তামিল সিনেমাজগৎ কেন কোনও দিন কলাইনার করুণানিধিকে ভুলবে না
কলাইনার আজ না থাকলেও তামিল সিনেমা তাঁর অবদান ভুলতে পারবে না
- Total Shares
করুণানিধি একজন সফল রাজনীতিক, তিনি ১৯৬৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় পাঁচবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তবে তামিল চলচ্চিত্র জগতেও তাঁর অবদান নেহাত কম নয়। তিনি একজন চিত্রনাট্যকারও ছিলেন।
তাই হয়তো করুণানিধির মৃত্যুতে গোটা তামিলনাড়ুর মানুষ নিজেদের আবেগ ধরে রাখতে পারছেন না।
করুণানিধার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর এবং দীর্ঘদিন তিনি নানা শারীরিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছিলেন। আজ তিনি আর আমাদের মাঝে নেই, তবে কথায় বলে যে একজন শিল্পীর কখনও মৃত্যু হয় না, তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যেই অমর হয়ে থাকেন।
জানতাম যে ওনাকে 'কলাইগনার' বলে সম্মোধন করা হতো কিন্তু কথার অর্থই বা কী ও কেনই বা ডিএমকের প্রধানকে এই নামে সম্বোধন করা হতো সেটা জানতাম না।
কলাইগনার কথাটির অর্থ হল "শিল্পী"
সম্প্রীতি জানলাম যে কথাটির অর্থ হল "শিল্পী"।
তাই একজন সিনেমা, সাহিত্য ও থিয়েটারপ্রেমী হিসেবে যে পথনাটকেও অভিনয় করে থাকে সেই আমি শিল্পী করুণানিধির প্রতি বেশ আকৃষ্ট হলাম।
স্কুলে থাকাকালীন করুণানিধি নাকট, কবিতা এবং সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়।
প্রথম চিত্রনাট্যকার হিসাবে সিনেমার জগতে তাঁর হাতেখড়ি হয়। তারপর তিনি অসংখ্য গল্প, উপন্যাস এবং বহু স্মৃতি কথা লিখেছেন।
নাটকের প্রতি ভালোবাসা এবং দক্ষতা পাশাপাশি নিজের বুদ্ধির জোরে ডিএমকে প্রধানের খুব তাড়াতাড়ি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময় এমনকি বিভিন্ন সামাজিক ও সংস্কারকমূলক প্রবন্ধ লেখার সময় তিনি তাঁর দ্রাবিড় আন্দোলনের সমাজবাদী ও বুদ্ধিজীবী ধ্যান ধারণারকেও কাজে লাগিয়েছিলেন।
১৯৫২ সালের ছবি 'পরাশক্তি' তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। যদিও মুক্তি পাওয়ার পরই ছবিটি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল তবে ছবিটি ঝড় তুলে ছিল এবং তারপরেই তামিল ছবিতে একটি বিপুল পরিবর্তন ঘটে। বিধবাবিবাহ, অস্পৃশ্যতা, জমিদারি ব্যবস্থা, ধর্মের নাম দ্বিচারিতার মতো সংবেশনশীল বিষয় নিয়ে আরও দুটি তামিল ছবি ‘পনম’ এবং ‘থাংয়ারাতনমের’ চিত্রনাট্য লিখে করুণানিধি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। চিত্রনাট্যকার হিসাবে এবার তাঁর নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
একটি প্রতিবেদন অনুসারে করুণানিধি, জয়ললিতা এবং এমজি রামচন্দ্রণের প্রতিভা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরেন টি আর সুন্দরম। ইয়েরকড় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত মডার্ন থিয়েটার মালিক ছিলেন তিনি।
করুণানিধির যখন মোটে ২০ বছর বয়স তখন তিনি জুপিটার পিকচার্সে চিত্রনাট্যকার হিসেবে কাজ করতেন।
১৯৪৭ সালে মুক্তি পায় তাঁর ছবি 'রাজকুমারী'। এই ছবিটি তাঁকে দারুণ জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল। সিএন আন্নাদুরাইর মতো করুণানিধিও নিজের তামিল ছবিগুলিকে রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার করার জন্য ব্যবহার করতে শুরু করলেন।
সাহিত্যে জগতে করুণানিধির অবদান
তামিল সাহিত্যে এই ডিএমকে নেতার বিরাট অবদান রয়েছে। বহুমুখী প্রতিভাশালী কলাইগনার অসাধারণ সব কবিতা, প্রবন্ধ ও বহু বই লিখেছেন।
কবিতার বই মিলিয়ে তিনি একশোর উপর বই লিখেছেন। 'মনি মকুড়ম' ও 'অবন পিঠানা' সহ বহু নাটক লিখেছেন করুণানিধি। তাঁর বই 'থেনপণ্ডি'-র জন্য তিনি রাজরাজন পুরস্কারে ভূষিত হন।
সক্রিয় রাজনীতির পাশাপাশি তিনি চিত্রনাট্যও লিখে গেছেন। তাঁর লেখা চিত্রনাট্য অবলম্বনে তৈরি তামিল ছবি 'পন্নার শঙ্কর' ২০১১ সালে মুক্তি পায়।
করুণানিধির মৃত্যুতে গোটা তামিলনাড়ুর মানুষ নিজেদের আবেগ ধরে রাখতে পারছে না
ডেকান ক্রনিক্যালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে ১৩ বছর বয়সে ডিএমকে নেতা তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, "তিরুভারুরে স্কুলে থাকাকালীন স্কুলের পত্রিকা মানভানিসানের জন্য লেখা দিয়ে তাঁর সাহিত্য জীবনের হাতেখড়ি হয়।"
তাঁর যখন ৯২ বছর বয়স, অসুস্থ শরীর নিয়েও তিনি টিভির জন্য 'রামানুজর' অনুষ্ঠানটির চিত্রনাট্য লেখেন।
এমজিআর সহ আরও অনেক অভিনেতা যেমন অভিমন্যু, মনথিরি কুমারী, মরুধানট্টু ইলাভারাসি ও নামের জন্য তিনি চিত্র্যনাট্য এবং সংলাপ লিখেছেন। পরে অবশ্য এমজিআর তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিলেন। একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিযোগী হলেও শিল্প ও সাহিত্যর প্রতি উভয়ের ভালোবাসা উভয়কে একই ডোরে বেঁধে রেখেছিল।
আজ কালাইনার আমাদের মাঝে না থাকলেও তামিল সিনেমাজগতে তাঁর অবদান কেউ কোনও দিন ভুলতে পারবে না।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন