শুরুতেই একটা জিনিস পরিষ্কার করে নিতে চাই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনকে যে একটি হাই-কলার, কোমর অবধি লম্বা এবং হাতকাটা জ্যাকেট উপহার দিয়েছেন তাকে বান্দি বলা হয়। একটি সংস্কৃত শব্দের থেকে শব্দটির উৎপত্তি ঘটেছে - বধ্নতি। শব্দটির মানে 'কিছু একটা বাঁধা'।
সুতরাং জ্যাকেটটি নেহরু জ্যাকেট নাকি মোদী জ্যাকেট এই নিয়ে বিতর্ক শুরু করার আগে আপনার জেনে নেওয়ার প্রয়োজন যে জ্যাকেটটি এই দু'টোর কোনওটাই নয়।
একটি জ্যাকেট সবসময় একটি জ্যাকেট। একটি জ্যাকেট 'জ্যাকেট' ভিন্ন আর কিছুই নয়।
Prime Minister @narendramodi of India sent me some gorgeous garments. These are modernized versions of traditional Indian costume, known as the ‘Modi Vest’, that can also be worn easily in Korea. They fit perfectly. pic.twitter.com/3QTFIczX6H
— 문재인 (@moonriver365) October 31, 2018
তবে নেহরু বা মোদী কিংবা শাহরুখ খানের নামে, মানে যিনি পরছেন তাঁর নামে, জ্যাকেটের নামকরণ করা যেতেই পারে। কিন্তু তাই বলে জ্যাকেটটির আকার বা মাপের কোনও পরিবর্তন হয় না। এহেন নামকরণ শুধুমাত্র জ্যাকেটটিকে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে সাহায্য করে। বর্তমানেও এই জিনিসটি লক্ষ করা যাচ্ছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে জ্যাকেটটি সচরাচর ব্যবহার করে থাকেন সেই জ্যাকেটটি এখন যে কোনও অনলাইন শপিং সাইটের পেজ জুড়ে শোভা পাচ্ছে।
যুক্তি দিয়ে বোঝাতে গেলে বলতে হয় নেহরু জ্যাকেট আদতে মোদী জ্যাকেটের বড় দাদা, কোনও মতেই যমজ ভাই নয়। প্রথমটির হাতা ও পোশাক দু'টোর ঝুলই তুলনায় বেশি। দ্বিতীয়টি, হাতকাটা ও কোমরের সামান্য নীচ অবধি লম্বা। প্রথমটি শীতকালীন পোশাক। দ্বিতীয়টি, মূলত গ্রীষ্মকালে ব্যবহৃত হয়, তবে শীতকালেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিটলসের সদস্যরাও ভারতীয় জ্যাকেটে মুগ্ধ হয়েছিলেন [ছবি: উইকিম্যাপিয়া কমন্স]
গোটা বিশ্বজুড়েই নেহরু জ্যাকেট বা আচকান বেশ জনপ্রিয়। ষাটের দশকে বিটলস যখন ভারতে এসেছিল তখন ব্যান্ডের সদস্যরা ভারতীয় সংস্কৃতি দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। যাওয়ার সময়ে তাঁরা রবিশঙ্করের সেতারের ধ্বনি বা পুঁথির মালার থেকেও বেশি সংখ্যক নেহরু জ্যাকেট নিয়ে গিয়েছিলেন।
ওই জ্যাকেট গায়ে ব্যান্ড সদস্যদের প্রচুর ছবি রয়েছে। এবং ছবিগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন এই জ্যাকেটগুলো ফুলহাতা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, বিলেতে এই পোশাকটির নামকরণ করা হয়েছিল 'বিটলস জ্যাকেট'।
দেখতে পেলেন তো শুধুমাত্র নামের জোরে একটি পোশাক কী রকম জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে?
হলিউডেও প্রভাব ফেলেছিল ভারতীয় জ্যাকেট [ছবি: উইকিমাপিয়া কমন্স]
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এই ফাঁকে প্রকাশ করা যাক। নেহরু জ্যাকেট বা তার ছোটভাই মোদী জ্যাকেটের ধরণ কিন্তু পশ্চিমী পোশাক থেকেই অনুপ্রাণিত। নেহরু যে মসৃণ ধরণের জ্যাকেটটি ব্যবহার করতেন তা আদতে কৃষকদের ব্যবহৃত বান্দির উন্নতমানের সংস্করণ। এটা খুব অবাক করার মতো বিষয় নয় যে তৎকালীন পরাধীন ভারতের ব্রিটিশ দর্জিরা একটি গ্রাম্য পোশাককে পশ্চিমী ছোঁয়া দিয়ে গোটা বিশ্বের কাছে পোশাকটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছিল। হাজার হোক, স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তো নেহরু।
এর পর থেকে নেহরু জ্যাকেটের বিভিন্ন সংস্করণ আমাদের চোখে পড়েছে - সিন কন্নারির জেমস বন্ড, লিওনার্দো নিময়ের মিস্টার স্পক কিংবা মাইক মাইয়ার্সের ডক্টর ইভিলে।
বলিউডও বা কেন বাদ যাবে? [সৌজন্য: ইউটিউব]
মোদী জ্যাকেটের অবশ্য এত রকমের সংস্করণ করা হয়নি।
এই হাতকাটা জ্যাকেট বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাই ব্যবহার করছেন। এবং তাও মোদী এটিকে জনপ্রিয় করে তোলার আগে থেকেই। আমার বাবাও তো এখন ধুতি-পাঞ্জাবির উপর স্বচ্ছন্দে মোদী জ্যাকেট পরে নিতে পারেন।
নিউ ইয়র্ক এমনকি মিলান ফ্যাশন শোতেও এই জ্যাকেটটিকে দেখা গিয়েছে। রণবীর সিং থেকে শুরু করে গোবিন্দা, মায় অমিতাভ বচ্চন অবধি এই জ্যাকেট পরে জ্যাকেটের আভিজাত্য ও জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
তর্কবাগীশ ভারতীয়রা যদি এই জ্যাকেটটির কোনও নামকরণ করতেই চান তাহলে এটিকে ওয়েস্টকোট বলাই ভালো। আসুন, রাজনীতির রং ভুলে পপ সংস্কৃতির কথা ভুলে আমরা জ্যাকেটটিকে আবার কেতাদুরস্ত করে তুলি।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে