চলচ্চিত্র উৎসবে নন্দনকে কেন নান্দনিক তো নয়ই, বরং একটু দৃষ্টিকটূ লাগল?
আমার মনে হচ্ছিল তিনি ভাবছেন কলকাতায় চলচ্চিত্রব্যক্তিত্ব একজনই রয়েছেন
- Total Shares
গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে আমার যাওয়া হয়ে উঠছে না বা আমি যাচ্ছি না। আগে তো বটেই, এ বারেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সমাপ্তি অনুষ্ঠানে আমাকে মঞ্চে উপবিষ্ট হওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তবে আমি সবিনয়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলাম। সেটি সম্পূর্ণ অন্য প্রসঙ্গ।
এবারও আমার একজন অতিশয় ঘনিষ্ট ব্যক্তি আমাকে একটি আড্ডায় আমন্ত্রণ জানায়, তাতে আমি আপত্তি করিনি। আমার আরেক জন প্রিয় ব্যক্তির ছবিও দেখানো হচ্ছিল, সেটি রিজিল হবে কিনা তাও জানি না। আমি একই সঙ্গে তার আমন্ত্রণে সেই ছবিটিও দেখতে গিয়েছিলাম, সম্ভবত ১১ নভেম্বর।
হোয়াটসঅ্যাপে এমন ছবি পেয়ে মনে হয়েছিল ফোটোএডিটিং করা হয়েছে
এর আগে আমি নন্দনের একটি ছবি হোয়াসঅ্যাপে পাই, তবে সেটি এডিটিং করা হয়েছিল কিনা জানি না, তাই আমি কয়েকজনকে সেই ছবি নিয়ে প্রশ্নও করেছিলাম। কিন্তু সে দিন যখন ফটক দিয়ে ঢুকলাম তখন দেখলাম সেটি সত্যি।
ঢুকতে প্রথমে দেখতে পাই নন্দনের সেই লোগোটি, যেটির নামকরণ ও নকশা করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। নন্দন মানে তো এস্থেটিক, তবে তার আশপাশে যে দৃশ্য দেখলাম তাকে দৃষ্টিনন্দন মনে হল না। নান্দনিক তো নয়ই, বরং একটু দৃষ্টিকটূ লাগল। আমি তো আরকিছু না হলেও কলকাতার নাগরিক, তাই খারাপই লাগল।
চলচ্চিত্র এখানে শুধু একটা উৎসব নয়, সেটা নিয়ে এখানে ছবি নিয়ে চর্চা ছিল, ছবি নিয়ে চর্চা করার পরিবেশ ছিল। আমার সঙ্গে ছিলেন বার্সেলোনা থেকে আসা একজন, তিনি পুরোপুরি বিষয়টি সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল নন, তবে তিনি হাসছিলেন। আমার মনে হচ্ছিল তিনি ভাবছেন কলকাতায় চলচ্চিত্রব্যক্তিত্ব একজনই রয়েছেন। খুব সাধারণ একজন ব্যক্তি ও চলচ্চিত্রপ্রমী হিসাবে আমার এটা খুব একটা ভালো লাগেনি।
চলচ্চিত্র দেখে যখন মঞ্চে যাচ্ছি সেখানেও দেখি প্রচুর ছবি। একজন ভদ্রলোক আবার সেগুলি গুনছেন। সেই বলছেন শতাধিক, কেউ বলছেন একাশিটি ছবি।
চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের বাইরে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছবি বিশ্বের অন্য কোনও চলচ্চিত্র উৎসবে দেখা যায় না, এতগুলি তো নয়ই
আসলে সংখ্যা নিয়ে এখানে একটি ব্যাপার রয়েছে। টেলিভিশনে আমরা বলতে শুনি এতগুলো হাসপাতাল করে দিলাম, করা হল বা সরকার করল তা নয়। পরের দিনই দেখলাম সেই সংখ্যাটি পাল্টে গেল, আবার পাল্টে গেল। এবং পাশে তাকিয়ে বললেন হয়েছে না? তখনই সভাসদ মাথা নেড়ে বললেন হ্যাঁ। সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে কিনা জানি না তবে নম্বরের একটা খেলা চলছিল। তবে সে সব নিয়ে আমি আদৌ চিন্তিত ছিলাম না।
আমাদের একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে বলতে বলা হয়েছিল, সাধারণ ভাবে তাই-ই হয়ে থাকে। তবে সেই বিষয়ের মধ্যেই সব সময় আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকে তাও নয়। বিষয়টি ছিল চলচ্চিত্র তুমি কার।
