কী ভাবে বিশ্বকর্মা পুজোর বদলে বাড়ছে গণেশপুজো
এখন গণেশচতুর্থী নিয়েও উন্মাদনা বাড়ছে বাঙালির মধ্যে
- Total Shares
রাজ্যে কলকারখানা বন্ধ। তাই বিশ্বকর্মাপুজো ভীষণ ভাবেই কমে গিয়েছে। এখন সেই জায়গা দ্রুত পূরণ করছে গণেশপুজো। পাড়ায় পাড়ায় বেড়েছে এই পুজো। কতটা বেড়েছে তা বোঝা যায় একবার কুমোরটুলিতে ঢুঁ মারলে।
বিভিন্ন স্টুডিয়োতে এখন গণেশ প্রস্তুত হচ্ছে, সামনেই গণেশচতুর্থী, সেই জন্য। মৃৎশিল্পী সমিতির সদস্য দীপক দে বললেন, “ধরুন সাত-আট বছর আগে যেখানে এই সময় ৫০-৬০টা মতো বিভিন্ন মাপের গণেশ বিক্রি হত আমাদের কুমোরটুলি থেকে এখন সেখানে হাজার পাঁচেক মতো বিক্রি হয়। গণেশপুজো খুবই বেড়েছে। এখন তো থিমের ঠাকুরও এখানে তৈরি হচ্ছে।”
গণেশপুজো কী হারে বেড়েছে বোঝা যায় কুমোরটুলিতে গেলেই (ছবি-- সুবীর হালদার)
পাড়ায় পাড়ায় গণেশ পুজো হওয়ায় এখন কুমোরটুলির শিল্পীদের কাজ অনেক বেড়েছে। নানা ধরনের গণেশ তৈরি হচ্ছে। আগে পয়লা বৈশাখ ও অক্ষয়তৃতীয়ায় ছোট লক্ষ্মী-গণেশ তৈরি হত। এখন গণেশচতুর্থীতে বিক্রিবাটা ভালো হচ্ছে।
কুমোরটুলির শিল্পী গোপাল পাল জানালেন যে এক সময় তিনি ও পার্থ পালই শুধু এই সময়টিতে গণেশ বানাতেন। এখন ঘরে ঘরে গণেশ বানানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “পুজো বাড়লেও আমাদের লাভ হচ্ছে না। এখন চাহিদা যত না বেড়েছে তার থেকে জোগান বেড়েছে বেশি। তাই আমার ব্যক্তিগগত ভাবে লাভ কিছুই হচ্ছে না।”
চাহিদার চেয়ে গণেশমূর্তির জোগান বেড়েছ বলে মনে করছেন মৃৎশিল্পী গোপাল পাল (ছবি -- সুবীর হালদার)
কারা এই পুজো করছে? বাংলায় একটা কথা আছে, “দেখাদেখি চাষ...।” শহরে চাষের সুবিধা নেই, তাই এখানে দেখাদেখি পুজো হচ্ছে। রামনবমী ও মহাবীর জয়ন্তীর মতো এর সঙ্গে এখনও পর্যন্ত রাজনৈতিক রং নেই। গণেশ সিদ্ধিদাতা, তাই পুজো শুরু হয়েছে। পুজোর কিছুটা দেরি থাকায় এখনও সব জায়গায় মূর্তি সম্পূর্ণ হয়নি। কাজ চলছে জোরদার। বিভিন্ন স্টুডিয়োর বাইরের দিকে এখন গণেশের মূর্তি। দোমেটে শেষ, রং বাকি।
বিশ্বকর্মা একেবারে নেই এমন নয়। তবে বড় মূর্তি কোথাও তেমন চোখে পড়ল না। একজন মৃৎশিল্পী তো বিরক্ত হয়েই বললেন, “কারখানা কোথায় যে বিশ্বকর্মার পুজো হবে? বাসস্ট্যান্ড আর অটোরিকশার স্ট্যান্ডগুলোয় পুজো হয়। আর যারা মুড়ি বেচে আর চপ ভাজে আজকাল তারা শুরু করেছে”
কলকারখানা বন্ধ হওয়ায় কমেছে বিশ্বকর্মাপুজো (পিটিআই)
এত কম বাজেটের পুজোয় যে তাঁদের ঠাকুর গড়ে খুব একটা লাভ নেই, তা তাঁদের কথাতেই স্পষ্ট।
বছর দশেক আগে জন্মাষ্টমীর আগে নানা রকম পুতুলের দোকান বসত কুমোরটুলি এলাকায়। এখন তাও বসে না। মাটির এই ধরনের খানকতক মাত্র দোকান রয়েছে এই চত্বরে। জন্মাষ্টমীর প্রতি আগ্রহও কমেছে কলকাতার বাঙালির। বদলে বেড়েছে গণেশপুজো।
কারা পুজো করেন?
সাত-দশ বছর আগে মূলত অবাঙালি ব্যবসায়ীদের মধ্যেই এই পুজো সীমাবদ্ধ ছিল। এখন বেশি করে এই পুজো দেখা যাচ্ছে বাঙালি পাড়াগুলোয়। দোকান ও ব্যবসার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই, পুজো করা হচ্ছে স্রেফ আনন্দের জন্য, সবই মূলত বারোয়ারি পুজো।
বাঙালির বিশ্বকর্মার জায়গা খুব দ্রুত নিয়ে নিচ্ছেন গণপতি বাপ্পা মোরিয়া।