মূক ও বধির পাঁচ বালক-বালিকা কী ভাবে গোয়েন্দা হয়ে উঠল

ছবিটি দেখে আমরা যদি এদের কিছুটাও বুঝতে পারি তা হবে পরিচালক হিসেবে আমার সার্থকতা

 |  3-minute read |   09-07-2018
  • Total Shares

এ এক শব্দহীন জগতের গল্প, যেখানে শব্দের প্রবেশ নিষেধ। তারা কি আমাদেরই মতো মানুষ? আমাদের মতই কি তারাও রাগ করে, খুশি হয়, অভিমান করে? তাদের দুঃখটাও কি আমাদের মতই কষ্টের? এ গল্প তাদের নিয়েই, এ গল্প তাদের জীবনের অলি গলি খুঁজে বেড়ানোর। যাদের আমরা মাঝে মধ্যেই রাস্তা ঘাটে দেখি, হাত নেড়ে কথা বলতে, 'শব্দ কল্প দ্রুম' ছবিটির মাধ্যমে আমরা শুনব তাদের কথা, বুঝব তাদের ভাষা।

body2_070918025817.jpgছবি সৌজন্য: পঙ্কজ দাস ফিল্মস প্রোডাকশন

ছবিটি করতে গিয়ে যেটা আমার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং বলে মনে হয়েছে, সেটা হল পাঁচজন বাচ্ছাকে দিয়ে মূক ও বধিরের অভিনয় করানো। তিন মাস ধরে তারা মূক ও বধির বাচ্ছাদের সঙ্গে মিশেছে, খেলা করেছে এবং একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছে। এ ভাবেই ধীরে  ধীরে এরা শিখেছে তাদের হাব ভাব ও তাদের মতো করে তাদের অনুভুতিগুলো প্রকাশের উপায়। পাশাপাশি এক শিক্ষক তাদের শিখিয়েছেন সাইন ল্যাঙ্গোয়েজ। ছবিটি করতে গিয়ে যেটা আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, সেটা হল এই পাঁচজন স্বাভাবিক বাচ্চাকে সাইন ল্যাঙ্গোয়েজ শিখিয়ে এই সব মানুষের অনেক কাছে আনতে পারলাম হয়তো। এদের জীবনে আবার যখন মূক ও বধির কোনও মানুষের সঙ্গে যদি দেখা হবে তা হলে এরা খুব সহজেই ওদের ভাষা বুঝতে পারবে, ওদের অভিব্যক্তিগুলো ওদের মতো করে চিনবে।

body5_070918030108.jpgছবি সৌজন্য: পঙ্কজ দাস ফিল্মস প্রোডাকশন

যাঁরা মূক ও বধিরদের সাঙ্কেতিক ভাষা জানেন না, তাঁরা তাঁদের আকার-ইঙ্গিতের অর্থও বুঝতে পারেন না, তবে এই ছবি করার দৌলতে সেই সব সঙ্কেতের অর্থ এই অভিনেতা-অভিনেত্রীরা বুঝতে পারবেন। এটাও তাদের কাছে একটা পাওনা। ওরা সেই সব সঙ্কেত এমন ভাবে রপ্ত করেছে এবং ওঁদের এমন ভাবে অনুকরণ করেছে যে শ্যুটিংয়ের সময় অনেকে বুঝতেই পারেননি যে বাস্তবে ওই বালক-বালিকারা কেউই মূক ও বধির নন। 

body4_070918025856.jpgছবি সৌজন্য: পঙ্কজ দাস ফিল্মস প্রোডাকশন

পরিচালক হিসাবে এটা আমার প্রথম ছবি। ছবির কাহিনি ও চিত্রনাট্য আমার লেখা। প্রথম ছবির বিষয় ভাবনা একটু অন্যরকম, কারণ, অদেখা, অজানা, অনির্মিত বিষয় নিয়ে আমার কাজ করতে ভালো লাগে। আর এই কাহিনির এক দিকে যেমন আছে মূক ও বধির মানুষের জগৎ যা সচরাচর আমরা দেখে অভ্যস্ত নই, অন্য দিকে তেমন আছে চারজন দুষ্টু লোকের পৃথিবী, যেটাও আমাদের চেনা জানার বাইরে। কোথাও এ ছবি দেখে যদি আমরা হাতের ইশারায় কথা বলা মানুষগুলোকে বুঝতে পারি, জানতে পারি যে ওরাও এক্কেবারে আমাদেরই মত, তবেই এ ছবির সার্থকতা।

রাজু, পিকু, ইমলি, অর্ক আর তিতলি, এই পাঁচ মূক ও বধির বালক-বালিকা তাদের স্কুলের গরমের ছুটিতে বাড়ি যেতে পারে না। বাড়ি থেকে তাদের যে নিতে আসেনি কেউ। এক মাস তারা হস্টেলে বসে বসে যে কি করবে ভেবে উঠতে পারেনা। মন খারাপের দুপুরগুলো শুরু হতে না হতেই ওরা দেখে ওদের ফাঁকা হস্টেলে এসে উঠেছে চার জন অচেনা লোক। তারা চুপিচুপি কথা বলে, রাগী রাগী তাকায়। কৌতূহলী ওরা পাঁচ জন হানা দেয় সেই চার দুষ্টু লোকদের ঘরে। জানতে পারে ওই দুষ্টু লোকগুলো দু'দিন পরেই একটা ভয়ঙ্কর জোর শব্দ করবে আর তাতে মারা যাবে হাজারে হাজারে মানুষ।

body3_070918025833.jpgছবি সৌজন্য: পঙ্কজ দাস ফিল্মস প্রোডাকশন

ওই পাঁচ খুদে ওদের নিঃশব্দ জীবনে শব্দকে বড় ভয় করে। দুষ্টু লোকগুলোর মতলব বানচাল করে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করে ওরা। কিন্তু ওদের কথা যে কেউ বুঝতে পারে না, তাই কেউ জানতে পারে না কী দুর্ঘটনা ঘটতে চলেছে। কেউ বুঝতে পারেনা বলে চুপ করে বসে থাকে না ওরা। নিজেরাই বুদ্ধি খাটিয়ে লুকিয়ে রাখে দুষ্টু লোকেদের ঘর থেকে চুরি করে আনা একটা যন্ত্র। পাগলের মত ওই চারজন খুঁজতে থাকে তাদের আসল আস্ত্র। তবে কি এই খুদেরা বাঁচাতে পারবে হাজার হাজার প্রাণ? না কি নিজেরাই শেষ হয়ে যাবে সেই ভয়ঙ্কর শব্দের হাতে?

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUDEEP DAS SUDEEP DAS

FILM DIRECTOR

Comment