আকর্ষণীয় হয়েছে প্রাণীবিজ্ঞান বীথিকা, কিন্তু পুরোনো সংগ্রহ কোথায় গেল?
যে ভাবে বীথিকা সাজানো হয়েছে, তাতে নিদর্শনগুলো ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে
- Total Shares
রবীন্দ্র জয়ন্তীতে নতুন করে খুলেছে ভারতীয় জাদুঘরের প্রাণীবিজ্ঞান বীথিকার তিনটি ঘর। আড়াই বছর মতো বন্ধ থাকার পরে তিনটি বীথিকা খুলে দেওয়া হচ্ছে জনসাধারণের জন্য। দারুণ ঝকঝকে দেখতেও হয়েছে বীথিকা তিনটি, কিন্তু, একটি ওই কিন্তু রয়েই যাচ্ছে। পতঙ্গ বীথিকায় প্রায় সবই মডেল, আগের মতো ফর্ম্যালিনে ডুবিয়ে রাখা সত্যিকার প্রাণী আর আলপিনে গাঁথা নানা রকম পোকামাকড়, পঙ্গপাল আর প্রজাপতিগুলো কোথায় গেল?
প্রাণীবিজ্ঞান বিথিকার একটি ঘরে আগে বহু নিদর্শনই ছিল ফরমালিনে ডোবানো (ছবিটি সলিল আহুজার বেঙ্গল পিক্সেলেটেড মেমোরিজ থেকে নেওয়া)
ভারতীয় প্রাণী সর্বেক্ষণের (জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া) ডিরক্টর কৈলাশ চন্দ্র দাবি করেছেন, গত ছ’বছরে এমন কিছু উনি অন্তত দেখেনি। এই পতঙ্গ বীথিকা দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ, কিন্তু যাঁরা পাঁচ-ছ’বছর আগে এই বীথিকা দেখেছেন, তাঁরা সে কথা মনে করতে পারেন। তা ছাড়া ওই বীথিকায় ঢুকতেই ডান হাতে ফর্ম্যালিনে ডোবানো মানুষের যে ভ্রুণ ছিল, তাও এখন নেই। সেগুলো কোথায়?
কৈলাস চন্দ্রের কথায়, ভারতে যে ১,০০,৬৯৩টি প্রজাতির প্রাণী রয়েছে, প্রায় সবই রয়েছে তাঁদের সংগ্রহে, তবে মোটামুটি সব সংগ্রহই ১৯৭২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন হওয়ার আগের। আশা করা যায়, প্রদর্শনী নতুন করে সাজানোর আগে সে সব সংরক্ষিত করা হয়েছে সংস্থার সদর দপ্তরে।
নতুন বীথিকা বা গ্যালারি অবশ্য বেশ ঝাঁ চকচকে হয়েছে, সেখানে প্রাণীদের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। খুব ছোট প্রাণীর বড় মডেল বানিয়ে রাখা আছে, যাতে শিশু-কিশোরকিশোরীরা আকৃষ্ট হয়, তাদের কাছে জাদুঘর আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তা ছাড়া যাঁরা জীববিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করছেন, তাঁরাও এই গ্যালারিতে এলে উপকৃত হবেন। বইয়ে ছাপা ছবির বদলে ত্রিমাত্রিক মডেল দেখতে পাবেন।
নতুন বীথিকা অনেক বেশি ঝাঁ-চকচকে
হাতি ও তিমির কঙ্কাল এবং বিভিন্ন প্রাণীর দেহাংশ যে বীথিকায় রাখা আছে, প্রথম দর্শনেই সেই বীথিকা মন কাড়তে বাধ্য। মলিন হয়ে যাওয়া নিদর্শন এখন ঝকঝক করছে, কাচ দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে প্রতিটি নিদর্শন। এই বীথিকায় ঢুকলেই মনে হবে যেন অন্য কোনও গ্রহে এসে হাজির হয়েছেন। কিন্তু ওই এক কিন্তু এখানেও। বীথিকার উঁচু দেওয়ালে, যেখানে রাখা রয়েছে হরিণ ও অন্য প্রাণীর মাথা ও শিং, সেগুলি থেকে আলো প্রতিফলিত হচ্ছে, তাই দেখতে সামান্য হলেও সমস্যা হচ্ছে।
বিভিন্ন শিকারি আর রাজা-জমিদারদের সংগ্রহ থেকে যে স্টাফড প্রাণীগুলি এখানে রাখা হয়েছে, তার বিন্যাসও আগের চেয়ে অনেক সুন্দর হয়েছে।
কাচ দিয়ে ঘিরে দেওয়ায় ধুলো-ময়লা কম জমবে নিদর্শনগুলোর উপরে। নিষেধ সত্ত্বেও জাদুঘরে রক্ষিত নিদর্শনে হাত দেওয়া অনেকের মজ্জাগত। সেই সব নিয়ম-না মানা লোকের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাবে নিদর্শনগুলি। এই বীথিকাটি আগে অনেকটা ঘুপচির মতো ছিল, কিন্তু এখন বেশ আলোকোজ্জ্বল হয়েছে, তাতে আরও আকর্ষণীয়ও লাগছে। তবে যাঁরা ছবি তুলতে চান, তাঁদের সমস্যা হবে কাচ থেকে আলো প্রতিফলনের জন্য।
নতুন সাজে পতঙ্গ বীথিকা
পরিবেশ নিয়ে যখন দুনিয়া জুড়ে হইচই চলছে, তখন এই জাদুঘর সেই পরিবেশ সচেতনতার বার্তাও দিচ্ছে। একটি বীথিতে স্টাফড প্রাণী দিয়ে জীব বৈচিত্র্য দেখানো হয়েছে। লবনাম্বু (ম্যানগ্রোভ) অরণ্য, বৃষ্টিচ্ছায় (রেন) অরণ্য প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশের বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম দেখানো হয়েছে একটি বীথিকায়। এই তিনটি বীথিকাই ২৫ বৈশাখ সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে।