সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলে সেই প্রতিযোগিতার নিয়মকানুন মানতে হবে
একি সত্যিকারের নারী ক্ষমতায়ন নাকি শুধুই হিজাব হুজুগ?
- Total Shares
মুসলিম দেশগুলিতে নারীরা সাধারণত হিজাব পরেন আর এবার সেই হিজাব পরেই একজন মুসলমান নারী সুন্দরী প্রতিযোগিতার আসরে র্যাম্প ওয়াক করবেন। ফ্যাশন দুনিয়ায় বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। আলোচনা-সমালোচনা অনেক কিছুই চলছে।
বিষয়টি নিঃসন্দেহে খুব ভালো কারণ একজন মুসলমান মহিলা হয়ে তিনি যে নিজের ধর্মের দিকটা বজায় রেখেও রক্ষণশীলতার ঘেরাটোপকে পেরিয়ে তিনি যে তাঁরই মতো আর পাঁচজন মহিলাকে পথ দেখিয়েছেন সেটা অবশ্যিই প্রশংসনীয়। বহু মহিলার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তাঁরা বেরিয়ে এসে কিছু করতে পারেন না। তাঁদের বিভিন্ন রকম বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
সারা ইফতিকার
তাই যখন ২০ বছর বয়সী এক মুসলমান আইনের ছাত্রী এই প্রথমবার হিজাব পরে মিস ইংল্যান্ড সুন্দরী প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্যায়ে র্যাম্পে হাঁটবেন তখন তাঁকে তো সাধুবাদ দিতেই হয়। সারা ইফতিকারের হাত ধরে বহু মহিলার মনের ইচ্ছে এবার হয়তো ডানা মেলে বাস্তবের আকাশে উড়তে পারবে।
তবে একজন পোশাক ডিজাইনার হিসেবে আমার মনে হয় যে যখন কোনও মডেল আমার পোশাক পরে র্যাম্পে হাঁটছে তখন আমি তাঁকে যে ভাবে সাজিয়ে তুলতে চাইব সেভাবে যদি হাত খুলে তাঁকে আমি সাজাতে না পারি তাহলে তো সেটা খুব মুশকিল। কারণ একজন পোশাক ডিজাইনার যখন কোনও পোশাক তৈরি করেন তখন তাঁর মাথায় কয়েকটা ছবি থাকে। তাই সেটা যদি করা না যায় তাহলে ডিজাইনারদের পক্ষে তা সমস্যা হয়ে দেখা দেয়।
হিজাব সুন্দরী
একটি ফ্যাশন শোর ব্যাপারটাই হল যে একজন মডেল নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে একজন ডিজাইনারের হাতে তুলে দিচ্ছেন অর্থাৎ সেই ডিজাইনার তাঁকে ঠিক যে ভাবে সাজিয়ে তুলে চাইবেন তিনি সেটা কোনও রকম শর্ত না মেনেই করতে পারবেন। তখন যদি কোনও মডেল ডিজাইনারের উপর কোনও রকম শর্ত আরোপ করেন তাহলে তা হবে চূড়ান্ত অপেশাদার মনোভাবের পরিচয়। ঠিক যেমনভাবে একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রী একটি চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে তাঁর পরিচালকের হাতে তুলে দেন ঠিক তেমনই।
এসব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় একটি 'সুইমসুট' রাউন্ড থাকে। এই সুইমসুট রাউন্ডে মুসলমান প্রতিযোগীরা অনেক সময় অংশগ্রহণ করেন না কিংবা তাঁরা সুইমসুট না পরে কখনও কাফতান পড়েন কিংবা কোনও লম্বা ধরণের পোশাক পড়েন। আমরা যাঁরা এই ফ্যাশন দুনিয়ার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত রয়েছি তাঁরা সবাই একটা বিষয় অবগত যে এই ধরণের প্রতিযোগিতায় সুইমসুট রাউন্ডে আসলে প্রতিযোগীর শারীরিক সৌন্দর্য বিচার করা হয়। তাই কোনও প্রতিযোগী যদি এই রাউন্ডে অংশগ্রহণ না করেন কিংবা তিনি যদি সর্বাঙ্গ আবৃত কোনও পোশাক পড়েন তাহলে প্রতিযোগিতার কী মানে থাকে?
বুরকিনি পড়ে এক মডেল
নিয়ম সবার ক্ষেত্রেই সমান হওয়া উচিত। নাহলে আর প্রতিযোগিতার কী মানে? তাহলে তো ভবিষতে কোনও বাংলা মহিলাও সুইমসুট রাউন্ডে শাড়ি পড়ে হাঁটবার ইচ্ছে প্রকাশ করবেন।
আমার মনে হয় বিষয়টি খুব পরস্পর বিরোধীও বটে। কারণ একদিকে তিনি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছেন আবার অন্যদিকে তিনি কাফতান বা সর্বাঙ্গ ঢাকা লম্বা পোশাক পড়ছেন, কিংবা সুইমস্যুট রাউন্ডে বুরকিনি পড়ে হাঁটব।
আমার মনে হয় ব্যাপারটা বেশ হাস্যকর, কারণ সুন্দর্য্য প্র্রতিযোগিতায়ে অংশগ্রহণ করলে সেই প্রতিযোগিতার নিয়মকাননও মানতে হবে নাহলে ব্যাপারটা কিছুটা ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো মনে হবে।