আমি মস্করা করেই বললাম যে কারও তো মনে হতেই পারে যে সিনেমা একজনেরই, অন্তত এখানে, মানে বঙ্গদেশে বা এই কলকাতা শহরে। সেটি বলায় পিছন থেকে করতালি ইত্যাদি হল। তবে পরে দেখলাম যে অনেকে একটু অস্বস্তি বোধ করছেন। আমাকে বলা হচ্ছে এটি আজকের বিষয় নয়।
একজন বললেন আমরা চলচ্চিত্র পরিচালকরা নোংরা জিনিসকে আবছা করে দিয়ে ভালো জিনিসকে দেখাই। তা হলে এক অর্থে বলা হল যে ব্যাপারটা নোংরা। আমি অবশ্য এই ধরনের কোনও কথা বলিনি। আমি বলার চেষ্টা করেছি যে একটু দৃষ্টিকটূ হয়েছে।
অনেকে ভাবছেন কলকাতায় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব একজনই
আমার মনে হয় চলচ্চিত্র পরিচালকদের কাজই হল যেটা ভালো নয় বা নোংরা তাতে আরও বেশি করে নজর দেওয়া। তাকে লুকিয়ে দেখানো আমাদের কাজ বলে মনে করি না। বিশেষত আমরা যখন নিজেদের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকার বলি।
আমি নিজে একজন স্বাধীন চলচ্চিত্রপরিচালক। আক্ষরিক অর্থেই আমি কোথাও চাকরি করি না এবং কোথাও আমার টিকি বাঁধা নেই। কোনও প্রযোজকের কাছেও আমার কোনও দায়বদ্ধতা নেই। আমার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তাই আমার যা মনে হয়েছিল তা সহজ ভাবে বলেছি। সেটি নিয়ে যে এত প্রতিক্রিয়া হবে তা ভাবতেই পারিনি। তাই যেটাকে সংবাদমাধ্যমের ভাষায় ঝড় বলে, সেটাও আমার কাছে আরও দুঃখের লাগল। আমার প্রশ্ন হল এমন একটা সাধারণ কথা বলার জন্য কাউকে অভিনন্দিত হতে হবে কেন?
ওখানে লোকের ধরন দেখেও মনে হয় গত চার-পাঁচ বছরে কিছুটা পাল্টেছে। কিছু অবশ্যই খুব সিরিয়াস রয়েছেন, বাকিরা যান সেল্ফি তুলতে। মাজিজ মাজিদির ধারেকাছেও দেখলাম একজন-দু’জন।
অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে উৎসবের বদলে মোচ্ছবের জায়গা নিচ্ছে কিনা। এবং প্রশ্ন হল সেটি কী হওয়া উচিত।
চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বরা আছেন, কোনও রকমে, এক জায়গায়
আগে নন্দনেই পুরোটা হত, এখন নেতাজি ইন্ডোরে পুরোটা হচ্ছে। অমিতাভ বচ্চন এসে দু’লাইন বাংলা কথা বললেন রব উঠছে গুরু গুরু, জামাইবাবু ইত্যাদি। আমি টেলিভিশনে ওঁর দু’একটা বক্তৃতা শুনেছিউনি যথেষ্ট ও গভীর ভাবে পড়াশোনা করে এসে বলেন, এটুকু বলতে পারি। এখন বলছেন আমার আর নতুন করে কিছু বলার নেই, আমার রিসার্চ টিম হাত তুলে নিয়েছে।
তাই কোনটা হওয়া উচিত, আরও বেশি গণতান্ত্রিক হওয়া উচিত কিনা, আগে এটি অভিজাত ছিল কিনা চলচ্চিত্র উৎসব কী হওয়া উচিত... এখন প্রশ্ন উঠতে পারে মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিয়োনি এলে তা কি বলিউড তারকাদের আসার চেয়ে বেশি গ্ল্যামারাস হত?
আমি যতদূর শুনেছি বম্বেতে যেটি হয় সেই মামিতে তারকারা কেউ মঞ্চে ওঠেন না। কয়েকজন উপস্থিত থাকেন, যাঁরা জুরি সদস্য তাঁরাই ওঠেন। এ রকম চেহারা ঠিক সেখানেও হয় না। আর যাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসব সম্বন্ধে খোঁজখবর রাখেন তাঁদের জিজ্ঞাসা করে জানলাম কোথাওই রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাটাউট বা থবি থাকে না, মামিতেও নয়।