ইতিহাসে আগ্রহ থেকে সুন্দরবনের পুরাকীর্তি ও পুঁথি সংগ্রহ

গোবিন্দপুর থেকেই চণ্ডীর পুঁথি পাই, সেই পুঁথি ১৭৫০ সালের…

 |  2-minute read |   05-01-2019
  • Total Shares

কালি কলম ও মন। কলকাতা নিয়ে এই প্রদর্শনীতে প্রবেশ করে বাঁ-দিকে ঘুরলে প্রথমেই যে পুঁথিগুলি প্রদর্শিত হচ্ছে, সেগুলি আমার সংগ্রহ। পুঁথি বা পাণ্ডুলিপি কালিতে লেখা, কলম দিয়ে। তাই অরবিন্দ ভবনের এই প্রদর্শনীতে আমার সংগ্রহ জায়গা পেয়েছে। এখানে কী রয়েছে সেই প্রসঙ্গে বলার আগে আমার সংগ্রহের সূচনা নিয়ে বলা দরকার।

ইতিহাসের প্রতি আমার আগ্রহ ছোট থেকেই, তবে তখন পুঁথি-পাণ্ডুলিপি সম্পর্কে ধারনা ছিল না। প্রথম দিকে কয়েন জমাতাম, ১০ পয়সা, ২০ পয়সা, ২৫ পয়সা – এই সব। আমি এ সব জমাচ্ছি বা মুদ্রার প্রতি আমার আগ্রহ দেখে আমার বাবার দিদিমা আমাকে একটি জর্দার কৌটো দেন, যাতে পুরোনো কয়েন রাখা ছিল। কয়েনগুলি কাগজে মোড়া অবস্থায় কৌটোর ছিল।

u-1750-shaka_010519032225.jpg১৭৫০ শকাব্দের পুঁথি (সংগ্রহ: লেখক)

একটি কাগজ দেখলাম ১৯৪৭ সালের প্রশ্নপত্র। আমি অবার হয়ে গেলাম! আরও যে সব কাগজ ছিল, সেগুলি খবরের কাগজ, ছেঁড়া, তবে সেগুলিও ১৯৪৭ সালের, মানে স্বাধীনতার বছরের। তখন খবরের কয়েকটি কাগজের প্রতি আকৃষ্ট হলাম, সংগ্রহ শুরু করলাম। এ বার আগ্রহী হলাম হাতে লেখা নথিপত্রে এবং ধীরে ধীরে পিছিয়ে গিয়ে পুঁথি সংগ্রহ শুরু করলাম।

আমার বাড়ি বারুইপুরে, আমি বারুইপুর হাই স্কুল থেকেই পড়াশোনা করেছি। এখন অসম বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছি ইতিহাস নিয়েই। আমার প্রিয় বিষয় সুন্দরবন। সেই সূত্রে সেখান থেকে পাওয়া নানা নিদর্শন সংগ্রহ শুরু করি, সেই সূত্রে বিভিন্ন জাদুঘরে গিয়ে নিদর্শনগুলি খুঁটিয়ে দেখে সেগুলি সম্পর্কে ধারনা করতে থাকি।

u-1719-ad_010519032442.jpgপুঁথি নকল করার পরে শ্রদ্ধাবনত ছাত্র এঁকেছিলেন শিক্ষকের ছবি (সংগ্রহ: লেখক)

আমার এলাকা বারুইপুরের ইতিহাস অনুসন্ধান শুরু করি, সেই সূত্রে আরও দক্ষিণে যেতে থাকি। এ ভাবেই বাসন্তীর গোবিন্দপুর থেকে একটি পুঁথি পাই, ব্যাকরণের। ১৮১০ থেকে ১৮২০ সালের মধ্যে লেখা। জয়নগর থেকে পাই ১৮০০-র গোড়ার পুঁথি। গোবিন্দপুর থেকেই চণ্ডীর পুঁথি পাই। সেই পুঁথি ১৭৫০ সালের, কালি কলম মন প্রদর্শনীতে রয়েছে। তুলোট কাগজ, কোম্পানির কাগজ প্রভৃতিতে লেখা পুঁথিও রয়েছে আমার সংগ্রহে।

tulot_010519032315.jpgতুলোট কাগজে লেখা পুঁথি  (সংগ্রহ: লেখক)

তালপাতার পুঁথি শুধু হাতেই লেখা হত না, ছাপাও হত, যদিও আমার সংগ্রহে তা নেই। হাওড়ার কোনও একটি ছাপাখানায় সেগুলি ছাপা হত। আমার কাছে রয়েছে কালিতে লেখা তালপাতার পুঁথি।

হাতে লেখা পুঁথি সংগ্রহ করতে করতে করতেই শখ হয় বিখ্যাত ব্যক্তিদের হাতের লেখা সংগ্রহ করার, তবে এটি সই বা অটোগ্রাফ সংগ্রহের মতো নয়। তাদের লেখা প্রবন্ধ, চিঠি এই সব সংগ্রহ করতে শুরু করি। এগুলি সম্ভব হয়েছে সেই সব বিখ্যাত ব্যক্তিদের পরিবারের কোনও সদস্যের সৌজন্যে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, রমেশচন্দ্র মজুমদার, প্রেমেন্দ্র মিত্র, আশাপূর্ণা দেবী প্রমুখের হাতের লেখা আমার সংগ্রহে রয়েছে, এই প্রদর্শনীতেও।

কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাথে বা পুরনো বইয়ের দোকানে বই ঘাঁটার সময়ও অনেকের হাতের লেখা পেয়েছি। 

taal_010519033423.jpgতালপাতার পুঁথি (সংগ্রহ: লেখক)

এই প্রদর্শনীতে আরেকটি আকর্ষণীয় জিনিষও রয়েছে, তা হল হাতে লেখা নথি বা ইংরেজিতে পেপার ডকুমেন্ট। এখানে রয়েছে ১৮৫২ সালের একটি ডাক্তারি শংসাপত্র যেটি আদ্যন্ত হাতে লেখা, রয়েছে আগাগোড়া হাতে লেখা খাজনার রসিদ এবং বেশ কয়েকটি চিঠি-চাপাটি। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মানিকচাঁদ ঋণ দেওয়ার সময়ে যে চুক্তিপত্র করত, সেই চুক্তিপত্রও রয়েছে আমার সংগ্রহে, ১৯৭২ সালের এই চুক্তিপত্রটি হাতে লেখা।

সুন্দরবনের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়েছি এবং সেই সূত্রে আমার সংগ্রহের অভিমুখ বদলেছে। পুরোনোগুলো রয়েছে, সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন সংগ্রহ।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

UJJWAL SARDAR UJJWAL SARDAR

Research Scholar, Assam University & Antiquities and Manuscript Collector, member of Editorial Board of Sudhu Sundarbon Charcha

Comment